OrdinaryITPostAd

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ১০ উপায়

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়গুলো জানার জন্য আপনি হয়ত অস্থির হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছেন। তাহলে আপনার ছুটাছুটির দিন শেষ করতে আমি আপনাদের মাঝে এই পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। হতে পারে এই পোস্টটি পড়া শেষে আপনি কিছুনা চিন্তা মুক্ত হতে পারেন।

ছবি-১

তবে এর জন্য আপনাকে একটু গুরুত্বের সহকারে আমার এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এদিক ওদিক ছুটাছুটি না করে অনলাইনে ঢুকে আমার এই পোস্টটি পড়ুন।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ১০ উপায়

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ইতিহাস

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ইতিহাস অনেক পুরাতন। অনেক দিন আগে থেকেই এই অসুখের সবচেয়ে পুরনো অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও ১৮ শতাব্দীর দিকে এই অসুখের পরিচিতি লাভ করে। ইহা একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। ইহা সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা প্রধানত ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয় যার সাধারণত চারটি ধরন রয়েছে সেগুলো হলো- 

  • ডিনভি-১
  • ডিনভি-২
  • ডিনভি-৩
  • ডিনভি-৪

একবার একটি ধরন দিয়ে অসুখ হলে আনুমানিক দুই বছর এ ধরনের বিপরীতে শরীরের প্রতিরোধ কাজ করে। তবে এর মধ্যে ডেঙ্গুর অন্য কোনো ধরণ দিয়ে আবারও জ্বর হলে তখন অসুখের মাত্রাটি বেড়ে যায় এবং ডেঙ্গু শক সেন্ড্রোম হতে পারে যা মারাত্মক। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুটি প্রকারভেদে বিভক্ত-

  • ডেঙ্গু ফিভারঃ যা সাধারণত কম গুরুতর এবং উপসর্গের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকে।
  • ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (ডিএইচএফঃ) যা রক্তপাত এবং প্লাজমা লিকেজের কারণে গুরুতর হতে পারে। এটি শখ এবং মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করতে পারে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের এডিস মোশার জীবনচক্র

ডেঙ্গু জ্বর লক্ষনের মূল বাহক এডিস মোশার জীবনচক্র প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত তথা ডিম, লার্ভা, পিউপা এবং প্রাপ্তবয়স্ক। প্রতিটি পর্যায়ের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে। এর অগ্রগতির সময়কাল পরিবেশগত অবস্থা, বিশেষত তাপমাত্রা ও জলবায়ু পণ নির্ভর করে। এখন পর্যায়ক্রম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক,

ডিমঃ স্ত্রী এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন ফুলের টব, পুরনো টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র ইত্যাদি। ডিম হতে বাচ্চা বাহির হতে বেশী সময়ের প্রয়োজন হয় না। তবে শুকনো অবস্থায় ডিমগুলো প্রায় এক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং পানি পেলে তৎক্ষণাত ফুটতে শুরু করে।

লার্ভঃ লার্ভগুলো ছোট ছোট কৃমির মতো দেখতে হয়ে থাকে এবং এদের শ্বাস নেওয়ার জন্য পৃষ্ঠে আসতে হয়। লার্ভা সাধারণত খাবার খেতে থাকে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। লার্ভার এই পর্যায়ে সাধারণত চারটি ইনস্টার থাকে, যেখানে তারা চারবার খোলস ছাড়ে এবং প্রতিবারই বড় হয়। এই পর্যায়টি সাধারণত ৭-১০ দিন স্থায়ী হয়। তবে পরিবেশগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সময়সীমা পরিবর্তিত হতে পারে।

ছবি-২

পিউপাঃ লার্ভা পর্যায় থেকে পিউপা পর্যায়ে প্রবেশ করে। এই পর্যায়ে পিউপা পানির নিচে থাকে এবং এই সময়ের মধ্যে কোন খাবার খায় না। এটি একটি স্থির পর্যায় যেখানে মশার শরীরের বিভিন্ন অংশ গঠিত হয়। এই পর্যায়টি সাধারণত ২-৩ স্থায়ী থাকে।

