ছেলেদের মুখে ব্রণ দুর করার চমৎকার ভেষজ ও ঘরোয়া উপায়
ছেলেদের মুখে ব্রণ দুর করার চমৎকার ভেষজ ও ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি সঠিক পোস্টটি পড়তে চলেছেন। এই পোস্টটি আপনাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ ভালোভাবে পড়তে হবে। আমার বিশ্বাস পড়া শেষে আপনাদের মুখে হাসি ফুটবে।
ব্রণ এমন একটি সমস্যা যা ছেলে হোক আর মেয়ে হোক সবার মুখেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পোস্টে ছেলেদের মুখে ব্রণ হওয়ার বিভিন্ন কারণ এবং ব্রণ যদি হয়ে যায় তাহলে কি করণীয় তা সম্পর্কে কিছু ঘরোয়া এবং ভেষজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ ছেলেদের মুখে ব্রণ দুর করার চমৎকার উপায়
- মুখে ব্রণের পটভুমি
- ছেলেগের মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ
- মুখে ব্রণের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন
- মুখে ব্রণের কয়েকটি স্টেজ সম্পর্কে ধারনা
- মুখে ব্রণ বলে দিবে শরীরে রোগের কথা
- ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার সাধারণ উপায়
- ৫ টি পরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার
- ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার ১০ টি অপরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি
- মুখে ব্রণ দূর করার ৩২ টি ঘরোয়া পদ্ধতি
- ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
মুখে ব্রণের পটভুমি
স্কিনের অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে ব্রণ হল সবচেয়ে কমন একটি সমস্যা, যা মেয়েদের মুখের পাশাপাশি ছেলেদের মুখেও হয়ে থাকে। মুখে ব্রণ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তবে আমরা অনেকেই জানিনা ব্রণ হওয়ার পেছনে আসল কারণ কি অথবা অনেকে জেনেও তা মানিনা। কিন্তু এগুলো মেনে চললে বা জানলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মুখের তেলগ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতার অভাবে মুখে ব্রণ দেখা দেয়। সেবাসিয়াস গ্রন্থি সেবাম নামে এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে যা ত্বককে মসৃণ রাখে, কিন্তু যদি কোন কারনে এই সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালীর মুখ বন্ধ হয়ে যায় তখন সেবাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় ফলে তা ত্বকের ভেতরে জমে ফুলে ওঠে যা আপনাদের কাছে ব্রণ নামে পরিচিত।
ছেলেদের মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ
মুখে ব্রণ ওঠা খুব সাধারণ কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। আপনারা আগে জেনেছেন ত্বকের যত্নের ব্যাপারে সচেতনতা না হওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এমন অনেকে আছে যারা আলসেমির কারণে ব্রণের সমস্যাকে অবহেলা করেন। পরে মুখে ব্রণের অবস্থা যখন বেশি খারাপ হয় তখন তারা যত্নে মনোনিবেশ করে।
সে ক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের মুখে ক্ষতের দাগ থেকে যায় অথবা ক্ষতের দাগ মেশাতে সময় লাগে। সেজন্য আপনাকে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যেন মুখে ব্রণ হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে, সাথে সাথে তা মেনে চলতে হবে। সাধারণত এমন অনেক কারণ আছে যার ফলে ব্রণ হয়। তবে এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকাঃ ব্রণ থাকুক আর না থাকুক আপনি যখন তখন মুখে হাত দিবেন না। এতে করে হাতে অনেক ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ত্বকের লোম কূপের ভিতরে আটকে যায়। ফলে আপনার অজান্তেই ব্রণের সূচনা হয়। সেজন্য মুখে হাত দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যাদের ত্বকে ব্রণ আছে, তারা মুখ ধোয়ার পর তোয়ালের বদলে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে পারেন, যা আপনার উপকারে আসবে।
সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার করাঃ খুব ঘনঘন বা ফেসওয়াশ জাতীয় ক্লিনার দিয়ে ঘনঘন মুখ পরিষ্কার করলে ময়লা ও ঘামের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সিবাম দূর হয়ে যায়। ফলে সিবামের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মুখে আরও বেশি সিবাম উৎপাদন করে যা তৈলাক্ত ত্বকের কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে ত্বকে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবায়োম থাকে, যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে লড়াই করে ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
