OrdinaryITPostAd

হাতিশুঁড় গাছের গোপন উপকারিতা ও সহজ খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের গোপন উপকারিতা ও সহজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আপনাদের জন্যই আমি এই পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনি শুধুমাত্র এই পোস্টটি একটু সময় নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ছবি-১

আশা করি, পোস্টটি পড়া শেষে আপনি গাছের প্রতি অনেক কিছু জানতে পারবেন, যা আপনার দৈনন্দিন কাজে খুব উপকারে আসবে। এই গাছটি মূলত আকারে ছোট কিন্তু এর গুনাগুন অনেক। আপনাদের আশেপাশেই এই গাছটি খুব সহজে পাওয়া যাবে।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের পরিচিতি

হাতিশুঁড় গাছের নামটি শুনে আপনাদের কাছে মনে হচ্ছে গাছটি অনেক বড়, কিন্তু আসলে গাছটি ১ থেকে ২ ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে। এই গাছটি আপনাদের বাসার আশেপাশেই ঝোপঝাড়ে বা বন জঙ্গলে দেখতে পাবেন। এই গাছটির বাঁকানো পুষ্পদন্ডে সাদা সাদা ফুল, দেখে মনে হয় যেন কোন হাতি তার অদ্ভুত সুন্দর শুঁড় তুলে সালাম জানাচ্ছে (উল্টো করে)।

অনেক সময় এই গাছকে হাতিশুঁড়ি, হাতিশুন্ডি, হতিশুর, হস্তীশুন্ডী, শ্রীহস্তিনী, মহাশুন্ডী ইত্যাদি নামে পরিচিত করা হয়। যেখানে সেখানে অযত্নে বেড়ে উঠলেও ব্যতিক্রমী চেহারার জন্য অতি সহজেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এই গাছের কান্ড ফাঁপা, নরম এবং সারা গাছে ছোট ছোট রোম আছে। এই গাছে সারা বছরই ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে এই ফুলটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এর ফল এবং বীজ সাধারণত ছোট হয়।

এই গাছে ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন এলকালয়েডস ও হেলিওট্রিন নামক নানারকম জৈব উপদান পাওয়া যায়। এর পাতা খসখসে এবং একের বিপরীতে অন্য পাতাটির অবস্থান থাকে। ডালের নিচের দিকে পাতা বড় এবং লম্বা হয়। বড় পাতাগুলো দেখতে সাধারণত বর্শর বলার মত মনে হয়। পাতাগুলোকে আপনি যদি আঙ্গুল দিয়ে ঘষেন তাহলে এক প্রকার বন্ধ পাবেন।

কোথায় হাতিশুঁড় গাছ পাওয়া যায়

হাতিশুঁড় গাছটি দেশের প্রায় সব জায়গার বন জঙ্গলে অথবা ঝোপঝাড়ে, রাস্তার পাশে আগাছার সাথে, বাসা বাড়ির আনাচে-কানাচে ইত্যাদি জায়গাতে পাওয়া যায়। এমনিতে বুঝতে চিনতে সমস্যা হলেও গাছটির ব্যতিক্রম ধর্মী ফুলের কারণে আপনারা খুব সহজেই এই গাছটিকে চিনতে পারবেন।

এর আদিনিবাস ভারতের পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জে, সেজন্যই ভারতীয়রা এই গাছের ঔষধি গুনাগুনকে সর্বাত্মক ব্যবহার করে থাকে। এমনও হতে পারে, আপনি প্রতিনিয়ত এই গাছটিকে দেখেছেন কিন্তু নাম হয়তো জানেন না। এই পোস্টটি করার পরে আপনি গাছটিকে চিনতে পারবেন এবং সাথে সাথে এর বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

