OrdinaryITPostAd

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম-উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আমি পোস্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়বেন তাহলে আমার বিশ্বাস আপনি চিন্তা মুক্ত হবেন। সেঞ্চুরি

ছবি-১

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অনেক গুনাগুন। ইহা শরীরের কোলেস্টরেল, ওজন রক্তের সরকারের পরিমাণ কমাতে ও অন্যান্য আরো সমস্যার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে নিয়ম এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম-উপারিত ও অপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার কি জানুন

আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেল থেকে তৈরি করা এক প্রকার ভিনেগার। এটি আপেল পিষে এবং আপেলের রসকে ফরমেন্টেশনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেলের মধ্যে থাকা চিনি প্রথমে অ্যালকোহলে এবং পরে ভিনেগারে পরিণত করা হয়। আপেল সিডার ভিনেগারে প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো এসিটিক অ্যাসিড, যা টক স্বাদ যুক্ত হয়ে থাকে।

আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতায়, প্রাকৃতিক রূপচর্চায়, বাড়ির পরিষ্কার, রান্না বান্না ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আপনি যদি আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন, তবে সঠিক উপায়ে এবং পরিমাপের ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে দাঁতা ও পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার কিছু প্রচলিত নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে, যা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তবে যেকোন নতুন খাদ্য বা পানীয় অভ্যাস শুরু করার আগে বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সমস্যা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো-

  • পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করাঃ
    • এক গ্লাস পানিতে ১ - ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
    • এই মিশ্রণটি দিনে ১ - ২ বার খাওয়া যেতে পারে, সাধারণত খাবারের আগে।
  • গরম পানির সঙ্গে মিশিয়েঃ
    • এক কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে, সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
    • এত সকালে খালি পেটে পান করা স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়।
  • সালাদ ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহারঃ
    • সালাদের উপরে ড্রেসিং হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।
  • স্মুদি বা জুসে মিশিয়েঃ
    • স্মুদি বা তাজা ফলের জুসে ১ চা চামচ চাপের সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার ১৫ স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করলে এর দ্বারা প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে সঠিক পরিমাণ এবং ব্যবহারের পদ্ধতির যেন অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। এখন জেনে নেওয়া যাক উল্লেখযোগ্য ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-

  • হজম সহায়ক - আপেল সিডার ভিনেগার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে, বদহজম গ্যাস সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণ - এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য - এটি ক্ষুধা কমাতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি - আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টরেল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের জন্য ভালো।
  • ত্বকের যত্ন - এটি ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য কর এবং অ্যাকনে, দাগ বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • দাঁতের সাদা করণ - আপেরসিডার ভিনেগার দিয়ে গড়গড়া করলে দাঁতের দাগ দূর হয় এবং মাড়ি মজবুত হয়।
  • গলার ব্যথা কমানো - এটি গলার ব্যথা ও ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ডিটক্সিফিকেশন - লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
  • পিএইচ স্তর ভারসাম্য বজায় রাখা - শরীরের পিএইচ স্তর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • শক্তি বৃদ্ধি - এটি ক্লান্তি কমাতে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • ইনফেকশন প্রতিরোধ - আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • চুলের যত্নে - চুলের খুশকি দূর করতে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি - এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ - আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • এলার্জি উপশম - বিভিন্ন এলার্জির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার এর দাম কত

আপেল সিডার ভিনেগার এর দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড, পরিমাণ এবং দোকানের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ৩৫০ মিলি থেকে ৫০০ মিলি বোতলের দাম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে দামে তারতম হতে পারে, তাই নির্দিষ্ট দোকান বা অনলাইন শপে যাচাই করে কেনা উচিত।

বিভিন্ন অনলাইন শপ যেমন দারাজ, চাল-ডাল এবং আজকের ডিল-এ দাম ও প্রাপ্যতা দেখে নিতে পারেন। এসব অনলাইন শপে অনেক সময় বিভিন্ন অফার চালু থাকে। সেক্ষেত্রে আপনারা এসব অনলাইন সব থেকে দেখে যাচাই করে নিলে অনেক লাভবান হতে পারেন।  আসুন জেনে নেওয়া যাক জনপ্রিয় ব্যান্ডের কয়েকটি আপেল সিডার ভিনেগারের দাম-

  • Bragg Apple Cider Vinegar (500ml): প্রায় ৭০০-৮০০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)
  • American Garden Apple Cider Vinegar (473ml): প্রায় ৩০০-৪০০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)
  • Heinz Apple Cider Vinegar (473ml): প্রায় ৩০০-৪৫০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)
  • Dynamic Health Apple Cider Vinegar (473ml): প্রায় ৬০০-৭০০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)
  • Detox Apple Cider Vinegar (500ml): প্রায় ১৩০০-১৪০০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)
  • Karkuma Apple Cider Vinegar (480ml): প্রায় ৬০০-৭০০টাকা। (২০২৪ অনুযায়ী)