তাই আপনি যদি ঘন ঘন ত্বক পরিষ্কার করেন তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়। ফলে ত্বকে ব্রণের আবির্ভাব ঘটে। এজন্য সঠিক নিয়মে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। আপনাদের যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের রাতে ঘুমানোর আগে বা বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। আবার যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও মিশ্র, তাদের অন্তত দিনে দুইবার ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও বেনজয়েল পার অক্সাইড যুক্ত ফেসওয়াশের মাধ্যমে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন।
শেভিংয়ে সতর্কতাঃ যেসব ছেলেদের মুখে ব্রণ আছে তাদের খুব সতর্কতার সহিত শেভ করা উচিত। শেভ করার আগে অবশ্যই রেজার গরম পানি বা জীবাণুনাশক দিয়ে আপনাকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যারা মাল্টিব্লেড সেফটি রেজার ব্যবহার করেন, তাদের উচিত এক সপ্তাহ পর পর ব্লেড পরিবর্তন করা। শেভ করার জন্য ত্বকে ভালো মানের শেভিং ক্রিম অথবা প্রিসেভিং অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
সম্পূর্ণ শেভ করার পরে অ্যালকোহলমুক্ত শেভিং লোশন লাগাতে পারেন। শেভ করার পরে অনেকের মুখে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে। সেক্ষেত্রে আপনি অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি এই সমস্যার সমাধান এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ঘনঘন পরিবর্তন করাঃ প্রতি রাতেই সবার
মত আপনিও কয়েক ঘন্টা বিছানার উপরে মাথায় বালিশের সাহায্যে ঘুমান। যদি
এগুলো জীবাণু দ্বারা আবৃত থাকে, তাহলে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই আপনাকে
অবশ্যই এক সপ্তাহ পর পর বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার পরিবর্তন করতে হবে।
সিরাম ব্যবহারঃ আমাদের দেশে এমন অনেক ছেলেরা আছে যারা ত্বকের যত্নে উদাসীন। তারা ত্বকের কোন সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত যত্ন নিতে আগ্রহী নন। অনেকেই ব্রণ হওয়ার সাথে সাথে ফেসওয়াস ক্রিমের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু দ্রুত ব্রণ নিরাময়ের জন্য সবার অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করা উচিত।
এক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার করার পর স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, নায়াসিনামাইড, অ্যাজেলাইক
অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো গ্রহণ নিরাময়ে সহায়তা করবে। এরপর
আপনি আপনার ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
মুখে ব্রণের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন
মুখে ব্রণের মত কোন একটা কিছু উঠলেই সেটাকে ব্রণ হিসাবে ধরা ঠিক হবে না। কারণ সেটি ব্রণ না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে। সেজন্য আপনাকে প্রথমেই ব্রণের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে হবে। ব্রণ প্রধানত ৬ প্রকার তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৮ প্রকারও দেখা গেছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন প্রকারের ব্রণ সম্পর্কে-
- ভালগারিসঃ মুখে অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব হলে কিংবা ত্বকে তেল অধিক উৎপাদিত হলে ভালগারিস ধরনটির সংক্রমণ হতে পারে। এটি বয়সন্ধিকালে শুরু হতে দেখা যায় তবে যে কোন বয়সের পুরুষ অথবা মহিলাদের হতে পারে।
- মেকানিকাঃ খেলোয়াড়রা কিংবা সৈনিকেরা আটোসাটো পোশাক অর্থাৎ টাইট পোশাক দীর্ঘসময় যাবত পড়ে থাকেন বলে তাদের লোমকূপ অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে আটকে এটি সৃষ্টি হতে পারে। মেকানিকা সাধারণত বুকে, কাঁধে, পিঠে, মাথার স্ক্যাল্পে কিংবা শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে।