যেহেতু এই ঔষধি গাছটি সব জায়গাতেই খুব সহজেই পাওয়া যায় সেহেতু আপনাকে এই গাছ সংগ্রহ জন্য দূরে কোথাও যেতে হবে না। এই গাছের আরো একটা দিক হচ্ছে, আলাদাভাবে কোন পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না আগাছা যেমন খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে এই গাছটিও আগাছার সাথে সাথে খুব দ্রুত বেড়ে উঠে।

হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের গুনাগুন 

হাতিশুঁড় গাছের শিকড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। আদিকাল থেকেই এই শিকড় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই শিকড়ে ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে যা বাত এবং আর্থাইটিসের মতো ব্যথারজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধানে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি বদহজম, অম্বল, পেটের গ্যাস ইত্যাদি কমিয়ে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। এর শিকড়ে অ্যান্টি-হেলমিন্থিক উপাদান থাকায় এটি পরজীবী সংক্রমণ থেকে আপনাকে মুক্ত পেতে সাহায্য করবে।

এই শিকড় একটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা মুত্রাশয় পরিষ্কার রাখতে এবং মুত্রনালীর বিভিন্ন সংক্রমণ রোধ করবে। এই শিকড়ের রস শরীর হতে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয় এবং মূত্রনালীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে যা আপনার রক্ত পরিষ্কার করবে এবং ত্বককে মসৃণ এবং লাবণ্যময় করবে।

এছাড়াও ইহা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় যেমন ফোড়া, দাদ, চুলকানি এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর রস ত্বকের উপর প্রয়োগ করলে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত উপশম হবে। হাতিশুঁড় গাছের শেকড়ের গুনাগুন অনেক থাকলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা আপনাকে জেনে তারপর ব্যবহার করতে হবে।

খাওয়ার নিয়ম হাতিশুর গাছের শিকড়

আপনারা এরমধ্যেই জানতে পেরেছেন হাতিশুঁড় গাছের শিকড় অনেক গুনের অধিকারী, তবে এর জন্য আপনাকে সঠিকভাবে এবং পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে এই শিকড় খাওয়ার জন্য আপনি কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন, যা থেকে আপনি পূর্ণ উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পারবেন।

প্রথমেই আপনাকে শিকড়টি সংগ্রহ করার পর পরিষ্কারভাবে পানির সাহায্যে ধুয়ে নিন, যেন মাটি বা অন্যান্য কিছু শেকড়ের সাথে লেগে না থাকে। এরপর আপনি ইচ্ছা করলে এগুলোকে কেটে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করতে পারেন, যা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতে ব্যবহার করা সহজ। অল্প অল্প করে প্রতিদিন এই গুঁড়া হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে আপনি খেতে পারেন।

ছবি-২

এটি দৈনিক একবার অথবা সর্বোচ্চ দুইবার গ্রহণ করতে পারেন। তবে সঠিক পরিমাণ নির্ভর করছে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগের ধরণ ও তীব্রতার উপর। এছাড়া ও আপনি এই শিকড় দিয়ে তৈরি করা তেল ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে এই শিকড়ের নির্যাস পান করতে পারেন।

নির্যাস তৈরির জন্য শিকড়কে পানিতে ফুটিয়ে নিন, সেই পানি ঠান্ডা করে আপনি পান করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই নির্যাস খুবই কার্যকর। কিন্তু যাদের পেটের সমস্যা নেই তারা এই শিকড়ের নির্যাস না পান করে পূর্বে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলাই উত্তর।

হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার উপকারিতা

প্রচলিত এবং প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ে বিভিন্নপ্রকার রোগবালায় ভালো হয়ে যায়। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এটি সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক এই গাছের শিকড় খাওয়াতে কোন কোন উপকারিতা পাওয়া যাবে-

