জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি-জাপানে সর্বনিম্ন বেতন
জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত তা সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন। আপনার এই অজানাকে জানানোর জন্য আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি আমার এই পোস্টটি নিয়ে।
আপনারা শুধুমাত্র এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সময় নিয়ে ভালোভাবে পড়লেই আপনার মুখে আশাকরি হাসি ফুটবে। তবে আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে প্রথমেই আপনাকে কিছুটা কষ্ট করতে হবে।
এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
- জাপানে যাওয়ার কারণ
- জাপানে যাওয়ার কয়েকটি উপায়
- SSW ভিসা পদ্ধতিতে জাপানে যাওয়া
- জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
- জাপানি ভিসার দাম সম্পর্কে আইডিয়া
- জাপানি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পদ্ধতি
- জাপানে কনস্ট্রাকশন কাজের চাহিদার ধরন
- ইলেকট্রিশিয়ান কাজের জাপানি চাহিদা
- জাপানে কাজের চাহিদায় নার্সিং
- ফুড প্যাকেজিং কাজের চাহিদার জন্য জাপানে
- জাপানের ফ্যাক্টরি কাজের চাহিদা
- কৃষি কাজ করার জাপানে চাহিদা
- জাপানে সর্বনিম্ন বেতন সম্পর্কে জানুন
- জাপানে সবচেয়ে বিশি বেতনের কয়েকটি কাজ
- জাপানে কাজের চাহিদা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
জাপানে যাওয়ার কারণ
জাপানে যাওয়ার কারণ-এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো উন্নত দেশ। সেখানে ছোট বড় অনেক ব্র্যান্ড কোম্পানি আছে যেখানে বিদেশি কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর জাপানে হাজার হাজার লাখ লাখ বিদেশী উচ্চ বেতনের আশায় বিভিন্ন কাজের ভিসা নিয়ে জাপানে যায়, কারণ সেখানে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরের কর্মীর চাহিদা প্রচুর। সাধারণত তিনটি কারণের জন্য সবাই জাপানে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন।
প্রথমতঃ জাপানের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি।
সেখানে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনকে ঘিরে কাজ করার
প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গাড়ি
শিল্প এবং রোবোটিক্সের মতো সেক্টরের জাপান তার নেতৃত্বস্থান ধরে
রেখেছে, যা কর্মীদের জন্য উন্নত কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি
করে।
দ্বিতীয়তঃ জাপানের কাজের পরিবেশ অত্যান্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং
পেশাদারিত্বের। সেখানে কর্মক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা, দলগত কাজের প্রতি গুরুত্ব
এবং কোম্পানির প্রতি অনুগত্যকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়, যা কর্মীদের
কর্মজীবনের সাফল্য এবং ব্যক্তিগত জীবন উন্নতির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয়তঃ জাপানের উন্নত জীবনমান, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং সুরক্ষিত
সামাজিক পরিবেশ কর্মজীবীদের একটি সুস্থ এবং আরামদায়ক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা
দেয়।
জাপানে যাওয়ার কয়েকটি উপায়
জাপানে যাওয়ার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জাপানে যাওয়ার আগেই আপনাকে ভালভাবে জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে জাপান যাওয়া কিছুটা কঠিন হলেও জাপান বাংলাদেশের একটি ভালো বন্ধু রাষ্ট্র হওয়ার কারণে জাপান সরকার কয় ধরনের ভিসা বাংলাদেশকে প্রদান করেছেন, যা এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণত ৪টি ক্যাটাগরির ভিসা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ৪টি উপায়ে
আপনাকে জাপানে যেতে হবে। তবে প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট
দক্ষতা এবং ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে জাপানের ভিসা পাওয়ার জন্য
প্রাথমিকভাবে আপনাকে ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
জাপানি ভাষা জানা থাকলে ভিসা পাওয়া যেমন সহজ হয় তেমনি জাপানে যাওয়ার পরে আপনি খুব সহজেই সেখানকার লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন, যা আপনার কোম্পানিতে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। আপনি ইচ্ছা করলেই এসব ভিসার মধ্যে যে কোন একটি ভিসাতে জাপানে যেতে পারেন।
SSW ভিসা পদ্ধতিতে জাপানে যাওয়া
