OrdinaryITPostAd

লিভার জন্ডিসের লক্ষণ বোঝার সহজ উপায় ও করণীয়

লিভার জন্ডিসের লক্ষণ বোঝার উপায় ও করণীয় ‍নিয়ে আপনি চিন্তিত হয়ে পরেছেন। কারণ জন্ডিস হচ্ছে একটি মরণব্যাধি। তবে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি না করে একটু সময় নিয়ে আমারে এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে হয়তো আপনি চিন্তা মুক্ত হতে পারবেন।

ছবি-১

জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে নিজেকে প্রথমে স্থির ও শান্ত করতে হবে। কারণ তাড়াহুড়া করলে অনেক সময় হিটের বিপরীত হতে পারে। জন্ডিস ধরা পড়ার সাথে সাথে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা এবং পরে ভালোভাবে স্থায়ী চিকিৎসা করা দরকার।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ জন্ডিসের লক্ষণ বোঝার সহজ উপায় ও করণীয়

জন্ডিস কি এবং কেন হয়

জন্ডিস হলো একটি অবস্থা যেখানে ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং অন্যান্য টিস্যু হলুদ হয়ে যায়। এটি বিলিরুবিন নামক পদার্থের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে ঘটে। বিলিরুবিন রক্তের একটি উপাদান, যা লোহিত রক্ত কণিকা (রেড ব্লাড সেল) ভেঙ্গে গেলে তৈরি হয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একসময় স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে। 

ইহা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় ফলে জন্ডিস দেখা দেয়। এখন আসুন জেনে নেওয়া যায় জন্ডিস হওয়ার কয়েকটি কারণ-

  • লিভারজনিত সমস্যাঃ
    • লিভারের সংক্রমণ হলে এটি বিলিরুবিন প্রসেস করতে পারে না।
    • লিভারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হলে এটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
    • লিভার পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করলে বিলিরুবিন জমা হতে থাকে।
  • বিলিয়ারি সিস্টেমের সমস্যাঃ
    • পিত্তনালীতে পাথর থাকলে এটি বিলরুবিনের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
    • পিত্তনালীতে ক্যান্সার হলে পিত্ত এবং বিলিরুবিন জমা হতে পারে।
  • হেমোলাইটিক সমস্যাঃ
    • লোহিত রক্তকণিকা দ্রুত ভেঙ্গে গেলে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
    • নবজাতকের লিভার পুরোপুরি পক্ষ না হওয়ার কারণে এটি সাধারণত হয়।
  • জেনেটিক সমস্যাঃ
    • একটি বংশগত ব্যাধি যা বিলিরুবিন প্রসেসিং-এ সমস্যা সৃষ্টি করে।
    • একটি বিরল বংশগত ব্যাধি যেখানে বিলিরুবিন প্রসেস করতে অসুবিধা হয়।

জন্ডিস এর লক্ষণ বোঝার সহজ উপায়

জন্ডিস এর লক্ষণ বেশ সহজেই চোখে পড়ে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা দেখে বোঝা যায় যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখার সাথে সাথে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরী। কারণ যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে সহজেই এর সমাধান করা সম্ভব। নিম্নে জন্ডিসের লক্ষণ বোঝার কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো-

  • ত্বক ও চোখে রং পরিবর্তনঃ
    • ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ।
    • প্রথমে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, তারপর ত্বক।
  • মূত্রের রং পরিবর্তনঃ
    • গাঢ় হলুদ বা লালচে মুত্র।
    • স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গাঢ় হওয়া।
  • মলের রং পরিবর্তনঃ
    • মলের রং হালকা বা সাদা হওয়া।
    • স্বাভাবিক ক্ষেত্রে মল দেখতে ফ্যাকাশে বা চকচকে হওয়া।
  • পেটের সমস্যাঃ
    • পেটের ওপরের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি।
    • পেট ফেঁপে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ
    • শরীরের শক্তি কমে যাওয়া।
    • সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা।
  • ক্ষুধামান্দা এবং ওজন কমে যাওয়াঃ
    • খেতে ইচ্ছে না করা।
    • আকস্মিক ওজন কমে যাওয়া।
  • বমি বা বমি বমি ভাব হওয়া।
  • সারা শরীরের চুলকানি হওয়া।