  • ব্যথা কমাতেঃ আপনারা আগেই জেনেছেন এই শিকড়ে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। এসব ব্যথাজনিত সমস্যার মধ্যে রয়েছে বাত, আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য সমস্যা।
  • হজমে সহায়কঃ এই গাছের শিকড়টি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এটি পেটের গ্যাস বা ফাঁপাভাব, বদহজম এবং অম্বলের মতো সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেঃ হাতিশুঁড়ের শেকড়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েঃ এই শিকড় প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এটি নিয়মিত সেবনে আপনার পেট পরিষ্কার থাকবে।
  • ত্বকের যত্নেঃ এই শিকড় বেটে পেস্ট এর মতো তৈরি করে বা শিকড়ের নির্যাস ত্বকে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফোড়া, চুলকানি এবং অন্যান্য সমস্যা দূর হয়ে যাবে ফলে ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ ও লাবণ্যময়।
  • মূত্রাশয় পরিষ্কার রাখতেঃ হাতিশুঁড় গাছের শেকড় একটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা মুত্রাশয় পরিষ্কার রাখতে এবং মুত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • রক্ত পরিশোধক হিসেবেঃ গবেষণায় দেখা গেছে এই গাছের শিকড় রক্ত পরিশোধ হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, যার রক্তকে পরিস্কার করে।

হাতিশুঁড় গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুঁড় গাছের পাতা খাওয়ার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এর ঔষধি গুনাগুন থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এড়ানো সম্ভব হয়। সাধারণত হতিশুঁড় গাছের পাতা খাওয়ার আগে সেটিকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এই গাছের পাতা হতে রস বা নির্যাস সংগ্রহ করতে পারেন, যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে। এই গাছের পাতা থেকে প্রাপ্ত রস দৈনন্দিন এক অথবা দুই চা চামচ পরিমাণ খেতে পারেন, যা আপনার পেটের গ্যাস ও ফাঁপা দূর করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

এছাড়াও পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে আপনার ঠান্ডাজনিত কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকাংশই কমে যাবে। এভাবে আপনি যদি নিয়মিত এই গাছের পাতার রস গ্রহণ করেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু এই পাতার অনেক গুনাগুন রয়েছে তাই ইচ্ছা করে অথবা ভুল করেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না, যা আপনার জন্য হিতের বিপরীত হবে।

শারীরিক অক্ষমতা দূর করতে হাতিশুঁড় গাছের ভুমিকা

প্রাচীন কাল থেকেই শারীরিক অক্ষমতা দূর করতে হাতিশুঁড় গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, শিকড় এবং ফুল যৌন সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। হাতিশুঁড় গাছ মূলত শরীরের শক্তি এবং উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে, যা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

এই গাছটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে, যা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি শরীরের হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে, যা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অপরিহার্য। হরমোন ভারসাম্য সঠিক থাকলে যৌন ক্ষমতা দূর করা সম্ভব।

এছাড়াও আপনারা জেনেছেন এই গাছ সেবনে দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা যৌন অঙ্গগুলোতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই গাছের প্রদাহনাশক গুণাবলী থাকার কারণে যৌন অক্ষমতা সৃষ্টিকারী প্রদাহ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে কমে যায়।

এই গাছের প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করার গুণাবলী রয়েছে, যার শরীরের সামগ্রিক শক্তি এবং মানসিক বিভিন্ন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। ফলে আপনার শরীর ও মন দুটিই চাঙ্গা হয়ে যাবে, তখন যৌন জীবনে উদ্দীপনা এবং কর্মক্ষমতা আছে অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌন উদ্দীপক হিসেবে এই গাছকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

হাতিশুঁড় গাছের পাতা খাওয়ার উপকারিতা

হাতিশুঁড় গাছের পাতা, যাকে অনেক অঞ্চলে “হাতিশুঁড় পাতা” নামে ডাকা হয়, আদিকাল থেকেই এই গাছের ঔষধি গুনাগুন সবার কাছেই সুপরিচিত। এই গাছের পাতায় বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক হাতিশুঁড় গাছের পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-

