OrdinaryITPostAd

গর্ভাবস্থায় ফলের রস-জুস পান করার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় ফলের রস বা জুস পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। মনে মনে চিন্তা করছেন গর্ভাবস্থায় ফলের রস বা জুস পান করা যাবে কিনা। কোন কোন জুস বা রস পান করা যাবে অথবা রসগোল্লার কি কি উপকারিতা আছে তা জানতে চাচ্ছেন।

ছবি-১

আপনাদের এ জানার ক্ষুধাকে মেটানোর জন্য আমি আমারে পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনার শুধুমাত্র একটু সময় নিয়ে এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। পড়াশেষে আশা করি আপনারা ফলের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ গর্ভাবস্থায় ফলের রস পান করার উপকারিতা

ফলের রসের পরিচিতি

ফলের রস বলতে আমরা বুঝি ফল হতে তরল পদার্থ পাওয়া যায়। ইহা সাধারণত ফলকে চেপে বা নিংড়ে বের করা হয়। এর রং, ঘনত্ব এবং স্বাদ ফল ভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে স্বাদ সাধারণত মিষ্টি অথবা টক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এই রসকে আপনি ইচ্ছা করলে পানীয় হিসেবে খেতে পারেন।

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং প্রাকৃতিক চিনি বিদ্যমান থাকে। আপনার বাড়ির কাছের বাজারে বিভিন্ন রকম ফল যেমন আপেল, কমলালেবু, আঙ্গুর, আম, আনারস ইত্যাদি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। যা আপনার ব্লেন্ডারের মাধ্যমে ফলের রসে পরিণত করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কনসেনট্রেটেড বা সংরক্ষিত ফলের রস না পান করে তাজা ফল থেকে তৈরি ফলের রস পান করা উত্তম।

উপকারিতাঃ এই রস গর্ভবতী নারী ও গর্ভের সন্তানের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করতে সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। ইহা গর্ভবতী নারীর শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমে সহায়তা করে ফলে শরীরে শক্তির স্তর অনেক গুনে বেড়ে যায়। সেজন্য আপনি ইচ্ছা করলেই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করবেন না। এতে উপকার না হয়ে হিতের  বিপরীত কাজ হবে।

গর্ভাবস্থায় ফলের রস কেন পান করবেন

গর্ভাবস্থায় ফলের রস কেন পান করবেন তা প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাদের জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই গর্ভকালীন সময় অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ফল খেলে হজমে ও পেটের সমস্যা হয় কিন্তু সেই ফলের রস খেলে তা হজমে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা দূর করে।

ফলের রসে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জাতীয় উপাদান এবং খনিজ উপাদান খুব সহজে রক্তের সাথে মিশে গর্ভবতী মায়ের এবং তার অনাগত শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করে এবং কোষের সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও ফলের রস গর্ভবতী নারীর শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা ক্লান্তি কমাতে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।

উপকারিতাঃ এই ফলের রসে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো খুব সহজেই একসাথে পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ মেটাতে সহায়তা করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ফলের রসে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, সেজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে না পান করে পরিমিত পরিমাণে পান করা উত্তম। এছাড়া সবসময় চেষ্টা করতে হবে টাটকা রস পান করার, সংরক্ষিত রস পান না করাই শ্রেয়।

গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি জুস পান করার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি জুস পান করার উপকারিতা অনেক রয়েছে। চিকিৎসকরা যেসব ফলের রস বা জুস পান করতে বলে তার মধ্যে স্ট্রবেরি অন্যতম। প্রথমেই দুইটি অথবা তিনটি স্ট্রবেরি স্ট্রবেরি ১ থেকে ২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরে তা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর তা ভালোভাবে ছোট ছোট অংশে কেটে নিতে হবে।

কাটার পরে তা ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে যতক্ষণ মসৃণ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। এরপর ছাকনির সাহায্যে তা ছেকে একটি পরিষ্কার গ্লাস অথবা একটি পাত্রে ঢেলে রাখুন। আপনি ইচ্ছা করলে এতে বরফের একটি ছোট্ট টুকরা দিতে পারেন ঠান্ডা করার জন্য। তবে গর্ভাবস্থায় বরফের টুকরা না মেশানো উত্তম।

উপকারিতাঃ এই ফলের রসের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আভা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে ফোলেট উপাদান থাকায় গর্ভের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সহায়ক হিসাবে কাজ করে।

বিটরুট জুস গর্ভাবস্থায় পান করার উপকারিতা

বিটরুট জুস গর্ভাবস্থায় পান করার উপকারিতা সম্পর্কে আপনিসহ অনেকেই হয়তো জানেনা, কারণ এটি সচরাচর পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই ফলের জুস বা রস তৈরি করতে প্রথমে আপনাকে কয়েকটি বিটরুট নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।