- পুস্টুলেসঃ স্ফীত ছোট ছোট র্যাশের ন্যায় লালভাব এবং ফোলাভাব দেখা দিলে সেটাকে পুস্টুলেটস বলা হয়। সাধারণত সেনসিটিভ অর্থাৎ সংবেদনশীল ত্বকে পুস্টুলেটস বেশি হতে দেখা যায়।
- প্যাপিউলসঃ প্যাপিউলস সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ের একটি স্তর যেখানে হালকা গোলাপি বা লাল র্যাশের মত দাগ বা ফোলাভাব দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্যাপিউল বোঝা না গেলেও স্পর্শ করলেই অনুভব করা যায়।
- ব্ল্যাকহেডসঃ ছেলে কিংবা মেয়ে ব্ল্যাকহেডস হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর। ব্ল্যাকহেডস ত্বকের লোমকূপগুলোকে আটকে দেয়, ধুলাবালিকে ত্বকে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয় এবং রোমশ কালো ছোট দাগ বা অংশ দেখা যায়।
- হোয়াইটহেডসঃ হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস-এর মতোই এপিডার্মিসের ভেতরে অবস্থান করে। সাধারণত বয়সন্ধিকালে, হরমোনাল সমস্যাজনিত তৈলাক্ত ত্বকে, ভারসাম্যহীন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর ভাজাপোড়া খাবার খেলে হোয়াইটহেডস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- নডিউলসঃ নডিউলসকে ব্লাইন্ড পিম্পল নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। ত্বকের এপিডার্মিসে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক অনুপ্রবেশ করলে নডিউলস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নডিউলস মারাত্মক একটি রূপ এবং এটি ত্বকে কালো দাগ সৃষ্টি করে।
- সিস্টঃ সিস্ট তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ও মারাত্মক একটি ধরন। সিস্ট হলে লোমকূপ আটকে যায় এবং এপিডার্মিসের ভেতরে ত্বকের মৃত কোষের অংশ সহকারে ফোলা অংশ পুজে ভরে যায়। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় কিংবা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের হরমানের তারতম্যের কারণে সিস্ট হয়ে থাকে।
মুখে ব্রণের কয়েকটি স্টেজ সম্পর্কে ধারনা
ব্রণ শুধু মুখেই নয় দেহের অন্যান্য অংশে যেমন ঘাড়ে পিঠে, মাথায় ইত্যাদি জায়গাতে হতে পারে। তবে সচরাচর মুখেই বেশি দেখা যায়। ব্রণের শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত সাধারণত চারটি স্টেজ রয়েছে। মুখে ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই এই স্টেজ গুলা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কারণ আপনার মুখে কোন স্টেজের ব্রণের পরিমাণ বেশি তা প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে।
নির্ধারণ করার পরে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই স্টেজগুলোকে অনেক সময় গ্রেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রেড বা স্টেজের উপর ভিত্তি করে আপনার ব্রণের পরিচর্যা বা ত্বকের প্রতি সচেতনতার গুরুত্ব দিতে হবে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক কয়েক ধরনের গ্রেড বা স্টেজ সম্পর্কে-
- প্রথম বা প্রদাহবিহীন স্টেজঃ এই পর্যায়ে খুবই সাধারণ প্যাপিউলস বা পুস্টুলেস হতে দেখা যায়।
- দ্বিতীয় বা মারাত্মক ধরনের প্রদাহবিহীন স্টেজঃ এ পর্যায়ে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দেখা যায়, সেই সাথে প্যাপিউলস বা পুস্টুলেস-এর মাত্রা বেড়ে যায়।
- তৃতীয় বা প্রদাহজনিত স্টেজঃ এই পর্যায়ে প্যাপিউলস ও পুস্টুলেস-এর ভেতরে পুজের পরিমাণ বেড়ে যায়, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস বেড়ে যায় সেইসাথে নডিউলসের উপস্থিতি দেখা যায়।
- চতুর্থ ও শেষ বা মারাত্মক প্রদাহজনিত স্টেজঃ এটি সর্বশেষ ও মারাত্মক স্টেজ। এই স্টেজে প্যাপিউলস, পুস্টুলেস, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের পরিমাণ ও পূজের পরিমাণ বেড়ে যায়। নডিউলস মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং সিস্ট দেখা দেয়।
মুখে ব্রণ বলে দেবে শরীরে রোগের কথা
ত্বকের সঠিক যত্নের অভাব, অত্যাধিক তেল ও মসলাজাত খাবার খাওয়া, পানি কম খাওয়া, রাতে ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি কারণে ব্রনের আবির্ভাব ঘটে। আপনাদের ক্ষেত্রে হয়তো এরকম হয়েছে যে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যেখানে ব্রণ ছিল না ঘুম থেকে উঠে দেখছেন সেখানে ব্রণ উঠে গেছে।