  • হাতিশুঁড় গাছের পাতা ব্যথাজনিত ফোলাহাব কমাতে সাহায্য করে। সেজন্য এই পাতাকে বেটে অল্প গরম করে ব্যথাযুক্ত স্থানে যেখানে ফুলে রয়েছে সেখানে লাগালে, ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। রিম্যাটিক বাতে, রেডির তেলের সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে শরীরের হাড়ের বিভিন্ন সংযোগস্থলে মলমের মতো লাগিয়ে দিলে তা ব্যথা উপশমে সাহায্য করবে।
  • হাতিশুঁড় গাছের পাতা বিষাক্ত পোকার কামড়ে উপশম দিতে সাহায্য করে। সেজন্য পাতা বেটে তার রস কামড়ের স্থানে লাগালে কামড়ের জ্বালা এবং ফোলা কমে যাবে। 
  • এছাড়াও টাইফয়েড জ্বরে এই পাতার রস গরম করে তা থেকে নিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারে। এর ফলে জ্বর আস্তে আস্তে কমতে থাকে সাথে সাথে গায়ের ব্যথা কমতে থাকে।
  • হাতিশুঁড় গাছের পাতা একজিমা এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একজিমার স্থানে এই পাতার রস লাগালে কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে। এছাড়াও ছত্রাকজনিত সমস্যা যেমন শরীরের লাল চাকা চাকা দাগ দূর করতে এই পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
  • হাতিশুঁড় গাছের পাতা দাঁতের মাড়ি ফোলা, জ্বর ও কাশিতে বেশ উপকারী হিসাবে কাজ করে। দাঁতের মাড়ি ফোলা স্থানে এই পাতার রস লাগালে ফোলাটি দ্রুত কমে যাবে।

অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতিশুঁড় গাছের

হাতিশুঁড় গাছ একটি প্রাকৃতিক ঔষধি গাছ তা আপনারা আগেই জেনেছেন। এই প্রাকৃতিক ঔষধি ব্যবহারে আপনাকে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, ছোট শিশু এবং যাদের কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক হাতিশুঁড় গাছের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-

  • যকৃতের ক্ষতিঃ হাতিশুঁড় গাছের পাতায় পিরোলিজিডিন এলকালয়েড নামক ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে যকৃতের ক্ষতি করতে পারে। এই উপাদানটি যকৃতের কোষে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা লিভার সিরোসিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কারণ হতে পারে। সেজন্য যাদের যকৃতের সমস্যা রয়েছে তারা এই গাছ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
  • এলার্জি ও ত্বকের সমস্যাঃ কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের এই গাছ ব্যবহার করলে এলার্জি হয় ও ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করে। যাদের এরকম সমস্যা হয় তাদের উচিত হবে এই গাছের উপকারিতা গ্রহণ করা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে।
  • হজমের সমস্যাঃ এই গাছের অতিরিক্ত ব্যবহারে হজমের সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়াও যারা হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই গাছটি গ্রহণ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
  • গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য এই গাছের ব্যবহার অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক সময় এটি গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। এছাড়াও স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এর উপাদানগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
  • ঔষুধের বিষক্রিয়াঃ এই গাছের রস কিছু কিছু ওষুধের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে তাদের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে এটি অনেক সময় বিষের মতো কাজ করে। এজন্যই যারা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের এই গাছের নির্যাস সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

হতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার সঠিক সময়

আপনাকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সকালে ২৫০ গ্রাম পানি পান করতে হবে। এরপর হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের কয়েকটি ছোট ছোট অংশ (২ ইঞ্চি করে) কিছু পরিমাণ মধুর সাথে মিশিয়ে মুখে দিয়ে চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলুন। রস খাওয়ার পরে বাকি অংশটুকু ফেলে দিন। এখানে যে নিয়মটি বলা হলো তার ব্যতিক্রম যেন না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

