কম খরচে ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি
কম খরচে ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি কথাটি এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব। আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে ইচ্ছা করলেই অতি কম খরচে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে ঘুরে এসে ভ্রমনের যে পিপাসা তা মেটাতে পারেন।
সাজেক ভ্যালিকে দেখতে স্বপ্নের মত মনে হয়, সারি সারি পাহাড়ের মাঝখানে সাদা তুলার মতো মেঘমালা নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উপরে এটি অবস্থিত। আজকের এই পোস্টে আপনারা সাজেক ভ্যালির ভ্রমণের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ কম খরচে ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি
- সাজেক ভ্যালির অবস্থান
- সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
- সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
- সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থানসমূহ
- ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
- চট্টগ্রাম থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
- রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
- খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
- কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
- খাগড়াছড়ির রিসোর্ট ও হোটেল সমূহ
- সাজেক ভ্যালির রিসোর্ট ও হোটেল সমূহ
- সাজেক ভ্যালিতে খাওয়ার ব্যবস্থা
- সাজেক ভ্যালিতে যেসব বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে
- সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
সাজেক ভ্যালির অবস্থান
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার উত্তরের মিজোরাম সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হলো এটি যার আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল। এর উত্তরে আছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে আছে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে আছে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং পশ্চিমে আছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ির দীঘিমালা থেকে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, দীঘিমালা থেকে এর দূরত্ব ৪৯ কিলোমিটার এবং বাঘাইহাট থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি সদর থেকে দীঘিমালার আর্মি ক্যাম্প পেরিয়ে সাজেক ভ্যালিতে যেতে হবে। তারপর সেখানে কাপালং নামে একটি ব্রিজ আছে, যা মূলত কাসালং নদীর উপর নির্মিত। এই নদীটি ২টি নদী মিলে তৈরি হয়েছে। কাসালং ব্রিজের পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার পরবে। এই বাজারটি অতিক্রম করার পরেই দেখতে পাবেন সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া, যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১৭২০ ফুট।
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য কথায় বলে বোঝানোর থেকে আপনি যদি সেখানে যেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অথবা রাত্রি যাপন করে তাহলে উপভোগ করতে পারবেন। কারণ সন্ধ্যার পরেই সাজেকের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, যা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। সন্ধ্যার সময় দিনের বেলা জমে থাকা মেঘগুলো আস্তে আস্তে সরে যায় এবং মেঘমুক্ত নীল আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে।
তারপর একটি দুটি করে তারা মিটমিট করে জ্বলে উঠতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো
কিছুক্ষণের মধ্যেই এই তারাগুলো একটি দুটি থেকে সহস্রাধিক তারায় রূপান্তরিত হয়।
এছাড়াও এখানকার ঘরগুলো দেখতে বেশ চমৎকার এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। ছোট ছোট মাচার