প্রস্তুত প্রণালীঃ ১ থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত ভেজানোর পর তার ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারের সাহায্যে মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে হবে। এরপর ছাকনির সাহায্যে তা ছেকে একটি গ্লাস অথবা পরিষ্কার পাত্রে ঢেলে রাখুন। এই রস সাথে সাথে পান করে নেওয়া উত্তম, সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে বা ঠান্ডা করার জন্য অন্য কোন স্থানে না রাখাই ভালো।

উপকারিতাঃ গর্ভকালীন সময়ে এই ফলের রসটি একটি আদর্শ রস, যা ভিটামিন এ দ্বারা পরিপূর্ণ। এই রস গর্ভবতী নারীর শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, যা ক্লান্তি এবং দুর্বলতাকে প্রশমিত করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা লোহিত কণিকা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। প্রাতঃরাশের পরিপূরক হিসেবে এই রসটি ব্যবহার করা হয়। তাই আপনি ইচ্ছা করলে এই রসকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় পেয়ারার জুস পান করার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা একটি উৎকৃষ্ট মানের ফল হতে পারে, যদি আপনি পরিমাণ মতো গ্রহণ করেন এবং আপনার হজমের কোন সমস্যা না থাকে। সাধারণত দুই ধরনের পেয়ারা দেখতে পাওয়া যায় একটি ভেতরে লাল ও অপরটি সাদা হয়ে থাকে। তবে লাল পেয়ারা তে সাদা পেয়ারায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারো যদি এলার্জির সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে কমলালেবু অথবা স্ট্রবেরির রস খেতে পারেন।

প্রস্তুত প্রণালীঃ ২ থেকে ৩ টি পেয়ারা কেটে ভেতরের বীজটি ফেলে অন্যান্য অংশকে ছোট ছোট অংশে কেটে নিয়ে চিনি মাখিয়ে ২ থেকে ৩ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর অধিক স্বাদের জন্য লেবুর রস, মধু ও পুদিনা পাতা ভালোভাবে মেশান। তারপর পানি ছাড়া ব্লেন্ডারের সাহায্যে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন এবং ছাকনির সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে গ্লাসে অথবা পাত্রে রেখে দিন। খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণ জিরা গুড়া বা মরিচের গুঁড়া মেশালে খেতে সুস্বাদু হয়।

উপকারিতাঃ পেয়ারা জুসের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, গর্ভবতী নারীর রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। ইহা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেহে রক্তসল্পতা হ্রাস করে। এছাড়াও এতে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে, যা গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্যান্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, হজম শক্তি বৃদ্ধি, শিশু দৈহিক বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ডালিমের রস গর্ভাবস্থায় পান করলে কি হয় জানুন

ডালিম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সহজলভ্য একটি ফল, যা আপনারা আশেপাশের বাজারেই পাবেন। অনেকে বাড়ির ছাদে অথবা বাড়ির আঙিনায় এই গাছ লাগিয়ে থাকে। এর গায়ের রং লাল এবং কাটার পর ভিতরে ছোট ছোট দানা থাকে, যা রস দ্বারা আবৃত থাকে। একে কোন কোন অঞ্চলে বেদনা আবার কোথাও আনার নামে পরিচিত। এই ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়।

ছবি-২

প্রস্তুত প্রণালীঃ ১ থেকে ২ ডালিমকে কয়েক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে পরিষ্কার করে সেটি চাকুর সাহায্যে কেটে তার ভেতরের দানাগুলো একটি বাটিতে ছড়িয়ে নিন। ছড়ানো সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে তা ধুয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেই। তারপর ব্লেন্ডারের সাহায্যে মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। এবার ছাকনির সাহায্যে ছেঁকে তা একটি গ্লাস অথবা পাত্রে রাখুন। গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য ফ্রিজে না রাখাই ভাল।

উপকারিতাঃ ডালিমের রস গরম অবস্থায় পান করলে তার থেকে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন বি, সি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, পেটের অসুখ, কাশি ইত্যাদি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ইহা আপনার অনাগত সন্তানের মেধা রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও বাচ্চা হওয়ার পরেই জন্ডিস হওয়ার যে প্রবণতা তা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় গাজরের রস পান করার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় গাজরের রস পান করার উপকারিতা অন্যান্য রসের তুলনায় অনেক বেশি, কারণ সমস্ত সবজির মধ্যে এটি সবথেকে বেশি পুষ্টিকর হিসেবে পরিচিত। সেজন্য গর্ভাবস্থায় দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় গাজরের রস থাকা আবশ্যক। এই রসে তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকায় অধিকাংশ চিকিৎসকই এই রস পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