অথচ ব্রণ না হওয়ার জন্য হয়তো আপনি কয়েকদিন যাবত বাইরে খাবার একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও ব্রণ না হওয়ার যেসব বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো সবগুলো আপনি মেনে চলেছেন তারপরও দেখছেন মুখে ব্রণ উঠেছে। আসলে শরীরে অন্যান্য রোগ থাকলে স্থান ভেদে ব্রণ উঠতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোথায় ব্রণ উঠলে শরীরে কোন রোগের আশঙ্কা থাকে-
- নাকে ব্রণঃ আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে আপনি খেয়াল করবেন আপনার নাক সব থেকে বেশি তেলতেলে হয়ে থাকে। সাধারণত লিভারে কোন সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নাক তেলতেলে বেশি থাকে, যার কারণে নাকে ব্রণ উঠে।
- গলায় ব্রণঃ অনেকের গলায় ব্রণ দেখা যায়। গলায় ব্রণ সাধারণত হরমোনজনিত সমস্যায় হয়ে থাকে। হরমনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে গলায় ব্রণ দেখা যায়। এছাড়াও বেশি উদ্বেগ এবং অত্যাধিক চিন্তার কারণেও গলায় ব্রণ হতে পারে।
- থুতনীতে ব্রণঃ অনেকের থুতনীতে ব্রণ দেখা যায় দেখা যায়। হরমোনের ক্ষরণ এবং নিঃসরণের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে এটি হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলেও এটি হয়। এছাড়াও হজমের সমস্যা থাকার কারণে শরীরের এই স্থানে ব্রণ দেখা দিতে পারে।
- চোয়ালে ব্রণঃ হজমের সমস্যার কারণে, হরমোন জনিত কোন সমস্যা থাকলে, খুব টাইট পোশাক পরলে, জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খেলে ইত্যাদি কারণে চোয়ালে ব্রণ দেখা দিতে পারে। সেজন্য খোলামেলা পোশাক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ প্রয়োজনে পরিবর্তন করা উচিত।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার সাধারণ উপায়
ছেলেদের মুখের ত্বকের একটি বড় সমস্যা ব্রণ। সারাদিন বাইরে ধুলাবালির ভেতরে থাকার কারণে বেশিরভাগ ছেলেদেরই এই সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া আপনারা আগে জেনেছেন ব্রণ সাধারণত মুখেই বেশি হয়ে থাকে। যার কারণে চেহারা স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়। সেজন্য এই ব্রণকে দূর করার কয়েকটি সাধারণ উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- বাইরে থেকে ঘরে আসার পরপরই ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আপনি মুখটা পরিষ্কার করে নিন, যার ফলে বাইরের ময়লা গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকেই ব্রণের সংক্রমণ বেশি হয়। সেজন্য সবসময় মুখ পরিষ্কার রাখুন।
- প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার গোসল করুন।
- ত্বকে নিয়মিত ময়দা, দুধ ও মধুর পেস্ট লাগান, ফলে ব্রণের দাগ চলে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।
- প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার বার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন, যা ব্রণের উৎপাত অনেকটা কমিয়ে দিবে।
- মুখে কখনোই সাবান ব্যবহার করবেন না প্রয়োজন হলে ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
- মুখে ব্রণ দেখা দিলে তা নক দিয়ে খোঁটাখুঁটি কখনোই করবেন না খেতে ত্বকের ব্রণের দাগ স্থায়ী হয়ে যাবে।
৫ টি পরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার জন্য কয়েকটি পরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি রয়েছে। তবে তার মধ্যে পাঁচটি পরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি তুলনামূলক সহজ। মনে রাখতে হবে ব্রণ থেকে মুক্তির সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে সচেতনতা। যাহোক আমি আপনাদেরকে ব্রণ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ৫ টি ভেষজ পদ্ধতি পরামর্শ দিব। যা আপনারা ঘরে বসেই করতে পারবেন।
ত্রিফলাঃ ব্রণ দূর করার জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হলো ত্রিফলা। এটা
শুধু ব্রনের জন্য নয়, শরীরের আরো নানা সমস্যার সমাধান দেয়। পেটের সমস্যা, হজমের
সমস্যার জন্য এটি খুবই উপকারী। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো রিস্ক নিয়ে রাসায়নিক
উপাদান ব্যবহার না করে যদি ন্যাচারাল কিছু আপনার কাজে আসে তাহলে কেন আপনি ত্রিফলা
ব্যবহার করবেন না।
আর যদি সে ন্যাচারাল কিছু খুব সহজে পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নাই। ত্রিফলা