উপর তৈরি করা ঘরগুলো দেখতে মনে হয় একেকটি পিঁপড়ার বাসার মতো।
এছাড়াও এখানে যেসব সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন তার মধ্যে রয়েছে এখানকার পাহাড়, পাহাড়ি ঝর্ণা, ধূসর মেঘমেলা ইত্যাদি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। বাসা বাড়ির দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনের সকল ক্লান্তি, দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদি ভুলে এখানে আসলে আপনি এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করবেন, যা আপনার ভবিষ্যৎ দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রামে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এখানে সবচেয়ে উঁচুতে দুইটি হ্যালি প্যাড বা হেলিকপ্টার নামার ও উঠার স্থান
রয়েছে। আপনি যদি ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চান তাহলে যেকোনো একটিতে খুব ভোরে ওঠে
চলে যাবেন। এখানে সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের সোনালী আভা সাদা মেঘের উপর যখন পড়ে
তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের সূচনা হয় যা বলে বোঝানো সম্ভব না। শুধু এতটুকুই মনে হয়,
যেন স্বর্গে চলে এসেছি।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সারা বছরের মধ্যে আপনি চাইলে যেকোনো সময়ই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে পারেন। তবে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সাজেক ভ্যালিতে না ভ্রমণ করাই শ্রেয়, কারণ বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি রাস্তা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বিশেষ করে পাহাড়ি ধস। এই সময় বিপদ আসলে তা অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এছাড়াও বর্ষার মৌসুমে আপনি ইচ্ছামত বা পরিকল্পনামাফিক কোন কাজ করতে পারবেন না, কারণ বৃষ্টি এখানে আপনার পরিকল্পনায় অন্তরায় হতে পারে। এজন্য বর্ষার পরে মৌসুম শীতের শুরুর দিকে সাজেক ভ্রমণ একটি আদর্শ সময়। এই সময় আপনি সেখানে গেলে সেখানে প্রচুর মেঘ দেখতে পাবেন, যা আপনার পরিকল্পনাকে সফলতার মুখ দেখাবে।
এখানে বলে রাখা ভালো বছরের প্রত্যেকটি মৌসুমই সাজেক ভ্যালি আলাদা আলাদা রূপে সজ্জিত হয়। সেজন্যই ভ্রমণপিপাসুরা সারা বছর সেখানে ছুটে যায়। তবে মেয়ে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে, যা সাজেককে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে। সেজন্যই আপনি পরিকল্পনা করলে এই মাসগুলোর মধ্যেই সময় নির্ধারণ করবেন।
সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থানসমূহ
সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান অনেকগুলো রয়েছে তবে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে থেকে মেঘমালার স্বর্গকে নিজ চক্ষু দ্বারা উপভোগ করা, যা আপনার চোখের এবং মনের প্রশান্তি নিয়ে আসবে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক সাজেক ভ্যালিতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থান-
- কমলক ঝর্ণাঃ এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মতো পথ পাড়ি দিতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলেই এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করে আসতে পারেন, কারণ এটি আপনার ভ্রমনকে আরো রোমাঞ্চিত ও আনন্দময় করে তুলবে।
- কংলাক পাড়াঃ সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম হচ্ছে এই কংলাক পাড়া। এই গ্রামটি সাজেক ভ্যালির সবথেকে উঁচুতে অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১৮০০ ফুট উপরে। এটি সাজেক ভ্যালির উচ্চতম স্থান। এখানে আদিবাসীদের মধ্যে লুসাই সম্প্রদায় নামে এক গোষ্ঠীর লোকেরা বসবাস করে।
- কংলাক পাহাড়ঃ এই পাহাড়টি হলো সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া যেখান থেকে আপনি সাজেক ভ্যালির সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