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার সহায়ক হতে পারে। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সহায়ক উপাদান হতে পারে, তবে এটি একমাত্র সমাধান নয়।

ছবি-২

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করা প্রয়োজন। সঠিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাস বজায় রেখে ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সফলতা অর্জন করা সম্ভব। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার কিছু নির্দেশনা এখানে দেওয়া হলো-

  • সঠিক পরিমাণঃ
    • প্রতিদিন ১ - ২ টেবিল চামচ (১৫ - ৩০ মিলিলিটার) আপেল সিডার ভিনেগার পান করতে পারেন।
    • প্রথমে কম পরিমাণে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে পারেন।
  • পানি দিয়ে মিশিয়ে পানঃ
    • ১ - ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ১ গ্লাস (প্রায় ৮ আউন্স বা ২৫০ মিলিলিটার) পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
    • এটি সরাসরি পান করা এড়িয়ে চলুন, কারণ আপেল সিডার ভিনেগার এসিডিক হওয়ার কারণে এটি দাঁতের এনামেল ক্ষতি করতে পারে এবং পাকস্থলী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • খাওয়ার সময়ঃ
    • খাবারের আগে বা খাওয়ার সময় আপনার সিডার ভিনেগার পান করা যেতে পারে।
    • সকালের নাস্তার আগে বা রাতের খাবারের আগে পান করা ভালো।
  • অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলুনঃ
    • অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার সেবন এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি পাকস্থলীর এসিডিটি বৃদ্ধি করতে পারে এবং শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
  • কিছু পরামর্শঃ
    • আপনার ভিনেগারের স্বাদ উন্নত করতে মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
    • আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি না খেয়ে সব সময় পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।
    • আপেল সিডার ভিনেগার পান করার পরে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন বা একটি খড় দিয়ে পান করুন যাতে এটি দাঁতের সংস্পর্শে কম আসে।

আপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়

আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে, তবে কতদিন ধরে এটি খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া এবং আপনার স্বাস্থ্যের উপর। সাধারণত, দীর্ঘমেয়াদে আপেল সিডার ভিনেগার সঠিকভাবে এবং পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করলে তা নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি-

  • প্রথমে স্বল্প সময়ের জন্য শুরু করুনঃ
    • প্রথমে ২-৩ সপ্তাহ ধরে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার শুরু করুন এবং দেখুন আপনার শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া করে।
    • যদি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে তবে ধীরে ধীরে এর সময়কাল বাড়াতে পারেন।
  • পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করুনঃ
    • প্রতিদিন ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খাওয়া ভালো।
    • দিনে ২-৩ বার এটি গ্রহণ করতে পারেন, সাধারণত খাবারের আগে।
  • বিশ্রামের সময় দিনঃ
    • কয়েক মাস ধরে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পর এক-দুই সপ্তাহের জন্য বিরতি দিন।
    • এটি শরীরকে পুনরায় সামঞ্জস্য করতে সহায়তা করবে।
  • লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুনঃ
    • যদি আপনার গ্যাস, পেটের ব্যথা বা দাঁতের সমস্যার মত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরীর নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরীর খুবই সহজ এবং ঘরে এটি তৈরি করা সম্ভব। এটি তৈরি করতে হাতের কাছেই কয়েকটি উপকরণ এবং কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। এটি বিভিন্ন রান্না, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিছন্নতার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য ভিনেগারটি ঠান্ডা স্থানে বা ফ্রিজে রাখুন। নিম্নে আপেল সিডার ভিনেগারের উপকরণ এবং প্রস্তুত প্রণালী দেওয়া হলো-

  • উপকরণঃ
    • আপেল - ৫-৬ টি (যেকোন ধরনের আপেল ব্যবহার করা যেতে পারে)
    • চিনি - ১ চা চামচ (প্রাকৃতিক ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে)
    • পানি - প্রয়োজন অনুযায়ী (ফিল্টার করা বা বোতল জাতীয় পানি ব্যবহার করা উত্তম)
    • একটি বড় কাচের জার বা বোতল
  • প্রস্তুত প্রণালী ধাপে ধাপেঃ
    • আপেলগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং সেগুলোকে ছোট ছোট টুকরো করুন। আপেলের খোসা ও বিচি ছড়াতে হবে না।
    • কাচের জার বা বোতলে আপেলের টুকরোগুলো রাখুন, তবে বোতলের এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখুন যাতে ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়ার সময় বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
    • আপেলের টুকরোগুলো ঢেকে দেওয়ার মতো পানি যোগ করুন এবং ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। চিনি আপেলের প্রাকৃতিক চিনিসহ ফরমেন্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয়।
    • কাচের জারের মুখে একটি পরিষ্কার কাপড় বা কাগজের তোয়ালে দিয়ে ঢাকুন এবং একটি রাবার ব্যান্ড বা দড়ি দিয়ে সেটি আটকান। এটি মিশ্রণটিকে বাতাসের সংস্পর্শে আসতে দেবে, তবে ময়লা এবং পোকামাকড়কে দূরে রাখবে।
    • জারটি গরম এবং অন্ধকার স্থানে রেখে দিন এবং প্রতি দুই-তিন দিনে মিশ্রণটি চামচ দিয়ে নাড়িয়ে দিন।
    • প্রথম দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে আপেলের টুকরোগুলো পৃষ্ঠে উঠে আসবে এবং বুদবুদ দেখা দেবে। এটি ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়ার সূচনা নির্দেশ করে।
    • দু্ই-তিন সপ্তাহ পর আপেলের টুকরোগুলো ছেঁকে ফেলুন এবং তরলটিকে আবার জারে রেখে দিন।
    • তরলটিকে আরো ৩-৪ সপ্তাহ ফরমেন্টেশনের জন্য রেখে দিন। এ সময়ের মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ এবং গন্ধ আরো উন্নত হবে।
    • ভিনেগার প্রস্তুত হলে একে ছেঁকে পরিষ্কার বোতলে ভরে ফলে ভিনেগার স্বচ্ছ এবং তীব্র বন্ধ ধারণ করবে।