বাজারে শুষ্ক ফলের অবস্থায় পাওয়া যায়। অনেক কোম্পানি এটিকে নানা ভাবে
প্রক্রিয়াজাত করেও বিক্রি করে। তবে সবচেয়ে নিরাপদ হবে যদি আপনি শুষ্ক
ফলের অবস্থায় ত্রিফলা ব্যবহার করেন। ত্রিফলা হল তিনটি ফলের মিশ্রন। এতে
থাকে আমলকি, হরিতকি ও বিভিতকি।
যেভাবে আপনি এটি ব্যবহার করবেন সেটি হল আপনাকে ত্রিফলা মিশনের একটি অংশ (যাতে
অন্তত ১ টি হরিতকি, ১ টি বিভিতকি এবং ২ টি আমলকি থাকে) গুড়া করে রাতে পানিতে
ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে খালি পেটে রসটি ছেকে খেয়ে নিতে হবে। খাওয়ার পর
অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে নাস্তা করার জন্য।
এভাবে যদি আপনি টানা তিন মাস প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে দেখবেন রওনার আপনার দিকে
ফিরেও তাকাবে না। তখন নিজের পরিষ্কার ত্বক দেখলে আপনি নিজেই আপনার প্রেমে পড়ে
যাবেন।
মধুঃ ব্রনের সমস্যা এত খারাপ একটা ব্যাপার যে, তা যেন আপনার সমস্ত
সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। নারী হন বা পুরুষ, মুখে ব্রণ কারো ক্ষেত্রে ভালো
দেখতে লাগে না। বিভিন্ন রকম চিকিৎসা করিয়ে যারা হতাশ হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য
রইল ব্রণের কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসা। নিয়মিত ব্যবহারে বন কোটা সুন্দর করে চলে
যাবে, আবার চটজলদি ব্রণ কমাতে এর জুড়ি নেই।
ত্বকের জন্য সর্বদা প্রাকৃতিক চিকিৎসা সবচেয়ে উপকারী। এজন্য প্রথমেই বিশুদ্ধ মৌল
সংগ্রহ করুন। মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। ব্রণের প্রকোপ কমাতে ও দাগ দূর
করতে এর কোন জুড়ি নেই। মুখ ভালো করে পয়সা করে নিন খুব হালকা ফেসওয়াশ
দিয়ে। তারপর ভালো করে মুখ ধুয়ে আলতো করো মুছে নিন। এবার আঙ্গুলের ডগায়
মধু নিয়ে ভেজা ত্বকে লাগান। অল্প একটু ম্যাসেজ করে ১০ মিনিট রেখে দিন। তারপর
পানি দিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে নিন। অন্তত ২ ঘন্টা মুখে কোন প্রসাধন লাগাবেন
না।
জলপাই তেল ম্যাসেজঃ আপনার ত্বক তৈলাক্ত কিংবা শুষ্ক যায় হোক না কেন প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে জলপাই তেল দিয়ে পরিষ্কার করলে ত্বক মসৃণ হয় এবং ধীরে ধীরে ব্রণের উপদ্রব কমে যায়। প্রথমে হাতের তালুতে জলপাই তেল নিয়ে দুই হাতে ঘষে তেল কিছুটা গরম করে নিন। এবার এই তেলটা পুরো মুখে ভালো করে ম্যাসেজ করে নিন নিচ থেকে উপরের দিকে।
এভাবে প্রায় দুই মিনিট ধরে মুখে ম্যাসেজ করুন এভাবে ম্যাসেজ করলে ত্বক থেকে মেকআপ এবং ময়লা উঠে আসবে ভালো করে। এরপর কুসুম গরম পানিতে টাাওয়াল ভিজিয়ে মুখের অতিরিক্ত তেল মুছে নিন ভালো করে। এভাবে প্রতিদিন রাতে মুখ পরিষ্কার করে নিলে ব্রণ উঠা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
গোলাপ জলের টোনারঃ প্রতিদিন মুখ ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার পর ত্বকের
লোমকূপ বন্ধ করার জন্য টোনার ব্যবহার করা জরুরী। কারণ লোমকূপ খোলা থাকলে ময়লা
ঢুকে ব্রণের উপদ্রব বৃদ্ধি করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গোলাপজল বেশ কার্যকরী
টোনার হিসেবে কাজ করে।
পানিতে গোলাপজল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে বরফ বানিয়ে নিন। সকালে বাইরে যাওয়ার আগে
অথবা বাসায় ফিরে মুখ ধোয়ার পর এই বরফ দিয়ে পুরো মুখ ঘষে নিন। ত্বক দীর্ঘ সময়
ধরে তেলমুক্ত থাকবে এবং লোমকূপগুলো বন্ধ হবে। বরফ হিসেবে ব্যবহার করতে না
চাইলে তুলায় গোলাপজল লাগিয়ে মুখটা মুছে নিলেও টোনারের কাজ হবে।
স্ক্র্যাবার হিসেবে বেকিং সোডাঃ আমাদের ত্বকে মরা চামড়া ও ব্লাকহেডস জমে। এগুলোর জন্য ব্রণ হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায়। তাই ত্বককে মাঝে মাঝে স্ক্র্যাবিং করতে হয়। এক্ষেত্রে বেকিং সোডা বেশ ভালো স্ক্র্যাবার। প্রথমে বেকিং সোডা ও সামান্য পানি মিশিয়ে নিন।