- দীঘিনালা বনবিহারঃ সাজেক ভ্যালিতে যাওয়া এবং আসার রাস্তায় আপনারা ইচ্ছে করলে এই বনবিহারটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এই বনবিহারে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং গভীরে গেলে প্রাণীও দেখতে পাবেন। তবে ভ্রমণের জন্য গভীরে প্রবেশ না করায় উত্তম।
- দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজঃ এই ঝুলন্ত ব্রিজটিও আপনি যাওয়া এবং আসার পথে ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন। এটি সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছানোর কিছুটা আগেই অবস্থিত।
- হাজাছড়া ঝর্ণাঃ এই ঝর্ণাটি সাজেক ভ্যালির আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ। এর সুমিষ্টি পানি এবং চারপাশের সবুজ দৃশ্য আপনাকে অবশ্যই মনোমুগ্ধকর করবে। এটি সাজেক ভ্যালি দেওয়া এবং আসার পথেই দেখতে পাবেন।
- সাজেক বাজারঃ এটি সাজেক ভ্যালির স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভারতের তৈরি সামগ্রী ও খাবারের জন্য বিখ্যাত। আপনি ইচ্ছা করলেই সেখানে যেয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারেন এবং পরিবারের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে পারেন।
ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
আপনারা আগে জেনেছেন সাজেক ভ্যালির অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে সাজেক ভ্যালি যাতায়াত অনেক সহজ। সেজন্য প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ঢাকা থেকে সাজেকখালিতে যাতায়াত করার বেশ কয়েকটি গাড়ি আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গাড়ির উত্তর তথ্যাদি নিম্নে দেওয়া হলো-
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বাসের সময়সূচীঃ
বাসের নাম | ছাড়ার সময় | পৌঁছার সময় |
---|---|---|
হানিফ পরিবহন | সকাল ৬ঃ৩০ টা | রাত্রি ১১ঃ০০ টা |
শ্যমলী পরিবহন | সকাল ৫ঃ০০ টা | রাত্রি ১০ঃ০০ টা |
ঈগল পরিবহন | সকাল ১১ঃ০০ টা | সকাল ৬ঃ০০ টা |
সেন্টমার্টিন পরিবহন | দুপুর ১২ঃ৩০ টা | সকাল ৬ঃ৩০ টা |
গ্রীন লাইন পরিবহন | সকাল ৬ঃ০০ টা | রাত্রি ১১ঃ১৫ টা |
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বাসের ভাড়া ও কাউন্টার নাম্বারঃ
বাসের নাম | নন এসি সিট ভাড়া | এসি সিট ভাড়া | মোবইল নাম্বার |
---|---|---|---|
হানিফ পরিবহন | ৫২০ টাকা | ১২০০ টাকা | ০১৯৭১-৬৯১৩৪১ |
শ্যমলী পরিবহন | ৫২০ টাকা | ১২০০ টাকা | ০১৮৬৫-০৬৮৯২২ |
ঈগল পরিবহন | ৫২০ টাকা | ৮৫০ টাকা | ০১৭৭৯-৪৯২৯২৭ |
সেন্টমার্টিন পরিবহন | ৫২০ টাকা | ১২০০ টাকা | ০১৯৭১-৬৯১৩৪১ |
গ্রীন লাইন পরিবহন | ৫২০ টাকা | ১২০০ টাকা | ০১৭৩০-০৬০০০৬ |
বিঃদ্রঃ - এখানে উল্লেখ্য যে, এসি এবং নন-এসি বাসের ভাড়া সর্বশেষ আপডেট (২০২৪ সাল) অনুযায়ী তুলে ধরা হয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে এই ভাড়া বাস কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে আপনাকে কয়েকটি উপায় অনুসরণ করতে হবে। এখানে আমি আপনাদেরকে একটি লিঙ্ক দিয়েছি, যেখানে ক্লিক করলে আপনি খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন। এজন্য আপনাকে চট্টগ্রামের কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাসে টিকিট কাটতে হবে। এই বাস সারা দিনের ৪ টি চলাচল করে, যার ভাড়া ২০০ টাকা/জন। এছাড়াও অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘন্টা পর পর শান্তি পরিবহন নামে একটি বাস চলাচল করে, যার ভাড়া ১৯০ টাকা/জন।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে আপনার সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা। এরপর খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার উপায় নিয়ম অনুসরণ করে যেতে পারে। সেখানে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা। সুতরাং চট্টগ্রাম থেকে সাজেক যেতে আপনার আনুমানিক ৭-৮ ঘন্টা সময় লাগবে।
রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
রাঙ্গামাটি থেকে নৌ পথ এবং সড়ক পথ উভয়ভাবেই আপনি বাঘাইছড়ি যেতে পারবেন। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ঃ৩০ থেকে ১০ঃ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। ছাড়ার পর যেতে সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা এবং জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা। সড়ক পথে যেতে চাইলে রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭:৩০ থেকে ৮ঃ৩০ এর মধ্যে বাস ছাড়ে, যার ভাড়া ২০০ টাকা/জন এবং সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা।
অনেক সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। বাঘাইছড়ি থেকে চাঁন্দের গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সাবেক ভ্যালিতে পৌঁছাতে পারবেন। সে জন্য আপনাকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছ থেকে জিপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যাওয়া আসা সহ দুই দিনের জন্য ভাড়া নিবে ৯০০০ থেকে ১১০০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণত একটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন যেতে পারবেন। তবে গাড়িতে লোক কম থাকলে অন্য কোন গ্রুপের সাথে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে।
আপনার জন্য এটি যদি সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি ভাড়া করে সাজেক দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে রিজার্ভের জন্য ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে আমার মতে
পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তায় সিএনজির তার যে ভ্রমণ না করাই
ভালো। নিম্নে জীপ সমিতি ও পার্বত্য যানবাহন মালিকক্যনাথ সমিতি কর্তৃক
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার ভাড়া তালিকা দেওয়া হলো-
যাত্রার বিবরণ | পিক আপ গাড়ি নিয়ে | চাঁন্দের গড়ি নিয়ে |
---|---|---|
সাজেক যাওয়া ও আসা | ৮,০০০ | ৬,০০০ |
সাজেক ১ রাত্রি যাপন, যাওয়া ও আসা | ১০,০০০ | ৭,৭০০ |
সাজেক ১ রাত্রি যাপন, আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ, যাওয়া ও আসা | ১২,০০০ | ৯,০০০ |
সাজেক ২ রাত্রি যাপন, যাওয়া ও আসা | ১৩,০০০ | ৯,০০০ |
সাজেক ২ রাত্রি যাপন, আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ, যাওয়া ও আসা | ১৫,০০০ | ১১,৪০০ |
এছাড়াও আপনি যদি একা অথবা ৩ থেকে ৪ জন হয়ে থাকেন তাহলে শাপলা চত্বরে যেয়ে অন্য গ্রুপের সাথে অথবা জিপ সমিতির অফিসে জানালে তারা অন্য গ্রুপের সাথে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দিবে। আপনি ইচ্ছা করলে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায় (দূরত্ব ২০ কিঃমিঃ) বাসে করে (ভাড়া ৪৫ টাকা) অথবা মোটরসাইকেলে (ভাড়া ১০০ টাকা/জন) যেতে পারেন।
তবে আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আপনাকে দিঘীনালায় সকাল ৯ টার মধ্যে
পৌঁছাতে হবে। নিরাপত্তার কারণে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে দুইবার পাওয়া যায়।
সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে প্রথমবার এবং ২ঃ৩০ মিনিটে দ্বিতীয়বার। দ্বিতীয়বারের থেকে
প্রথমবার এসকোর্ট পাওয়াই আপনার জন্য ভালো হবে।
দীঘিনালা থেকে সাজেক যাওয়ার পথে আপনি বাঘাইহাট, মাচালং বাজার, রুইলুই পাড়া দর্শন করে যেতে পারেন। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা। এই যাত্রাপথে আপনি আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা এবং সারি সারি পাহাড় আর সবুজের মিলনমেলায় আপনার পথের ক্লান্তি সব দূর হয়ে যাবে।
কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