SSW ভিসা পদ্ধতিতে জাপানে যাওয়া আপনার জন্য একটি সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম হতে পারে, কারণ এই ভিসার মাধ্যমে জাপানে গেলে একজন বিদেশী কর্মী জাপানিজ কর্মীর মতই বেতন ও দেশের সকল সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। সেজন্যই অধিকাংশ জাপান যেতে ইচ্ছুক প্রবাসীরা এই ভিসার মাধ্যমে জাপানে যেয়ে থাকেন।
তবে এই ভিসা পেতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, তার মধ্যে জাপানি ভাষায় দক্ষতা এবং স্কিল টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অন্যতম। এছাড়াও এই ভিসার জন্য আরো কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আসুন জেনে নেওয়া যাক-
- আপনাকে অবশ্যই এসএসসি বা সম্মানের কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- যে কোন ভালো জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে জাপানি ভাষা শিখতে হবে। আপনার কোর্স অনুযায়ী এবং আপনি যদি মনে করেন যে আপনার শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তাহলে জাপানি ভাষার উপর একটি পরীক্ষা দিতে হবে। তবে জাপানি ভাষার শেখার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে লেভেল N4 বা JFT উত্তীর্ণ হলে চলবে তবে N5 হলে ভালো হয়।
- উত্তীর্ণ হওয়ার পরে আপনি জাপানে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে আপনাকে উল্লেখিত কাজের উপর স্কিল টেস্ট দিতে হবে এবং এই স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারলেই আপনি সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য জাপানের ভিসা পেয়ে যাবেন।
জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
জাপানে যাওয়ার আগে অবশ্যই জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি তা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। বর্তমান সময়ে জাপান বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। আপনার নিজের উপর আস্থা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আপনি সেখানে যেকোনো একটি অথবা দুইটি কাজের জন্য ভিসার আবেদন করতে পারেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক জাপানের যেসব কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি-
- কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
- প্লাম্বার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- মেকানিক্স
- কম্পিউটার অপারেটর
- নার্স
- অটোমোবাইল
- হোটেলের কাজ
- ক্লিনার
- ফুড প্যাকেজিং
- বিক্রয় কর্মী
- ডেলিভারি ম্যান
- বিভিন্ন ফ্যাক্টরির ওয়ার্কার
- কৃষি কাজ ইত্যাদি।
জাপানি ভিসার দাম সম্পর্কে আইডিয়া
জাপানি ভিসার দাম সম্পর্কে সম্পর্কে অবশ্যই আপনার আইডিয়া থাকতে হবে। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে জাপানের ভিসার আবেদনের জন্য অতিরিক্ত কোন ফি প্রদান করতে হয় না কিন্তু আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে চান তাহলে বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। সেজন্য নিজেরাই সরাসরি যোগাযোগ করে জাপানি ভিসা প্রসেসিং-এর কাজ করাই ভালো।
আর যদি আপনি এজেন্সির মাধ্যমেই ভিসা প্রসেসিং করতে চান তাহলে অবশ্যই এজেন্সি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন বিশেষ করে সরকারিভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা যাচাই করে নিবেন। তবে এজেন্সি ভেদে টাকার পরিমান কম বেশি হতে পারে। আসন জেনে নেওয়া যাক জাপানি ভিসার জন্য আনুমানিক কত টাকা প্রয়োজন হবে-
ভিসার ধরণ | আনুমানিক টাকা |
---|---|
জাপানের TITP ভিসা | ৩,০০,০০০/- থেকে ৪,০০,০০০/- |
জাপানের SSW ভিসা | ৫,০০,০০০/- থেকে ৬,০০,০০০/- |
জাপানের ইন্টারন্যাশনাল জব ভিসা | ১২,০০,০০০/- থেকে ১৫,০০,০০০/- |
জাপানের স্টুডেন্ট ভিসা | ১০,০০,০০০/- থেকে ১২,০০,০০০/- |
জাপানি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পদ্ধতি
জাপানি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পদ্ধতিটি আপনার জন্য অন্যতম হতে পারে। উচ্চ বেতন এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ জাপানে বসবাস করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। এই ভিসার মধ্যে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনি যদি কারিগরি দক্ষতা ভিসায় যেতে চান তাহলে নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ইন্টারন্যাশনাল জব ভিসা এবং সেই বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে ভিসা পেতে পারেন।
এছাড়াও আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে স্টুডেন্ট ভিসায় জাপানে গিয়ে
পড়াশোনা শেষে কোন একটি নির্দিষ্ট কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করে, সেখানে ওয়ার্ক
পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটি মূলত ইন্টারন্যাশনাল জব ভিসা
হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে এক্ষেত্রেও এই ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই
জাপানি ভাষায় দক্ষ হতে হবে এবং সাথে সাথে নির্দিষ্ট কাজেও দক্ষ হতে হবে।
জাপানে কনস্ট্রাকশন কাজের চাহিদার ধরন
জাপানে কনস্ট্রাকশন কাজের চাহিদাও অনেক বেশি। জাপান যেহেতু একটি উন্নত দেশ সেহেতু সেখানে কনস্ট্রাকশন কাজের পরিমাণও অনেক বেশি, ফলে সেই কাজের শ্রমিকের চাহিদা অনেক বেশি। জাপানের বার্ধক্য জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যা কমার কারণে দেশটি বিদেশি শ্রমিকদের উপর দেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য সাধারণত কাঠমিস্ত্রি, রড বাইন্ডার, ওয়েল্ডার,
প্লাম্বার ইত্যাদি কাজে দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর চাহিদা অনেক বেশি। তাই আপনি যদি এই
কাজের জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ
অথবা স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (SSW) ভিসার মাধ্যমে জাপানে যেতে
পারবেন।
যেহেতু জাপানে এসব কাজের জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীর অভাব রয়েছে
সেহেতু জাপানে এই কাজের বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আনুমানিক
হিসেবে বলা যায় যে, একজন কনস্ট্রাকশন কর্মীস সাধারণত ২ থেকে ৩ লক্ষ
টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করতে পারবে। এসব কাজের জন্য জাপানের বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন
কোম্পানি সাধারণত বিদেশী কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
ইলেকট্রিশিয়ান কাজের জাপানি চাহিদা
ইলেকট্রিশিয়ান কাজের জাপানি চাহিদা অন্যান্য চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। জাপানে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (SSW) ভিসার মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমেও এই ধরনের কাজে আপনি জাপানে যেতে পারবেন।
জাপানে সাধারণত কনস্ট্রাকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং টেকনোলজি সেক্টরে ইলেকট্রিশিয়ানদের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা পূরণ করার ক্ষেত্রে বিদেশি দক্ষ ইলেকট্রনিশিয়ানদের চাহিদা অনেক বেশি। এই কাজে যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমন কাজটি সঠিক ও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। এই কাজের জন্য আপনি সাধারণত প্রতিমাসে ৩ থেকে ৩.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।
সেজন্য আপনাকে জাপানি ভাষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা এবং ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন
কাজ এবং যন্ত্রপাতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি
যদি দেশেই এসব কাজ করে থাকেন তাহলে আপনার এসব কাজের ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার
সাথে সাথে দক্ষতাও থাকায় আপনার এই কাজের জন্য জাপানে ভিসা পেতে অনেক সুবিধা
পাবেন।
জাপানে কাজের চাহিদায় নার্সিং
জাপানে কাজের চাহিদায় নার্সিং আপনার জন্য একটি মাধ্যম হতে পারে। জাপানে বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন ও সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিবছর অনেক নার্স এবং গভর্নেন্স-এর প্রয়োজন হয়, সেজন্য এখানে নার্সিং কাজের চাহিদা অনেক বেশি। আপনার যদি নার্সিং কাজের দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে আপনি সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জাপানে যেতে পারেন।
জাপানের স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক উন্নত এবং সে দেশের সরকার এই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ফলে দিন দিন উচ্চ বেতনে নার্সিং কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই কাজে বেতন-বোনাস অনেক বেশি হয় সব মিলিয়ে আনুমানিক ৩ থেকে ৩.৫ লক্ষ টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব। সেজন্য আপনাকে নার্সিং দক্ষতার সাথে সাথে জাপানি ভাষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে।
ফুড প্যাকেজিং কাজের চাহিদার জন্য জাপানে
ফুড প্যাকেজিং কাজের চাহিদার জন্য জাপানে আপনি যেতে পারবেন। আপনি জানেন জাপান একটি শিল্পোন্নত দেশ সেখানে জনসংখ্যা যেমন বেশি তেমন খাদ্য উৎপাদন বেশি হয় এবং সেই উৎপাদিত খাবার তারা সরাসরি খুব কমই বিক্রয় করে। সেখানে খাদ্যদ্রব্য প্রসেসিং করে প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে বিক্রি করা হয়।
জাপানে যেসব ধরনের প্রকৃত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে সুশি,