পূর্ণাঙ্গ মশাঃ পিউপা থেকে পূর্ণাঙ্গ এডিশ মশা বের হয়। পূর্ণাঙ্গ মশা প্রথম প্রেস সামনে বিশ্রাম নেয় এবং ডানা শুকায়। তারপর এটি উড়তে সক্ষম হয়। স্ত্রী মোচা রক্ত পান করে যা তাদের ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয়। পুরুষ মশার সাধারণত ফুলের রস খেয়ে বেঁচে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কয়েকটি

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো সাধারণত মশার কামড়ের চার থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। সাধারণত তিনটি ধাপে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এখন আসুন জেনে নেওয়া যায় উল্লেখিত ধাপগুলো-

প্রথম ধাপ (২ - ৭দিন)

  • উচ্চ জ্বর (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস/১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
  • তীব্র মাথার যন্ত্রনা
  • চোখের পিছনে ব্যথা অনুভূতি 
  • সমস্ত শরীর ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • মাথা ঘোরা
  • ত্বকের বিভিন্ন স্থানে লালচে দাগ দেখা দেওয়া

দ্বিতীয় ধাপ (২-৭ দিন ক্রিটিকাল)

  • রোগীর প্রেসার কমে যেতে পারে
  • প্লাটিলেট অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।

শেষ ধাপ (সেরে উঠা)

  • শরীর চুলকানো
  • দুর্বলতা
  •  অরুচি ইত্যাদি।

কত দিন থাকে ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণে

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ভোতে জ্বর হওয়া থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে প্রায় ২-৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ক্লান্তি আরো কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে স্থায়ী হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল রোগের স্বাস্থ্যের অবস্থা ও চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে। 

সঠিক চিকিৎসা ও বিশ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে দূরত্ব সেরে ওঠা সম্ভব। ডেঙ্গু জ্বরের বিভিন্ন ধাপ এবং তাদের সময়কাল নিম্নে দেওয়া হলঃ

  • ইনকিউবেশন পিরিয়ডঃ এডিস মশার কামড়ের পর ডেঙ্গু ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিতে ৪-১০ দিন সময় লাগে।
  • ফেব্রাইল পিরিয়ডঃ প্রথম ২-৭ দিন উচ্চ জ্বর থাকে যা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই পর্যায়ে অন্য উপসর্গ যেমন তীব্র মাথা ব্যাথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ফুসকুড়ি হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
  • ক্রিটিক্যাল পিরিয়ডঃ ফেব্রাইল পিরিয়ডের পর ১-২ দিনের মধ্যে জ্বর কমে যেতে পারে কিন্তু এই সময় রক্তক্ষরণ এবং অন্যান্য প্লাজমার লিকেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই পর্যায়ে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে যা জীবন হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
  • রিকভারি পিরিয়ডঃ ক্রিটিক্যাল পিরিয়ডের পর পুনরুদ্ধার শুরু হয় যা সাধারণত ২-৩ দিন স্থায়ী হয়। এই সময়ে রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার করতে কি কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার করতে হলে উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইহা শরীরকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার খাওয়ানো যেতে পারে-

তরল জাতীয় পদার্থ

  • পানিঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইহা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে।
  • ফলের রসঃ বিশেষ করে পেঁপে, মালটা এবং কমলার রস পান করা যেতে পারে। এগুলো ভিটামিন সি সরবরাহ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • নারিকেলের পানিঃ ইহা শরীরের হাইড্রেটেড রাখতে সহায়ক এবং প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে।
  • সুপঃ চিকেন সুপ, সবজি সুপ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো পুষ্টি এবং তরল সরবরাহ কর

ফল এবং সবজি

  • পেঁপে পাতার রসঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • তাজা ফলঃ আপেল পেয়ারা কমলা মালটা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে যা ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ করে।
  • সবুজ সবজিঃ পালং শাক বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি খেতে পারে যা শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে।

প্রোটিন

  • লীম প্রোটিনঃ মুরগির মাংস, ডিম, মাছ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে যা প্রোটিন সরবরাহ করে এবং শরীরের পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
  • ডালঃ বিভিন্ন ধরনের ডাল খাওয়া যেতে পারে যা প্রোটিন এবং ফাইবার সরবরাহ করে।

অন্যান্য

  • গ্লুকোজের পানিঃ গ্লুকোজের পানি পান করা যেতে পারে যা তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে।
  • মধুঃ মধুতে প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে এবং এটি শক্তি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার করতে হলে কি গোসল করা যাবে