এবার এই মিশ্রণটি সমস্ত মুখে, ঘাড়ে ও গলায় ভালো করে ম্যাসেজ করে নিন। এক মিনিট ম্যাসেজ করার পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ব্রণের উপদ্রব কমে যাবে, ব্রণের দাগ কমবে এবং ব্ল্যাকহেডস দূর হবে।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার ১০ টি অপরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার জন্য অনেকগুলো অপরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য আরো ১০ টি উপায় রয়েছে যা আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। উপরের ৫ টি পরীক্ষিত ভেষজ পদ্ধতি যদি আপনার কাছে সহজ মনে না হয়, সেক্ষেত্রে আপনারা নিম্নের যে ১০ টি ভেষজ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এখন আসুন পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক -
- ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হয় পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্র্যাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ব্রণ শুধু মুখে নয়, শরীরের অন্যান্য অংশ হতে পারে। তাই স্ক্র্যাবিং সমস্ত শরীরে করা প্রয়োজন। পাকা পেঁপে চটকে নিন এক কাপ। এর সাথে এক টেবিল চা চামচ পাতি লেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়ো মেশান। মিশ্রণটি মুখসহ দেহের সমস্ত অংশে লাগান এবং ২০-২৫ মিনিট মেসেজ করে গোসল করে ফেলুন। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস।
- পুদিনা পাতা ত্বকের অতিরিক্ত তেল এবং ব্রণের সংক্রমণ কমাতে খুবই উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ত্বকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হয়ে যাবে। অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতে পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রনের উপর লাগিয়ে রাখুন এবং ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- পুদিনা পাতার রস করে নিয়ে সেটা দিয়ে আইস কিউব তৈরি করুন। হুস করিও ব্রণের এই আইস কিউব ঘষুন ১০-১৫ মিনিট। এতে ফুসকুড়ি ও ব্রণের সংক্রমণ তো কমবেই সাথে সাথে ত্বকের জ্বালাপোড়াও দূর হয়ে যাবে।
- লবঙ্গ মূলত মশলা হিসেবে পরিচিত হলেও গ্রহণ ছাড়তে তা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। লবঙ্গের তেল দিয়ে ত্বক ম্যাসেজ করা খুবই উপকারী। ত্বকে ব্রণের সংক্রমণ বেড়ে গেলে লবঙ্গ গুঁড়ো করে তাতে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ব্রণের জায়গাগুলোতে মিশ্রনের মোটা প্রলেপ দিন। ২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- টক স্বাদের কদবেল খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। কাঁচা কদবেলের রস ব্রণের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা কদবেলের রস তুলাতে ভিজিয়ে ব্রণ আক্রান্ত জায়গাগুলোতে লাগান। ১০ মিনিট রেখে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- নিম পাতা খুব ভালো জীবাণুনাশক। তাই ব্রণ সারাতে নিমপাতা খুবই উপকারী। নিমপাতা বেটে সাথে চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পরের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- যাদের ব্রণের পরিমাণ অত্যাধিক বেশি তারা পাতি লেবুর রস দিনে দুই তিনবার ব্রণে আক্রান্ত জায়গা গুলোতে লাগান। তবে একটানা ১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ধনিয়াপাতাও ব্রণ সারাতে কার্যকর। ধনিয়াপাতা বেটে তাতে কয়েক চিমটা হলুদ গুঁড়ো মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ২০-২৫ পর পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলুন।
- ১ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম টাটকা নিমপাতা পানি দিন। পানির পরিমাণ অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত পানি দিতে থাকুন। এই পানি ছেঁকে ঠান্ডা করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানি পান করলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
- গোলাপ জলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। দারুচিনি গুঁড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে। এই পেস্ট ব্রনের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
মুখে ব্রণ দূর করার ৩২ টি ঘরোয়া পদ্ধতি
ব্রণ দূর করার জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া কিন্তু কার্যকর উপায় রয়েছে। সাধারণত পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য রস বজায় রাখা ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব, তবে ত্বকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিম্নে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ৩২ টি ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলো-
- শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ
- বাষ্প ও তরমুজের রস - বাষ্প বা গরম পানির ভাপ ত্বকের লোমকূপ আলগা করে খুলে দেয়। বাষ্প নেওয়ার পর সংক্রমণের জায়গা মুছে তরমুজের রস ব্যবহার করলে কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রণ আস্তে আস্তে কমে যাবে সাথে সাথে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
- টি ট্রি অয়েল - এই তেলটি আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহার করলে দ্রুত ব্রণ দূর করা সম্ভব সাথে সাথে ত্বকও হবে মসৃণ।
- ল্যভেন্ডার অয়েল - এই অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমিয়ে সমস্যা দূর করতে সহায় ভূমিকা পালন করতে পারে।
- তুলসী পাতার রস - এই রস সংক্রমণের জায়গায় ব্যবহার করলে অতি দ্রুত ব্রণ দূর হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এই রস ত্বকের জন্য ত্বকের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।
- এলোভেরা - এলোভেরার রস করে রাতে শোয়ার সময় সংক্রমণের জায়গায় অর্থাৎ মুখে ব্রনের উপরে ব্যবহার করে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেললে ব্রণ দূর করা সম্ভব।
- মধু - মধুতে রয়েছে এলার্জি প্রতিরোধক, প্রদাহরোধী ও প্রতিরোধী উপাদান যা সংক্রমণকে দূরে রাখে এবং ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করে।
- শসার রস, চালের গুড়া ও মধু - শসার রস, চালের গুড়া ও মধুর মিশ্রণ ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। ইহা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং সক্রিয় ব্ল্যাকহেডস সরিয়ে লাবণ্যময় করে তুলে।
- গোলাপ জল ও দারুচিনি গুঁড়া - দারুচিনি গুঁড়া সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্টের মত করে মুখে ব্রণের স্থানে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হতে পারে।
- এলোভেরা জেল, হলুদ গুঁড়া এবং গোলাপ জল - এই তিনটি উপাদানের মিশনণকে ব্রণের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে তারপর ধুয়ে ফেললে ব্রণ অতি দ্রুত দূর হতে পারে।
- আপেল ও মধু - আপেলের রসের সাথে মধু মিশিয়ে ব্রণে আক্রান্ত স্থানে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে ফেলে ব্রণের সমস্যা দূর হতে পারে।
- কফি, মধু ও চিনি - এই তিনটি উপাদানের মিশ্রণটি ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস-এর ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মত কাজ করে। এছাড়াও এই মিশ্রণ ত্বকের মৃত কোষকে দূর করে লোমকূপ খুলে দিতে সাহায্য করে।
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ
- শসার রস - শসার রস ত্বকের সতেজতা ধরে রাখতে এবং হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। সেই সাথে সাথে শসার রস কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
- দারুচিনি ও লেবুর রস - দারুচিনি এবং লেবুর রসের মিশ্রণ এই সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলে।
- মুলতানি মাটি - মুলতানি মাটি ত্বকের ঝুলে পড়া রোধ করে এবং সাথে সাথে প্যাপিউলস এবং পুস্টুলেস দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- পেঁপে ও চালের গুড়া - পাকা পেঁপে বাটার সাথে চালের গুড়া মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণ সহজে দূর করা সম্ভব এবং পেঁপের রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- চালের গুড়া ও লেবুর রস - চালের গুড়া স্ক্রাবের মত কাজ করে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে, লেবুর রসের প্রদাহ প্রতিরোধি উপাদান ত্বকের প্রদাহ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।
- লেবুর রস - লেবুর রসে রয়েছে এক্সফোলিইয়েটিং উপাদান, যা লোমকূপকে পরিষ্কার করে লাল ফুসকুড়ি দূর করতে সহায়তা করে।
- টুথপেস্ট - টুথপেস্টে থাকা মেন্থল, পুদিনা, লেবু সহ প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণ সেই সাথে টুথপেস্ট ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে। এটির প্রধান কমাতেও কিছুটা ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ফ্রেশওয়াশ এবং বেকিং সোডা - যেকোনো সাধারণ রেগুলার ব্যবহৃত ফেসওয়াশ এর সাথে হাফ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- মাউথওয়াশ - মাউথওয়াশ থেকে প্রদাহ রোধী ফর্মুলা ও পুদিনার সংমিশ্রণ যা পিম্পলকে দূর করতে কার্যকরীভাবে সহায়তা করে থাকে।