জন্ডিস এর লক্ষণ যুক্ত রোগীর খাবার তালিকা

জন্ডিস রোগীর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিভারের উপর চাপ কমাতে এবং সুস্থতা ত্বরান্বিত করতে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য নির্বাচন করা উচিত। নিচে বর্ণিত খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করে জন্ডিস রোগের সুস্থতা ত্বরান্বিত করা যায়। তবে সুন্নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা ও পরামর্শের জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রস্তাবিত খাবার তালিকা গুলো হলো-

  • পর্যাপ্ত পানি পানঃ
    • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
    • ফল এবং শাক সবজির রস যেমন নারিকেলের পানি গাজরে রস ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।
  • সহজে হজমযোগ্য খাবারঃ
    • ফল - আপেল, পাকা কলা, পেয়ারা, আঙ্গুর ইত্যাদি।
    • শাকসবজি - কুমড়া, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি এবং টমেটো।
    • ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি - কমলালেবু, পেপে, স্ট্রবেরি, ব্রকলি, গাজর ইত্যাদি।
    • সুগার ছাড়া লেবু পানি পান করা যেতে পারে।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ
    • কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন - সেদ্ধ ডিম, মুরগির সাদা মাংস, মাছ (গ্রিল বা সেদ্ধ)
    • ডাল - মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
    • প্রবায়োটিক দই বা সাধারণ দই।
  • কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারঃ
    • ব্রাউন রাইস বা লাল চাল।
    • পূর্ণ শস্যের রুটি বা আটার রুটি।
    • ওটমিল বা ওটস।
  • চর্বি এবং তেলঃ
    • স্বাস্থ্যকর চর্বি - অলিভ অয়েল, কেনলা অয়েল, বাদামের তেল ইত্যাদি।
    • বাদাম এবং বীজঃ অল্প পরিমানে বাদাম, চিয়া সিড, ফ্লাক্স সিড ইত্যাদি।
  • সীমিত করা উচিতঃ
    • তেলে ভাজা খাবার বা ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার।
    • অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়ানো উচিত।
    • প্রক্রিয়া যত খাবার যেমন চিপস, ফাস্টফুড ইত্যাদি।
    • অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়ানো উচিত।

এইসব খাবার প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ বারের ছোট ছোট মিল গ্রহণ করা উচিত। খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকমের পুষ্টিকর খাদ্য রাখতে হবে। খাদ্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সেদ্ধ, ভাপানো, গ্রিল বা বেক করা খাদ্য প্রস্তুতি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

জন্ডিসের লক্ষণ এ বিলিরুবিনের মাত্রা কত থাকে

জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ সাধারণত ০.১ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (মিগ্রা/ডি-ল) হয়। জন্ডিসের ধরন অনুযায়ী বিলিরুবিনের মাত্রা কম বেশি হতে পারে যেমন-

  • মৃদু জন্ডিসের ক্ষেত্রে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ ২ - ৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হতে পারে।
  • মাঝারি জন্ডিসের ক্ষেত্রে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ ৩ - ১২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হতে পারে।
  • তীব্র জন্ডিসের ক্ষেত্রে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ ১২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হতে পারে।

ছবি-২

তবে নবজাতকের ক্ষেত্রে, ধর্মের প্রথম কয়েকদিনে বিলিরুবিনের মাত্রা কিছুটা বেশি হতে পারে। সাধারণত ৫ - ৬ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। নবজাতকের তীব্র জন্ডিসের ক্ষেত্রে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ২০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিলিরুবিনের মাত্রা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসক চিকিৎসার পরিকল্পনা করেন। যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়, তবে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

জন্ডিসের লক্ষণ এ ডিম খাওয়া যায় কিনা  জানুন

জন্ডিস হলে ডিম খাওয়া যাবে কিনা তা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা এবং ডাক্তারের পরামর্শের উপর। ডিম একটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য যা প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি এবং সেলেনিয়াম থাকে যা স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সাধারণভাবে, ডিম খাওয়ার সময় যে সকল বিষয় মাথায় রাখা উচিত তা  হলো-