প্রস্তুত প্রণালীঃ গাজরের রস তৈরি করা খুবই সহজ এজন্য প্রথমে আপনাকে কয়েকটি গাজরকে ১ থেকে ২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানি থেকে বের করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে তার ছোট ছোট আকারে কেটে নিন। এরপর ব্লেন্ডারের সাহায্যে মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে থাকুন। তারপর ছাকনির সাহায্যে ভালোভাবে ছেকে একটি গ্লাস অথবা পাত্রে রাখুন।

উপকারিতাঃ আপনারা জানেন গাজরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা গর্ভের শিশুর হার ও দাঁতের বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া এতে ভিটামিন সি, এ এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা গর্ভবতী নারীর এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ফ্রি রেডিক্যালগুলো থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যালগুলো শরীরের উপযুক্ত কার্যাবলীকে ত্বরান্বিত করে।

কমলালেবুর রস গর্ভাবস্থায় কেন পান করবেন জানুন

কমলালেবু একটি বিদেশি ফল যা আপনার আশেপাশের বাজারে খুব সহজেই আপনি পেয়ে যাবেন। এটি বছরের সব সময় পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশেও এর উৎপাদন শুরু হয়েছে, যার পুষ্টিগুণ একই কিন্তু স্বাদ একটু অন্যরকম হয়ে থাকে। এই ফলটি সাধারণত কমলা রঙের এবং গোলাকৃতী। তবে আমাদের দেশে উৎপাদিত কমলার রং সবুজ হয়ে থাকে।

প্রস্তুত প্রণালীঃ ২ থেকে ৩টি কমলালেবু পানিতে কয়েক ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখুন। এবার সেগুলো পানির সাহায্যে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। কমলার উপরের খোসা হাত দিয়ে ছড়িয়ে নিন, দেখবেন ভেতরে কমলা রঙের কয়েকটি ভাগ করে রসে ভরা কোয়া পাওয়া যাবে। এরপর সেগুলো মোটামুটি পরিষ্কার করে ব্লেন্ডারের সাহায্যে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর ছাকনির সাহায্যে তা ছেঁকে নিয়ে একটি গ্লাস অথবা একটি পাত্রে ঢেলে নিন। 

উপকারিতাঃ কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফোলেট উপাদান পাওয়া যায়, যা গর্ভবতী নারী এবং গর্ভে থাকা ওর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা আয়রন এবং জিংক গর্ভধারিনী এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে কমলালেবুর রস যে কোন শিশুর এলার্জিজনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ইহা নতুন টিস্যু এবং লোহিত রক্ত কণিকা গঠনেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পাতিলেবুর রস পান করার উপকারিতা গর্ভাবস্থায়

আপনার বাড়ির কাছের বাজারেই খুব সহজেই বছরের যে কোন সময় পাতিলেবু পেয়ে যাবেন। তবে বর্ষার শুরুতেই এই লেবুর উৎপাদন বেশি হয়। দেশে বিভিন্ন প্রকার পাতিলেবু পাওয়া যায় তবে কাগজি জাতের লেবু সবচেয়ে ভালো এবং চিকিৎসকরা এই লেবু খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ জাতের লেবু খেলে পেটের ও গ্যাসের কোন সমস্যা হয় না।

প্রস্তুত প্রণালীঃ ২ থেকে ৩ টি লেবু কয়েক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরে তা পানি থেকে ভালোভাবে ধুয়ে ছোট ছোট অংশে কেটে নিন। এরপর একটি গ্লাস বা পাত্রে লেবুর টুকরোগুলোকে হাত অথবা মেশিনের সাহায্যে চাপ দিয়ে লেবুর রস বের করে দিন। আপনার প্রয়োজনমতো ইচ্ছা করলে লবণ অথবা চিনি যুক্ত করতে পারেন।

উপকারিতাঃ গর্ভাবস্থায় পাতিল লেবুর রস পান করার উপকারিতা অনেক,কারণ অন্যান্য ফলের তুলনায় এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও ইহা অন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাকে কমিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় আপেলের রস পান করার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আপেলের রস পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি পুষ্টিকর এবং খনিজ উপাদানে ভরপুর। গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকরা গর্ভবতী নারীকে অন্যান্য ফলের মত আপেলের রস পান করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আপনি ইচ্ছা করলেই অন্তত একটি আপেলের রস করে পান করতে পারেন।

অনেক পরিবারের সচ্ছলতা না থাকার কারণে দিনে অন্তত একটি করে আপেল নিয়ে খোসা ছড়িয়ে নিবেন। তবে দুই অথবা তিনটি আপেল হলে ভাল হয়। এরপর খোসা ছড়ানো আপেলগুলো সিদ্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর আপন গুলো ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্লেন্ড করে রস বের করে একটি গ্লাসে নিন। স্বাদ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হলে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে নিন।