বেন্টো বক্স, প্যাকেটজাত নুডুলস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে জাপান,
চীন, কোরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে নুডুলস জাতীয় খাবারের ব্যাপক চাহিদা
রয়েছে। ফলে এই ধরনের পণ্য তৈরি ও প্যাকেজিং করার জন্য প্রচুর পরিমাণে
শ্রমিক ও দক্ষ কারিগরের প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি নিজেকে দক্ষ এবং পরিশ্রমী মনে করেন তাহলে এসব ফুড প্যাকেজিং কোম্পানিতে কাজ করার জন্য জাপানে যেতে পারেন। সেদেশের এসব কাজের জন্য বিদেশী শ্রমিকদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং বেতন সাধারণত ২ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই দেশের খাদ্যদ্রব্য যেহেতু বিদেশের রপ্তানি করা হয় সেহেতু ফুট প্যাকেজিং কাজের জন্য প্রচুর কর্মীর চাহিদা রয়েছে।
জাপানের ফ্যাক্টরি কাজের চাহিদা
জাপানের ফ্যাক্টরি কাজের চাহিদা অনেক বেশি। আপনারা জানেন জাপান একটি উন্নত দেশ। বলে এখানে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরি রয়েছে, যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয়। এসব পণ্যের জাপানে ও অন্যান্য দেশেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যেহেতু প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে জাপান অনেক এগিয়ে আছে সেহেতু এদেশের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান খুবই ভালো।
এই দেশের শিল্পের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে বিভিন্ন
সেক্টরে ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের প্রয়োজন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণত গাড়ি
উৎপাদন, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং-এর মতো
শিল্পগুলোতে ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এসব কাজের জন্য তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না তবে জাপানি ভাষার
দক্ষতা এবং শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া একান্ত জরুরি। কারণ বেশিরভাগ ফ্যাক্টরি কাজ
শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসব কাজের জন্য জাপানে সাধারণত ২ লক্ষ
টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়। তবে গাড়ি উৎপাদন ও ইলেকট্রনিক্স কাজের ক্ষেত্রে
বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
কৃষি কাজ করার জাপানে চাহিদা
কৃষি কাজ করার জাপানে চাহিদা তুলনামূলক অনেক বেশি। বরাবরের মতোই জাপান সরকার দেশীয় খাদ্য উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেজন্য জাপানি কৃষি কাজে চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি, বিশেষ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কারণে দেশটির কৃষি খাতে জনশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আপনি যদি কৃষিকাজে সক্ষম এবং দক্ষতা সম্পন্ন হয়ে থাকে তাহলে আপনি এই কাজের জন্য জাপানে যেতে পারেন। জাপানে সাধারণত ফল ও সবজি চাষ, ধান উৎপাদন, ফুল চাষ এবং পশুপালন খাতে কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। সেখানে কৃষিকাজের বেতন প্রতি ঘন্টায় হিসেবে হয়ে থাকে। এই কাজের জন্য আপনি জাপানে প্রতি ঘন্টায় ৯০০ থেকে ১২০০ ইয়েন পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন সম্পর্কে জানুন
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন সম্পর্কে জানুন আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে। বিশ্বের সূর্য উদয়ের দেশ হিসেবে জাপান পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন সেক্টরে যেমন প্রযুক্তি, কৃষি, কনস্ট্রাকশন, হোটেল, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতেমকাজের সুযোগ বেড়েই চলেছে। আপনারা জানেন জাপানের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী এবং দেশের শিল্প (অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং রোবোটিক্স) ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্বস্থান ধরে রেখেছে।
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত হবে তা নির্ভর করবে আপনি জাপানে কোন শহরে কাজ করবেন এবং আপনার কাজের ক্যাটাগরির উপর, কারণ জাপানে বিভিন্ন শহর এবং তাদের ধরণের বেতন পরিবর্তিত হয়। জাপানের শ্রম আইন হিসেবে আপনি যদি প্রতিমাসে ১৬৮ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন। এর বেশি সময় কাজ করলে সেটি ওভারটাইম হিসেবে গণনা করা হবে।