  • প্রোটিনের উৎসঃ ডিম একটি ভালো প্রোটিনের উৎস, যা শরীরের কোষের মেরামত এবং পুনর্গঠনে সাহায্য করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য জন্ডিস রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
  • কম চর্বিযুক্ত খাবারঃ ডিমের কুসুমে বেশি পরিমাণ চর্বি থাকে, যা লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডিমের সাদা অংশ (এগ হোয়াইট) খাওয়া যেতে পারে, যা কম চর্বিযুক্ত এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ।
  • ভাজা ও মসলাযুক্ত ডিমঃ তেলে ভাজা বা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ডিম এড়ানো উচিত কারণ এগুলো লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সেদ্ধ বা পোঁচ ডিম ভালো বিকল্প হতে পারে।

সেদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে ভালো কারণ এটি সহজে হজম যোগ্য এবং কম চর্বিযুক্ত। খুব সামান্য তেল বা পানি ব্যবহার করে পোঁচ করা ডিম খেতে পারেন। যদিও ডিম সাধারণত জন্ডিস রোগীদের জন্য নিরাপদ, তবুও রোগীর নির্দিষ্ট অবস্থা বিবেচনা করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বোত্তম।

জন্ডিসের লক্ষণ এ ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা জানুন

জন্ডিস হলে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে তা নির্ভর করে জন্ডিসের কারণ, রোগের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর। জন্ডিস নিজে একটি রোগ নয়, বরং এটি অন্যান্য সমস্যার একটি লক্ষ্যণ যেমন লিভারের সমস্যা, পিত্তনালী ব্লকে, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। সেজন্য সঠিক ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

  • হেপাটাইটিসের জন্য ওষুধঃ যদি জন্ডিসের কারণ হেপাটাইটিস হয়, তবে চিকিৎসক নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিতে পারেন-
    • হেপাটাইটিস বি - টেনোফোভির (Tenofovir), এনটেকাভির (Entecavir)।
    • হেপাটাইটিস সি - সোফোসবুভির (Sofosbuvir), দাক্লাটাসভির (Daclatasvir)।
  • লিভার সুরক্ষার জন্য ওষুধঃ
    • লিভার সাপোর্টিং ওষুধ - উদাহরণস্বরূপ, সিলিমারিন (Silymarin), যা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
    • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট - গ্লুটাথায়ন (Glutathione), ভিটামিন ই (Vitamin E)
  • প্রদাহ কমানোর জন্য ওষুধঃ
    • স্টেরয়েড - কিছু ক্ষেত্রে যেমন অটোইমিউন হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে, চিকিৎসক স্টেরয়েড ঔষধ দিতে পারেন।
  • পিত্তনালীর ব্লকেজের জন্যঃ
    • প্রসারণকারি ওষুধ - পিত্তোনালের ব্লকেজের জন্য কখনও কখনও প্রসারণকারি ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে, তবে এটি সাধারণত শল্যচিকিৎসা বা এন্ডোসকপি দ্বারা পরিচালিত হয়।
  • ব্যথা এবং অস্বস্তির জন্যঃ
    • প্যারাসিটামল - সাধারণ ব্যথা এবং জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তবে মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কারণ অতিরিক্ত প্যারাসিটামল লিভার জন্ডিসের লক্ষণ এর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অন্যান্য যত্নঃ
    • হাইড্রেশন এবং পুষ্টি - স্যালাইন এবং ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) পান করতে হতে পারে যদি ডিহাইড্রেশন হয়।
    • শরীরের পুষ্টি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট হতে পারে।

নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন গুরুতর হয় না এবং স্বাভাবিকভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। সেক্ষেত্রে মায়ের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে নবজাতকের জন্ডিস কমাতে এবং শিশু সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যায় নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করণীয় বিষয়গুলো-