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার করতে হলে কি গোসল করা যাবে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গোসল করলে শরীর কিছুটা আরাম পেতে পারে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরের অবস্থা এবং লক্ষণগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে গোসল করতে হবে। যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা এখন জেনে নেওয়া যাক-

  • জ্বর নিয়ন্ত্রণে সাহায্যঃ হালকা গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • পরিষ্কারতা বজায় রাখাঃ ডেঙ্গু জ্বরের সময় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং গোসল শরীরের ময়লা ও জীবানু দূর করতে সাহায্য করে।
  • শরীরের ক্লান্তিঃ গোসল করার সময় ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করলে বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রয়োজনে সহায়তার জন্য কারো সাথে থাকতে হবে।
  • সাবধানতাঃ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ এদের শরীরের তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিতে পারে এবং শীত লাগার সম্ভাবনা থাকে।
  • স্বাস্থ্যগত অবস্থাঃ যদি খুবই দুর্বল বোধ করেন বা কোনো গুরুতর উপসর্গ থাকে তবে গোসল এড়িয়ে চলা ভালো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এ করনীয়

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত এবং সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে কি কি করণীয় তা সম্পর্কে আমরা এখন দেখে নেই-

সাধারণ পদক্ষেপঃ

  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • প্রচুর পানি, ইলেকট্রোলাইটিক সমাধান এবং ফলের রস পান করুন যাতে শরীররে পানি শূন্যতা রোধ করা যায় ।

গুরুতর লক্ষণের ক্ষেত্রে করণীয়ঃ

  • গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল কেন্দ্রে নিয়ে যান।
  • রক্তচাপ, শ্বাস প্রশ্বাস এবং রক্তক্ষরণের লক্ষণ গুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে আইভি ফলুইড দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ছোঁয়াচে রোগ নয় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বর সরাসরি ছোঁয়াচে রোগ নয়। একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সরাসরি ছড়ায় না। ডেঞ্জার মূলত মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু জ্বর একজন সংক্রমিত ব্যক্তির শারীরিক সংস্পর্শে, যেমন ছোঁয়া, চুম্বন বা আলিঙ্গনের মাধ্যমে অন্য কারো মধ্যে ছড়ায় না। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমেও ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় না। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার বা পানীয় অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি খেলে বা পান করলেও ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায় না। তবে কিছু কিছু বিষয় বা পরিস্থিতিতে আছে যার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারে সেগুলো হলো-

  • সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত বা রক্তের পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।
  • সংক্রমিত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  • সংক্রমিত মা থেকে গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস স্থানান্তর হতে পারে যদিও এটি খুবই বিরল।

শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং এজন্য কিছু সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। শিশুরা অনেক সময় বলতে পারে না তাই আপনাকে তার চলাফেরা ও বিভিন্ন গতিবিধি দেখে বুঝে নিতে হবে। এখন জেনে নেওয়া যাক শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণঃ

  • অবিরাম পেট ব্যথা বিশেষ করে নাভির চারপাশে তীব্র ব্যথা।
  • বারবার বমি হওয়া যা খাবার ও পানি গ্রহণের বাধা সৃষ্টি করে।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার ফলে বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়।
  • নাক, মাড়ি, মুখ বা মলত্যাগের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পেটে বা মুখে ফোলা দেখা যায়।
  • অত্যন্ত দুর্বলতা, অবসাদ বা চেতনা হারানো।
  • ত্বক শীতল ও আদ্রতা হয়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার করতে রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার স্থান

অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো ডেঙ্গুতে বেশির ভাগ রোগীর চিকিৎসা বাড়ি থেকে সম্ভব হয়ে থাকে। কিন্তু বাড়িতে পর্যবেক্ষণ সম্ভব না হলে এবং কিছু বিপদজনক লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। এখন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে নিতে হবে-

  • প্রচন্ড পেট ব্যথা হওয়া
  • ক্রমাগত বমি হওয়া
  • মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত
  • প্রসাবে এবং মলের সঙ্গে রক্তপাত
  • দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
  • ক্লান্তি
  • বিরক্তি এবং অস্থিরতা
  • অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি।

কোন ওয়ারনিং না থাকা সত্তেও যেসব রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত-