উপকারিতাঃ গর্ভাবস্থায় আপেলের রস আপনার অনাগত সন্তানের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা প্রদান করে। এটি অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি এবং ঘুমের সমস্যার সমাধান করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় যেসব ফলের রস পান করা এড়িয়ে চলা উচিত

গর্ভাবস্থায় গর্ভধারিনী এবং গর্ভের শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য ফলের রসের বিকল্প কোন কিছু নেই।সাধারণত সব ধরনের ফলের রস পান করা যাবে তবে নির্দিষ্ট কিছু ফলের রস আছে যা গর্ভবতী মহিলাদের এবং বাচ্চার উপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই ফল খাওয়ার আগে এড়িয়ে চলা ফলগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে-

  • আনারসের রসঃ প্রথম তিন মাসের মধ্যে এই ফলের রস এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি জরায়ুতে তীব্র সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • আঙ্গুরের রসঃ গর্ভাবস্থায় সবুজ ও কালো উভয় রঙের আঙ্গুরের রস এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এর মধ্যে থাকা যৌগিক বেজভেরট্রোল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।
  • তেতুলের রসঃ গর্ভাবস্থায় তেঁতুলের রস পান করা ভালো, কারণ এটি টক জাতীয় খাবার, যা হজমে সহায়তা করে। প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলারাই এই ফলের উপর আকৃষ্ট হয়ে থাকে। সেজন্য অতিরিক্ত না পান করে পরিমাণ মতো পান করতে হবে।
  • পেঁপের রসঃ কাঁচা বা আধাপাকা পেঁপের রস গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে প্যাপাইন নামক উপাদান থাকে, যা জরায়ু সংকোচন ঘটায় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • তরমুজের রসঃ তরমুজের রসে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ভিটামিন থাকে, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে রক্তে শর্করা মাত্র বেড়ে যায়।
  • কলার জুসঃ এমনও আনেক গর্ভবতী নারী আছে যাদের কাছে কলার জুস খুবেই পছন্দের পানীয়। কিন্তু যাদের অ্যালার্জি আছে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্ত হন তাদের ক্ষেত্রে এটি নিরাপদ নয়।
  • খেজুরের জুসঃ খেজুরের জুসে প্রচুর পরিমানে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টি উপদান থাকে, যা গর্ভবতী মাহিলার শরীরকে উত্তপ্ত করে এবং জরায়ু সংকোচন করে গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
  • ক্যানড টমেটো জুসঃ গর্ভাবস্থায় টিনজাত খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম, কারণ এর মধ্যে সংরক্ষণ করার জন্য এর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান দেওয়া থাকে যা আপনার এবং অনাগত সন্তানের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
  • হিমায়িত বেরি ফলের রসঃ যেসব ফল দীর্ঘদিন ধরে হিমায়িত করে রাখা হয় তা অনেক সময় শুকনো হয়ে যায়। সেগুলো আবার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে এসে সেখান থেকে জুস তৈরি করে পান করা গর্ভকালীন সময়ের জন্য ভালো নয়। সেজন্য তাজা ফলের জুস/রস পান করা উত্তম।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফলের রস পান করা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফলের রস পান করা সম্পর্কে আমি এতোটুকুই বলবো যে, গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই ফলের রস পান করতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পেষ্টুরাইজড হয়। অনেকের মধ্যে ধারণা আছে যে তাজা ফল চাপ দিয়ে রস করে তা পান করা উত্তম কিন্তু এটা ঠিক নয়, কারণ নন-পেষ্টুরাইজড রস হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যা উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

ছবি-৩

প্রত্যেক মহিলাদের একটি স্বপ্ন থাকে মা হওয়ার, আর সেই স্বপ্নকে পূরণ করতে তাকে গর্ভবতী হতে হয় যা অত্যন্ত কষ্টের কিন্তু চরম আনন্দের। সেজন্যই গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফলের রস/জুস নিয়মিত পান করা উচিত। এমন অনেক ফল আছে যা গর্ভাবস্থায় হজম প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে সে ক্ষেত্রে আপনি যদি ফলের রস/জুস পান করেন তা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি গর্ভাবস্থায় কোন কোন ফলের রস পান করা উত্তম এবং কোন কোন ফলের রস এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। আশা করি আপনারা রস/জুসের প্রয়োজনীয়তা এবং অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজ এ পর্যন্তই, ভবিষ্যতে এই পোস্টের আপডেট অথবা নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবেন।


সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন এবং নিজের ও গর্ভের সন্তানের খেয়াল রাখবেন ধন্যবাদ সবাইকে........

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url