রস খাওয়ার পর হতে এক ঘণ্টার মধ্যে আর কোন কিছু খাবেন না। এই গাছের শিকড় অবশ্যই সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। শিকড়ের সাথে মধু মেশাতেই যে হবে এমনটি নয়, আপনার কাছে যদি মধু না থাকে, সেক্ষেত্রে মধু ছাড়াই আপনি গাছের শিকড়টি চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলে দিতে পারেন। সাধারণত মুখে স্বাদ আনার জন্য মধুকে ব্যবহার করা হয়।

বশীকরণের নিয়ম হাতিশুঁড় গাছের ফুল দিয়ে

হাতিশুঁড় গাছের ফুল বা যেকোনো অংশ দিয়ে বশীকরণ করার যে প্রচলিত ধারণাটি আছে তা মূলত একটি লোকবিশ্বাস ও তান্ত্রিক প্রথার অংশ। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই গাছটি সাধারণত ঔষধি গুণাবলীর জন্যই পরিচিত। বশীকরণের মতো বিষয়গুলো সাধারণত বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যার কারণে বাস্তবে এর ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম হয়ে থাকে।

এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সফলতার জন্য যেসব নিয়ম ও বিশ্বাস প্রচলিত আছে, তার মধ্যে অনেকগুলাই কাল্পনিক এবং সাংস্কৃতিক উপকথার মতো হয়ে থাকে। সেজন্য এগুলোতে বিশ্বাস করা উচিত নয়। তবে আপনি যদি কৌতুহল বসত শিখতে চান তাহলে সাধারণত এই ধরনের কার্যক্রমের জন্য নিম্নের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন-

  • প্রথমেই আপনাকে হাতিশুঁড় গাছের ফুল সংগ্রহ করতে হবে। এই গাছের ফুল সাধারণত আমি কাল থেকেই বিভিন্ন তান্ত্রিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • ফুল সংগ্রহ করার পর ফুলগুলোর পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। সেজন্য আপনাকে ভালোভাবে গোসল করে একটি পরিষ্কার ও পবিত্র স্থানে রাখতে হবে।
  • এরপর সেই ফুলের উপর নির্দিষ্ট মন্ত্রপাঠ করা হয়। এই মন্ত্রগুলি সাধারণত তান্ত্রিক গুরু বা ওই ধর্মের বিশেষজ্ঞদের থেকে শেখা হয়।
  • মন্ত্রপাঠ শেষ হওয়ার পরে ফুলগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর বা তার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যাকে বশীকরণ করা হবে।

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

হাতিশুঁড় গাছ একটি বহুল ব্যবহৃত ঔষধি গাছ, যা আপনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত করতে পারেন। এই গাছটি সাধারণত রাস্তার পাশে বা পুরনো দালানের পাশে জন্মায় এবং এর সাদা ফুলগুলো হাতের দাঁতের মতো দেখতে হয়। হাতিশুঁড় গাছের পাতা, মূল এবং ফুল বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলিতে সমৃদ্ধ।

এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি হাতিশুঁড় গাছের পরিচিতি, হাতিশুঁড় গাছের মূল, শিকড়, পাতা, ফুল ইত্যাদির উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্বন্ধে। এছাড়াও এখানে অন্যান্য আরো অনেক উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা আপনাদের ভবিষ্যতে যে কোন সময় কাজে লাগতে পারে।

ছবি-৩

এই গাছের ঔষধি গুণাবলী প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত এবং এটি বর্তমানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেজন্যই এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আরো গবেষণা এবং প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে যাতে এর ওষুধি গুণাবলী আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং তারা এর উপকারিতা গ্রহণ করতে পারে।

এই গাছটির সহজলভ্য এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এর ব্যবহার আপনাদের চোখে অবশ্যই পড়বে। সেজন্য এই গাছের ঔষধি গুণাবলী সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এটি আরো মানুষের উপকারে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আজ এ পর্যন্তই, ভবিষ্যতে এই পোস্টের কোন আপডেট অথবা নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হবে।


সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন এবং নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে.......

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url