  • প্রচুর দুধ পান করানোঃ
    • নবজাতককে বারবার দুধ পান করানো উচিত। এতে শিশুর শরীর থেকে বিলিরুবিন দ্রুত বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
    • নবজাতকের দুধ পান করানোর সময়সূচী বজায় রাখা উচিত (প্রতি ২ - ৩ ঘণ্টা অন্তর)
  • সূর্যের আলোঃ
    • নবজাতককে প্রতিদিন কয়েক মিনিট সূর্যের আলোতে রাখা যেতে পারে। সূর্যের আলো বিলিরুবিনকে ভাঙতে সাহায্য করে।
    • সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে হালকা ছায়াময় জায়গায় শিশুকে রাখা যেতে পারে। বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে কিছু সময় সূর্যের আলো পেলে ভালো।
  • শিশুর প্রস্রাব এবং মলের পরিমাণে নজর রাখাঃ
    • নবজাতক পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রসব এবং মল করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
    • শিশুর মল এবং প্রসবের রং এবং পরিমাণে কোন পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • ফটোথেরাপিঃ 
    • যদি বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হয়, তবে চিকিৎসক ফটোথেরাপি পরামর্শ দিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে শিশুকে বিশেষ ধরনের আলোতে রাখা হয়, যা বিলিরুবিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং এই কাজে মায়ের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য।
  • মায়ের খাদ্যাভাসঃ 
    • মায়ের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস নিশ্চিত করা জরুরি, যা বুকের দুধের মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।

জন্ডিস এর লক্ষণ দেখা দিলে কোন সমস্যা হয় জানুন

জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে এসব সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি অথবা একাধিক দেখা দিতে পারে। লক্ষণ দেখা যায় সাথে সাথে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে জন্ডিসের কারণে সৃষ্ট সাধারণ সমস্যাগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো-

  • ত্বক এবং চোখের রং পরিবর্তনঃ
    • ত্বক হলুদ হয়ে যায় যা সহজে চোখে পড়ে।
    • চোখের সাদা অংশ (স্কৃলেরা) হলুদ হয়ে যায়।
  • প্রস্রাব এবং মলের রং পরিবর্তনঃ
    • প্রসাবের রং গাঢ় হলুদ বা লালচে হয়ে যায়।
    • মলের রং হালকা বা সাদা হয়ে যায়।
  • শারীরিক অস্বস্তিঃ
    • পেটের ওপরের অংশে বা ডান দিকে ব্যথা হতে পারে।
    • পেট খুলে যেতে পারে।
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতাঃ
    • সবসময় ক্লান্তি অনুভূত হয়।
    • দৈনন্দিন কাজে-কর্মে দুর্বলতা বোধ হয়।
  • ক্ষুধামন্দা এবং ওজন কমে যাওয়াঃ
    • খেতে ইচ্ছা করে না।
    • ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে।
  • বমি এবং বমি বমি ভাবঃ
    • বারবার বমি হতে পারে।
    • সবসময় বমি বমি ভাব থাকতে পারে।
  • স্নায়বিক সমস্যাঃ
    • সহজে বিরক্তি আসতে পারে।
    • মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হতে পারে।
  • চুলকানিঃ
    • সারা শরীরে চুলকানি হতে পারে, যা খুবই অস্বস্তিকর।
  • তীব্র জন্ডিসের ক্ষেত্রেঃ
    • দীর্ঘমেয়াদী এবং তীব্র জন্ডিসে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে, যেমনঃ এনসেফালোপ্যাথি।
    • লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা হতে পারে।

জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে কিনা জানুন

জন্ডিস হলে স্যালাইন খাওয়া যাবে কিনা তা নির্ভর করে রোগীর নির্দিষ্ট অবস্থায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর। সাধারণত স্যালাইন বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) ব্যবহার করা যেতে পারে যদি রোগী পানিশূন্যতা সমস্যায় ভুগে থাকে। স্যালাইন খাইলে যেসব সুবিধাগুলো পাওয়া যায় তা হলো-

পানি শূন্যতা প্রতিরোধঃ জন্ডিসের কারণে যদি রোগীর বমি বা ডায়রিয়া হয়, তাহলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে স্যালাইন কার্যকর হতে পারে।

ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যঃ স্যালাইন শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

জন্ডিস হলে লেবু খাওয়া যাবে কিনা জানুন

জন্ডিস হলে লেবু খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং কিছু ক্ষেত্রে উপকারীও হতে পারে। লেবু ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লেবু খাওয়া উচিত। লেবু খাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত-