আপনাকে যদি কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। কক্সবাজারে শান্তি পরিবহন নামে একটি বাস আছে, যা কক্সবাজার-খাগড়াছড়ি রুটে চলাচল করে। কক্সবাজার থেকে রাত্রি ৯টা ও ১০টায় বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই বাসটি নন এসি এবং ভাড়া ৫৫০ টাকা/জন। তারপর সেখান থেকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজের জন্য যাওয়ার উপায় অনুসরণ করে সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন।
খাগড়াছড়ির রিসোর্ট ও হোটেল সমূহ
আপনি যদি সাজেক ভ্যালিতে যেতে চান তাহলে অবশ্যই খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। সেজন্য
আপনি ইচ্ছা করলে খাগড়াছড়িতে থাকতে পারেন। এখানে থাকার জন্য পর্যটন মোটেলসহ
বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য
হোটেলের নাম এবং যোগাযোগ নাম্বার-
- পর্যটন মোটেলঃ এই মোটেলটি খাগড়াছড়ি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলে দেখতে পাওয়া যাবে। এই মোটেলের কক্ষে ২ টি করে বিছানা রয়েছে। এই মোটেলের বিশেষত্ব হলো এর অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে। সম্পূর্ণ খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা থাকার কারণে রুমগুলো নন এসি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। এই মোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
- হোটেল ইকো ছড়ি ইনঃ খাগড়াপুর ক্যান্টনমেন্ট-এর পাশেই সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশে এটি অবস্থিত। এটি সাধারণত রিসোর্ট টাইপের হোটেল। এই হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬২৬২৫
- ০৩৭১-৩৭৪৩২২৫
- দীঘিনালা গেস্ট হাউসঃ এটির দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পার্শ্বে অবস্থিত। দিঘীনালায় যেসব আবাসিক হোটেল রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই গেস্ট হাউজের রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০১৮২৭-৪৬৮৩৭৭
- হোটেল শৈল সুবর্ণঃ এই হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬১৪৩৬
- ০১১৯০-৭৭৬৮১২
- হোটেল জেরিনঃ এই হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬১০৭১
- হোটেল লবিয়তঃ এই হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬১২২০
- ০১৫৫৬-৫৭৫৭৪৬
- ০১১৯৯-২৪৪৭৩০
- হোটেল শিল্পীঃ এই হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০৩৭১-৬১৭৯৫
সাজেক ভ্যালির রিসোর্ট ও হোটেল সমূহ
সাজেক ভ্যালি একটি পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় ভ্রমণকারীদের জন্য সেখানে অনেক রিসোর্ট ও হোটেল গড়ে উঠেছে। বেসরকারিভাবে প্রায় ১০০-এর বেশি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে আধুনিকমানের সুযোগ সুবিধা সম্মিলিত কটেজ এবং রুম। কিছু কিছু রিসোর্টে রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ, আধুনিক মানের টয়লেট সুবিধা, বিশাল বড় বড় ঝুলানো বারান্দা সহ আরো অনেক কিছু। এখন জেনে নেয়া যাক কয়েকটি আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের তথ্যাদি-
- সাজেক রিসোর্টঃ এই রিসোর্টটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে এসি এবং নন এসি দুই ধরনেরই রুম রয়েছে, আপনার পছন্দমত আপনি রুম নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মতো খরচ করতে হবে। এদের নিজস্ব খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অথবা প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এই রিসোর্টের রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮৫৯-০২৫৬৯৪
- ০১৮৪৭-০৭০৩৯৫
- ০১৭৬৯-৩০২৩৭০
- মেঘপুঞ্জি রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে মোট ৪টি কটেজ রয়েছে, যার প্রতিটি কটেজ একটি থেকে আরেকটি আলাদা। এর প্রতিটি কটেজে একটি করে কাপল বেড এবং ফ্লোরিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে ৪ জন থাকতে পারবেন। এই কটেজগুলো সুন্দর ইকো ডেকোরেশন এবং আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ। এখানকার তারাশা নামের কটেজটির ভাড়া ৪৫০০ টাকা এবং পূর্বাশা, রোদেলা ও মেঘলা কটেজগুলোর ভাড়া ৪০০০ টাকার মত। এই রিসোর্টের রুম বুকিং এর জন্য আপনার যোগাযোগ করুন-