প্রতি ঘন্টায় সেখানকার সর্বনিম্ন মজুরি ১১০০ ইয়েন পর্যন্ত দেওয়া হয়। প্রতি মাসের সর্বনিম্ন কাজের সময় হিসেব করলে মাসে আনুমানিক ১,৮৪,৮০০ ইয়েন হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১,৪০,০০০ টাকা। এখানে উল্লেখ্য যে, আপনার যদি দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে প্রতি ঘন্টার মজুরি ২০০০ ইয়েন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জাপানে সবচেয়ে বিশি বেতনের কয়েকটি কাজ
জাপানে সবচেয়ে বিশি বেতনের কয়েকটি কাজ সম্পর্কে আসুন জেনে নেওয়া যাক। বিভিন্ন কাজের কর্মীদের পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে বেশি বেতন দেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা ৪ টি উল্লেখযোগ্য বেশি বেতনের কাজ সম্পর্কে জানবো।
স্কাফোল্ডিং বা তবিঃ স্কাফোল্ডিং-কে জাপানি ভাষায় তবি বলা হয়ে থাকে, যা একটি অস্থায়ী কাঠামো এবং নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত ভবন বা উচ্চতর কাঠামোর বাইরে নির্মাণ করা হয়, যেন শ্রমিকরা সহজেই নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে কাজ করতে পারে। ইহা সাধারণত লোহা, ইস্পাত বা বাঁশের মত শক্ত উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়।
বহুতল ভবনের বাহিরের কাঠামোতে লোহা ও ইস্পাত ব্যবহার করা হয় এবং
পাঁচতল ভবনের কাঠামোতে বাশঁ ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত মূল কাঠামোর
বাহিরে স্থাপন করা হয় যাতে নির্মাণ শ্রমিকরা নিরাপদে তাদের কাজ করতে পারে। এই
কাজের জন্য প্রতি মাসে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়া হয়ে থাকে।
ফ্রেমওয়ার্ক বা কাতাওয়াকুঃ কন্সট্রাকশন কাজের বিভিন্ন ধরনের ঢালাইয়ের আগে তার একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনের ফ্রেম তৈরি করার কাজকেই ফ্রেমওয়ার্ক বলা হয়। এই কাজটি কিছুটা বিপদজনক এবং কঠিন সেজন্য এই কাজের বেতন অনেক বেশি। এই কাজের জন্য প্রতি মাসে আপনি আনুমানিক ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা মত পেতে পারেন।
প্রোগ্রামিংঃ জাপানে প্রোগ্রামিং কাজের জন্য বেতন সবচেয়ে বেশি
প্রদান করে থাকে। এজন্য আপনাকে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা থাকার পাশাপাশি জাপানি
ভাষার উপর পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে। এই কাজের জন্য আপনি আনুমানিক ৫ থেকে ৮
লক্ষ টাকা পেতে পারেন। এদেশে যেহেতু প্রোগ্রামারের সংখ্যা অনেক
কম সেহেতু বাহিরের দেশের দক্ষতা সম্পন্ন প্রোগ্রামারের চাহিদা অনেক
বেশি।
মেকানিক্যালঃ জাপান যেহেতু উন্নত দেশ সেহেতু এখানে এমন অনেক মেকানিক্যাল কোম্পানি আছে যারা বিভিন্ন ধরনের মেশিন ও যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে। গুণগত মান ভালো থাকার কারণে অন্যান্য দেশে এসব মেশিন ও যন্ত্রপাতির চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন মেকানিক্যাল কোম্পানিতে প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মীর অভাব থাকায় বিদেশী কর্মীর চাহিদা এখানে অনেক বেশি। এসব কোম্পানিতে আপনি খুব সহজেই ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা বেতনে চাকরি করতে পারবেন।
জাপানে কাজের চাহিদা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
জাপানে কাজের চাহিদা সম্পর্কে আমি একটাই কথা বলতে চাই, আপনি যেভাবেই জাপান যেতে চান না কেন প্রথমে আপনাকে আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতা পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। সেই দক্ষতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী আপনাকে সেই ক্যাটাগরিতে কোন এজেন্সি ভালো কাজ করে তা জেনে সে এজেন্সির মাধ্যমে কত টাকা খরচ হয় তা জেনে আপনার ইচ্ছা পূরণের দিকে অগ্রসর হতে পারেন।
এই পোস্টের মাধ্যমে আমি চেষ্টা করেছি জাপান যাওয়ার বিভিন্ন উপায় এবং জাপানের
বিভিন্ন ভিসা কিভাবে পাওয়া যাবে এবং তার আনুমানিক খরচ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ
ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের জাপান যাওয়ার যে
স্বপ্ন, সে স্বপ্ন পূরণে অনেকটা ভূমিকা পালন করবে।
একটি জিনিস সবসময় মাথায় রাখবেন, জাপান যেহেতু উন্নত দেশ সেহেতু তারা কাজ এবং দক্ষতাকে বেশি মূল্যায়ন করে থাকে। সেজন্যই আপনাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জন এবং কাজ করার প্রবল মনোনীতিকতা থাকতে হবে। আজ এ পর্যন্তই ভবিষ্যতে এই পোষ্টের কোন আপডেট অথবা নতুন কোন খোঁজ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো।
সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন, যাচাই-বাছাই করে অগ্রসর হবেন। সবাইকে
ধন্যবাদ..........
অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url