  • লেবুর উপকারিতাঃ
    • ডিটক্সিফাইং প্রভাব - লেবু লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে, যা বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
    • ভিটামিন সি - লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
    • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে - লেবু পানি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
    • হাইড্রেশন - লেবু পানি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক।
  • লেবু খাওয়ার পদ্ধতিঃ
    • এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক বা একটি পুরো লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এটি সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
    • তাজা লেবুর রস পান করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার না করা উত্তম।
  • সতর্কতাঃ
    • যাদের পাকস্থলী সমস্যা বা অম্লতা রয়েছে, তাদের লেবু খাওয়ার পরিমাণ এবং পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
    • যে কোন নতুন খাদ্যাভাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষত যদি আপনার লিভারের সমস্যা গুরুতর হয়।

জন্ডিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

জন্ডিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা শরীরকে কিছুটা উপশম দিতে পারে, তবে এটি মূল সমস্যার সমাধান নয়। জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য বাজারে অনেক ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়, তবে আপনি ইচ্ছা করলে ওষুধের পাশাপাশি জন্ডিসের ঘরোয়ার প্রতিকারও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এখন আমরা জেনে নেই কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসা-

  • অড়হড় পাতাঃ
    • অড়হড় পাতা পিষে এর রস বের করে প্রতিদিন ৬০ মিলিলিটার রস খেলে জন্ডিস সেরে যায়।
    • এর মধ্যে লেবু মিশিয়ে খাওয়াও পুষ্টিকর এবং খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
  • করলার পাতাঃ
    • প্রায় ৭ - ১০টি পাতা নিন এবং এটি এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
    • আধা লিটার পানিতে ১০ - ১৫টি ধনেপাতা সিদ্ধ করুন।
    • ইতিমধ্যে প্রস্তুত ক্লাথ সঙ্গে এটি মিশ্রিত করুন।
    • জন্ডিসের কার্যকার চিকিৎসার জন্য এটি দিনে অন্তত তিনবার পান করুন
  • মূলাপাতাঃ
    • মুলার কয়েকটি পাতা নিন এবং ছেঁকে এর রস বের করুন।
    • প্রতিদিন প্রায় আধালিটার নির্যাসিত রস পান করুন।
    • প্রায় ১০ দিনের মধ্যে রোগী রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
  • পেঁপে পাতাঃ
    • পেঁপে পাতার পেস্টে একটা চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
    • এটি প্রায় এক বা দুই সপ্তাহ নিয়মিত খান।
    • এটি জন্ডিসের জন্য খুব কার্যকরী একটি ঘরোয়া প্রতিকার।
  • তুলসি পাতাঃ
    • ১০ - ১৫টি তুলসীপাতা নিন এবং এটি থেকে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
    • এতে আধা গ্লাস সদ্য প্রস্তুত মূল্য পাতার রস যোগ করুন।
    • ভালো ফলাফলের জন্য প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এই প্রস্তুতিটি পান করুন।
  • অন্যান্য ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
    • নারিকেলের পানি - প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে এবং লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে।
    • আখের রস - জন্ডিস রোগের ক্ষেত্রে এই রস সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়।
    • পান পাতার রস - পান পাতার রস পান করা দেশের কিছু অঞ্চলে প্রচলিত আছে।

লিভার জন্ডিস এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

লিভার জন্ডিস এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে আমি আপনাদেরকে একটি কথাই বলতে চাই জন্ডিসকে ভয় না পেয়ে ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করুন। জন্ডিস একটি সাধারণ লক্ষণ যা লিভার, পিত্তনালী ও রক্তের বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। এর ফলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। নবজাতকের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ছবি-৩

জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে হলুদ ত্বক ও চোখ, গাঢ় প্রসাব, ফ্যাকাশে মল, পেটের ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব এবং চুলকানি। জন্ডিসের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ করে জন দেশের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এই পোস্টে আমি আপনাদের জন্ডিস এর সকল বিষয় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের কাজে আসবে। আপনাদের মাঝে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে ভবিষ্যতে উপস্থিত হব। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।


আমার পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ......

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url