- ০১৮১৫-৭৬১০৬৫
- ০১৯১১-৭২২০০৭
- রুন্ময় রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে মোট ৫টি রুম রয়েছে প্রতিটি রুমে ২ জন করে থাকতে পারবেন। নিচ তলায় মোট ৩টি রুম রয়েছে, রুমের ভাড়া ৪৪৫০ টাকা, অতিরিক্ত বেড নিতে চাইলে অতিরিক্ত ভাবে ৬০০ টাকা দিতে হবে। তারপরের তলাগুলোর রুমের ভাড়া ৪৯৫০ টাকা, এখানেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড যুক্ত করতে পারবেন। এই রিসোর্টের রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮৬২-০১১৮৫২
- মেঘ মাচাং রিসোর্টঃ যে কোন রিসোর্ট থেকে সাজেক ভ্যালির সেরা ভিউটা দেখার জন্য এই রিসোর্টটি অন্যতম। এখানে মোট ৫ টি কটেজ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু আছে বাঁশের এবং কিছু কাঠের তৈরি। একটি কটেজে সাধারণত ৪-৫ জন থাকা যাবে। কাঠের কটেজগুলোর ছুটির দিনে ভাড়া ৪৫০০ টাকা এবং অন্যান্য দিনে ৪০০০ টাকা। বাঁশের কলেজগুলোর ছুটির দিনে ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং অন্যান্য দিনে ৩৫০০ টাকা। এই রিসোর্ট এর কটেজের বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮২২-১৬৮৮৭৭
- জুমঘর ইকো রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে মোট ৬ টি কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে গোলাকার কটেজ ৪ টি এবং চারকোণা কটেজ ২ টি রয়েছে। গোলাকার কটেজগুলোতে ৪ জন করে এবং চারকোণা কটেজগুলোতে ৫ জন করে থাকতে পারবেন। এর প্রতিটি কটেজের ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা। এই রিসোর্টের কটেজের বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮৮৪-২০৮০৬০
- আদিবাসি ঘরঃ আপনি যদি খুব কম খরচে থাকতে চান তাহলে আপনার জন্য আদিবাসী ঘরের কোন বিকল্প নাই। কারণ এসব ঘরগুলোতে জনপ্রতি মাত্র ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় থাকা যায়। আপনার মাথায় রাখতে হবে যে, পরিবার অথবা কাপল হিসেবে যদি যান তাহলে এই ঘরগুলো আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। তবে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গেলে খরচ কমানোর জন্য এসব ঘরে থাকতে পারেন।
- রিসোর্ট রুংরাংঃ সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে ভাল রিসোর্ট হলো এটি। এই রিসোর্টের বারান্দা থেকে আপনি দিগন্তজোড়া পাহাড়ের সাড়ি ও মেঘের উড়োউড়ি দেখতে পাবেন। এটি সেনাবাহিনীর রিসোর্টের ঠিক উল্টাপার্শ্বে অবস্থিত। এই রিসোর্টেটি নান্দনিক ইন্টোরিয়র ডিজাইনের সাজানো এবং ওয়াশরুমগুলো সাজেক ভ্যালিরমধ্যে অন্যতম সেরা। এই রিসোর্টে মোট ৮টি রম রয়েছে তার মধ্যে ৪টি ডাবল এবং ৪টি কাপল রুম রয়েছে। ছুটির দিনে বেডরুমের ভাড়া ডাবল ৩৫০০ টাকা এবং কাপল ২৮০০ টাকা। অন্যান্য সকল দিনে বেডরুমের ভাড়া ডাবল ২৮০০ টাকা এবং কাপল ২০০০ টাকা। এই রিসোর্টের রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮৮৪-৭১০৯২৩
- ০১৮৬৯-৬৪৯৮১৭
- ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্টঃ এই রিসোর্টের প্রতিটি তলায় আছে প্রশস্ত বারান্দা। এই রিসোর্টে প্রিমিয়াম কাপল রুম ভাড়া ৪০০০ টাকা, কাপল ক্লাসিক রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং ডবল ক্লাসিক রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা। এই রিসোর্টের রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৮৮৫-৪২৪২৪২
- কম খরচের কিছু রিসোর্টঃ সাজেক ভ্যালিতে বিভিন্ন ধরনের পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে। সব ধরনের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এক রকম নাও থাকতে পারে। সে জন্যই এখন আমরা কয়েকটি ইকোনমিক রিসোর্ট সম্পর্কে জানব। সেগুলো হলো-