- তরমুজের রস ও চালের গুড়া - চালের গুড়া আটকে থাকা লোমকূপ খুলে দিতে সাহায্য করে ফলে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে।
- আটা - আটা দিয়ে পিম্পল আর বাম্পস দূর করা সম্ভব। আটা শক্তিশালী এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস বের করে ত্বককে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।
- চন্দন কাঠের গুড়া, লেবুর রস ও গোলাপ জল - লেবুর রস সাধারণত লোমকূপে থাকা ময়লা দূর করে আর চন্দন কাঠের গুঁড়ো গোলাপ জল শক্ত দাগকে দূর করে।
- সংবেদনশীল ত্বকের জন্যঃ
- ডিমের সাদা অংশ - ডিমের সাদা অংশ শুধু চুলের জন্য নয় ব্রণ দূর করতে খুব দ্রুত কাজ করে। ইহা ত্বকের ঝুলে পড়া রোধ করে ত্বককে মসৃণ করে তোলে।
- বরফ - বরফ এমন একটি কার্যকারী উপাদান যা পিম্পলের দ্রুত সমাধান দিতে পারে। বিশেষত প্রদাহজনিত ক্ষেত্রে একটি সুতি কাপড়ের বরফ জড়িয়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ধরলে দ্রুত আরাম ও উপশম পাওয়া যায়। বরফ ত্বকের লালভাব এবং ফোলাভাব কমিয়ে দেয়।
- পুদিনা পাতা - পুদিনা পাতা ত্বকের প্রদাহ দূর করে এবং ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়। এই পুদিনা পাতার শীতলভাব নির্জীবতা দূর করে হাইড্রেটেড রাখে।
- মুলতানি মাটি ও নীলপাতা - মুলতানি মাটি নিমপাতার পেস্টের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
- কাঁচা হলুদ ও চন্দন কাঠের গুড়া - কাঁচা হলুদ বাটার সাথে সাথে চন্দন কাঠের গুঁড়া গোলাপ জল মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গার উপর প্রয়োগ করলে ব্রণ দূর হয়ে যায় এবং ত্বকে ফিরে আসে লাবণ্যতা।
- নিম পাতা ও চন্দন বাটা - এই মিশ্রণটি ফুসকুড়ি ও প্রদাহ দূর করে তত্ত্বে করবে প্রাণবন্ত ও কঠিন দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- শঙ্খচূর্ণ - এই উপাদানটি সাধারণত প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শঙ্খ থেকে শাখা তৈরি ছাড়াও ব্রণ দূর করতে এই উপাদানটি অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে। এর গুড়া পিম্পল দূর করে এবং সেই সাথে সাথে কঠিন দাগগুলো দূর করতে সহায়তা করে।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনাদের কাছে আমার একটি পরামর্শ
তা হচ্ছে মুখে ব্রণ হলে বেশি চিন্তিত হবেন না, কারণ চিন্তা এবং সে অনুযায়ী
বিভিন্ন প্রসাধনী ও ঔষধ সেবন করলে ব্রণের মাত্রা কমে না আস্তে আস্তে বেড়ে
যায়। আপনারা আগেই জেনেছেন ব্রণ সাধারণত বয়সন্ধিকালে সবচেয়ে বেশি হয়ে
থাকে।
এই সময়টাতে অনেকেই দেখা গেছে বর্ন উঠার সাথে সাথে তাদের চিন্তা এতটাই
বেড়ে যায় যে তারা কিভাবে সেটাকে কমানো যায় বা ব্রণ মুক্ত করা যায় তা
নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। যার কারণে মুখে একটি ব্রণ উঠার সাথে
সাথে তারা নখ অথবা অন্য কোন কিছুর সাহায্যে ব্রণটিকে মুখের ত্বক হতে
তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তুলে ফেলার চেষ্টা করে।
এর ফলে ব্রণের স্থানটির দাগ আরো স্পষ্ট হয় এবং সেই দাগটি মুখের ত্বক হতে
মুছতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়াও আপনারা যদি ব্রণ ওঠার শুরুতেই
ব্রান্ডটিকে খোঁচাখুঁচি শুরু করেন তাহলে তা আরো ছড়িয়ে যায়। যা আপনার
মুখের ত্বকের জন্য খুবই বিপদজনক। এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা
করেছি ছেলেদের মুখের ব্রণ উঠা থেকে শুরু করে দূর করা পর্যন্ত সবকিছু।
আশা করি আপনাদের এই পোস্টটি কাজে লাগবে। তবে ব্রণ উঠলে কখনোই দ্রুত ভালো
হওয়ার বা করার চেষ্টা করবেন না এতে সমস্যার সমাধানের থেকে সমস্যা আরো
বেড়ে যায়। সেজন্য আমার এই পোস্টে যেসব ভেষজ ও ঘরোয়া উপায় গুলো রয়েছে
সেগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই ভবিষ্যতে এই পোষ্টের কোন
আপডেট অথবা নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো।
সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন, নিজের ত্বকের যত্ন নিবেন। সবাইকে
ধন্যবাদ......
অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url