  • প্রেগন্যান্ট মহিলা
  • যাদের ডায়াবেটিক্স, হার্টের অসুখ, রক্তের অসুখ এবং কিডনির অসুখ আছে
  • হাসপাতালে সেবা থেকে অনেক দূরে অবস্থান
  • যাদের বাড়িতে পর্যবেক্ষণ কঠিন
  • অল্প বয়স্ক ও বৃদ্ধ মানুষ ইত্যাদি

মুমূর্ষ অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত-

  • মুমূর্ষ অবস্থায় যে বিষয়গুলো মাথায় রেখে চিকিৎসা করতে হয় তা হলো হেমাটোক্রিট, প্লাটিলেট, বিভিন্ন অঙ্গের সুরক্ষা (কিডনি, লিভার, হার্ট ইত্যাদি)। রোগীর ব্লাড প্রেসার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধরে রাখা চিকিৎসার মূল স্তম্ভ। প্রেসারে ধরে রাখতে স্যালাইন এর পাশাপাশি, কলয়েড এবং অনেক সময় তাজা রক্ত প্রয়োজন হয়।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে এবং প্রায়ই লক্ষণ গুলি কম স্পষ্ট হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর দ্রুত গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ চিনতে পারা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণঃ

  • উচ্চ জ্বর- ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে এবং ২-৭ দিন স্থায়ী হতে পারে।
  • বিশেষ করে মাথা পেশী এবং জয়েন্টে ব্যাথা হতে পারে
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব এবং বমি করা
  • ক্ষুধামন্দা
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে যা জ্বরের ২-৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়
  • ক্লান্তি ও অবসাদ

গুরুতর লক্ষণঃ

  • তীব্র ও অভিরাম পেটব্যথা
  • অবিরাম বমি
  • নাক, মুখ, মাড়ি ও মলত্যাগের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হতে পারে
  • শ্বাসকষ্ট
  • ফোলা ও পানি শূন্যতা
  • চেতনা হারানো

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এ কখন বুঝবেন ঝঁকিমুক্ত

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখার পর সাধারণত দুই সপ্তাহ পর রোগী আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠতে থাকে। তবুও প্লাটলেট একবার পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এছাড়াও যে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে রোগীতে এখন ঝুঁকিমুক্ত তা নিচে দেওয়া হলো-

  • যখন রোগীর দুই দিন যাবত জ্বর থাকে না
  • রোগীর প্রেসার যখন ভালো থাকে স্যালাইন ছাড়াই
  • মুখের রুচি যখন ভালো হয়ে যায়
  • রক্তক্ষরণ যখন থাকে না
  • প্লাটলেট এর উপরে এবং বেড়ে যায়

দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো প্রায়শই প্রথম বারের তুলনায় বেশি গুরুতরও হতে পারে। প্রথমবার এক প্রকার আছে আক্রান্ত হলে শরীর সেই প্রকারের ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরি হয়। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরের যা যা লক্ষণ দেখা দিতে পারে-

সাধারণ লক্ষণঃ উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথা ব্যাথা, চোখের পিছনে ব্যথা, মাংসপেশী ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, ত্বকে ফুসকুড়ি, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গুরুতর লক্ষণঃ তীব্র পেট ব্যথা, অবিরাম বমি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, প্লাজমা লিকেজ (শরীরের বিভিন্ন অংশে তরল জমা হওয়া, যেমন পেটে বা ফুসফুসে), শ্বাসকষ্ট, ফোলা পানি শূন্যতা, চেতনা হারানো বা সংজ্ঞাহীন হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার উপায় নিয়ে লেখকের মন্তব্য

ডেঙ্গু একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। শহর অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই আপনি যদি শহরে থাকেন তাহলে আপনাকে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে।

ছবি-৩

ডেঙ্গুর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকায় এর চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা মতভেদ দেখা দেয়। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়া সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত পরীক্ষা করে নিতে হবে। ব্যথানাশক ঔষধ, অ্যান্টিবায়োটিক, রক্ত বাড়ানোর ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। 

তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। আশা করি পোস্টটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে এবং ভবিষ্যতে অনেক উপকারে আসবে। তাহলে আজ এ পর্যন্তই ভবিষ্যতে হয়তো অন্য কোন পোস্ট আপনাদের মাঝে উপস্থিত হব। সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ ভালো থাকবে।

ধন্যবাদ সবাই........

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url