- লুসাই কটেজঃ চমৎকার ডেকোরেশন ও ভালো ল্যান্ডস্কেপিক ভিউয়ের জন্য এই কটেজে কাপল, ফ্যামিলি কিংবা গ্রুপের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। এসব রুমের ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। এই কটেজের রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন-
- ০১৬৩৪-১৯৮০০৫
- আলো রিসোর্টঃ কম খরচে মোটামুটি একটি ভালো রিসোর্ট। এই রিসোর্টে মোট রুম রয়েছে ৬ টি, এর মধ্যে ডাবল রুম ৪ টি। এসব রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। আপনি ইচ্ছে করলে বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০১৮৪১-০০০৬৪৫
- মেঘের ঘর রিসোর্টঃ অতি কম খরচে সাজেক ভ্যালিতে থাকার আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এই রিসোর্টে মোট ৮ টি রুম রয়েছে। রুমের সাইজ অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। আপনি ইচ্ছা করলে বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০১৮৪২-৬০৫৭৮৮
- হাফং তংঃ এই রিসোর্টটিও কম খরচের জন্য উপযুক্ত। এই রিসোর্টে ৬ টি রুম রয়েছে, যার ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপনি ইচ্ছা করলে বুকিং করতে পারেন-
- ০১৮৬৯-৬৪৯৮১৭
- পাহাড়িকা রিসোর্টঃ এটিও কম খরচের মধ্যে একটি ভালো রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ১২ টি রুম রয়েছে, যার ভাড়া১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপনি ইচ্ছা করলে বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-
- ০১৭২৪-৬৫৮৭৬৩
- ০১৮৭১-৭৭১৭৭৭
সাজেক ভ্যালিতে খাওয়ার ব্যবস্থা
সাজেক ভ্যালিতে খাওয়ার ব্যবস্থা অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের থেকে কিছুটা কম। তবে কয়েকটি ভালো মানের রেষ্টুরেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে মারুতি রেষ্টুরেন্ট, চিলেকোঠা রেষ্টুরেন্ট, চিম্বল রেষ্টুরেন্ট, মনটানা রেষ্টুরেন্ট, কাশবন রেষ্টুরেন্ট অন্যতম। এখানে সকালে নাস্তার মেনুতে থাকে খিচুড়ি, ডিমকারী, চাটনি, সালাদ অথবা পরোটা, ডিমভাজি, ডাল, চা ইত্যাদি।
দুপুরে লাঞ্চের মেনুতে থাকে দেশি মুরগি, মিক্সড সবজি, ডাল, আলুভর্তা, ভাত ইত্যাদি। রাতের ডিনারের মেনুতে থাকে বারবিকিউ চিকেন ১/৪, রুটি/পরটা, সস, সালাদ, সফট ড্রিঙ্কস অথবা ব্যাম্বু চিকেন,মিক্সড সবজি, ডাল, ভর্তা, ভাত, ব্যাম্বু বিরিয়ানি ইত্যদি। তবে সাজেকে এই খাবারগুলো অথবা অন্য কোন খাবার খাওয়ার জন্য অবশ্যই আগে থেকে রেস্টুরেন্টে জানিয়ে দিতে হবে।
সকালের নাস্তার জন্য আপনাকে ৮০ থেকে ১২০ টাকা প্রতিজন, দুপুরের লাঞ্চের জন্য ২২০
থেকে ২৫০ টাকা প্রতিজন, রাতের ডিনারের জন্য ২২০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতিজন খরচ
করতে হবে। এছাড়াও আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়, তবে কি খাবেন তা আগে থেকে বলে রাখতে
হবে। সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়,
চেখে দেখতে ভুলবেন না।
এছাড়াও সাজেক ভ্যালিতে আসলে যেসব ডিসগুলো অবশ্যই টেস্ট করবেন তারমধ্যে রয়েছে ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু বিরিয়ানি, বাঁশ কোরোল ভাজি, বাঁশ কোরোল সবজি, ব্যাম্বু টি ইত্যাদি। অরিজিনার সাথে পাহাড়ি খাবার খেতে চাইলে আপনাকে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়ার “খাংময় রেষ্টুরেন্ট”-এ যেতে পারেন। ব্যাম্বু চিকেন একটি দিয়ে ৪ জন খেতে পারবেন এবং দাম পড়বে ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। ব্যাম্বু বিরিয়ানি দিয়ে ২ জন খেতে পারবেন এবং দাম পড়বে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
সাজেক ভ্যালিতে যেসব বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে
আপনারা যেহেতু সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন সেজন্য কিছু কিছু বিষয়ের উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ সাজেক ভ্যালিতে সব সময় সবকিছু পাওয়া নাও যেতে পারে। এজন্যই পূর্ব হতে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন। আসুন জেনে নেওয়া যাক সাজেক ভ্যালিতে যেসব বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-
- আপনার নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পরিচয় পত্রের ফটোকপি সঙ্গে রাখবেন।
- অহেতুক পানির ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন বা পানি নষ্ট করবেন না।
-
পাহাড়ে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পের অথবা সেনাকান্তের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি
তুলবেন না।
-
আপনার যদি আদিবাসীদের সাথে ছবি তুলতে ইচ্ছে হয় তাহলে তাদের
অনুমতি সাপেক্ষে ছবি তুলতে হবে।
-
সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার ২ থেকে ৩ দিন আগে থেকেই হোটেল বা কটেজ বুকিং করে যেতে
হবে।
-
মোবাইলে যোগাযোগের জন্য শুধু একটি অপারেটরের সিম ব্যবহার না করে ৩ থেকে ৪
টি অপারেটারের সিম কাছে রাখা উত্তম, কারণ অনেক সময় ব্যবহৃত অপারেটরের
নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
যারা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে আসবেন, তাদেরকে নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল
ব্যবহার করতে হবে।
-
যারা নিজের গাড়ি নিয়ে ঘুরতে আসবেন, তাদের অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চালক নিয়ে
আসবেন।
-
গাড়ি রাস্তায় বের করার আগে অবশ্যই গাড়ির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভালোভাবে চেক
করে নিতে হবে, কারণ পাহাড়ি এলাকায় নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কোথাও গাড়ি মেরামত
করার সুযোগ নেই।
- পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি ওভারটেক করার সময় অবশ্যই সতর্কতার সহিত ওভারটেক করতে হবে।
-
সাজেক ভ্যালির অনেক জায়গাতে বিদ্যুৎ নাই। সোলার সিস্টেম ও জেনারেটরের মাধ্যমে
পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেজন্য সম্ভব হলে পাওয়ার ব্যাংক কাছে
রাখতে পারেন।
-
আপনার যাত্রা পথের মাধ্যমে যদি জিপ হয় তাহলে জিপের ছাদে উঠা থেকে বিরত
থাকুন।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাজেক ভ্যালি অন্যতম একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি উপযুক্ত জায়গা, যা আপনার মনকে আনন্দ ও শান্তিতে ভরিয়ে দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আজকের এই পোস্টে আমি চেষ্টা করেছি সাজেক ভ্যালির অবস্থান এবং ভ্রমণের যাওয়া আসা, থাকা, খাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে।
আপনার ভ্রমণ সফল হবে যদি আপনি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন। সেজন্যই
ভ্রমণের আগে পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাজেক ভ্যালিতে সব ধরনের পর্যটক (নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং বিত্তবান) আসতে পারে এবং এখানে সব ধরনের পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে।
সেজন্য আপনি আপনার পছন্দ ও সাধ্যমত ইভেন্ট গুলো নিয়ে একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করবেন। সেখানে আপনি আপনার সাধ্যমত কম খরচে ঘুরে আসতে পারবেন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে। এখানে কিছু যোগাযোগ নাম্বার পরিবর্তন হতে পারে সেক্ষেত্রে আমাকে মেসেজ দিয়ে আপনার জানাতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই সামনে এই পোস্টের কিছু আপডেট অথবা নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।
শেষ পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন, বছরের ২ থেকে ৩ বার ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে....
অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url