চুলের বৃদ্ধির জন্য আপেল সিডার ভিনেগার

চুলের বৃদ্ধির জন্য আপেল সিডার ভিনেগার বেশ জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি স্কাল্পের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তবে ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তা সঠিকভাবে পাতলা করেছেন। এছাড়া চুলের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে এবং এলার্জি বা ত্বকের প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে এটি ব্যবহারের আগে একটি প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া উচিত। চুলের বৃদ্ধির জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের কিছু উপায় নিম্নে দেওয়া হলো-

  • চুল ধোয়ার পর রিন্স হিসেবে ব্যবহারঃ
    • উপকরণ -
      • ২ টেবিল চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
      • ১ কাপ পানি
    • ব্যবহারের নিয়ম -
      • শ্যাম্পু করার পর চুলে মিশনটি ঢালুন।
      • কয়েক মিনিট রেখে দিন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
      • সপ্তাহে ১-২ বার এই রিন্স ব্যবহার করতে পারেন।
  • স্কাল্পের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার স্প্রেঃ
    • উপকরণ -
      • ১/৪ কাপ আপেল সিডার ভিনেগার
      • ১/৪ কাপ পানি
      • স্প্রে বোতল
    • ব্যবহারের নিয়ম -
      • আপেল সিডার ভিনেগার এবং পানি মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে নিন।
      • স্কাল্পে স্প্রে করুন এবং আলতো করে মেসেজ করুন।
      • ১০-১৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
      • সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
  • স্কাল্পের জন্য মুলতানি মাটি এবং আপেল সিডার ভিনেগার মাস্কঃ
    • উপকরণ -
      • ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
      • ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
      • প্রয়োজনমতো পানি
    • ব্যবহারের নিয়ম -
      • মুলতানি মাটি এবং আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
      • স্কাল্পে এবং চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
      • ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
      • মাসে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
  • ময়েশ্চারাইজার হিসাবেঃ
    • উপকরণ -
      • ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
      • ১ টেবিল চামচ জলপাই তেল (অলিভ অয়েল)
    • ব্যবহারের নিয়ম -
      • আপেল সিডার ভিনেগার ও জলপাই তেল মিশিয়ে নিন।
      • এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং চুলে প্রয়োগ করুন।
      • ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা রেখে দিন এবং তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে। সাধারণত আপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে। তবে ব্যবহারের সময় সতর্কতা ও পরামর্শগুলি মানলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। এখন জেনে নেওয়া যাক আপেল সিডার ভিনেগারের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-

  • আপেল সিডার ভিনেগার এসিডিক হওয়ার কারণে দাঁতের এনামেল খোয়া করতে পারে। তবে এটি পান করার পরে এটি এড়াতে পান করার পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং স্ট্র ‍দিয়ে পান করতে পারেন।
  • অতিরিক্ত আপনার সিনার ভিনেগার পান করলে পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে, যেমন- গ্যাস, পেটে ব্যথা বা আলসার। এটি এড়াতে সবসময় পানি মিশিয়ে পান করুন।
  • আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি পান করলে গলা ও মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সেজন্য পানি দিয়ে মিশে পান করুন এবং পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করুন।
  • আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে রক্তের পটাশিয়াম মাত্রা কমে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • দীর্ঘ মেয়াদে অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে অস্থি ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা পরিবর্তন করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • ত্বকে সরাসরি আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া বা র‌্যাশ হতে পারে। সেজন্য সর্বদা এটি পানির সাথে মিশে ব্যবহার করা উচিত।
  • কিছু লোকের ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন-চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া সেরা উপায়

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া সেরা উপায় সরাসরি পান না করে পানির সাথে মিশিয়ে খালি পেটে পান করা সর্বোত্তম। এক্ষেত্রে পানি ছাড়া অন্য কোন তরল পদার্থ ব্যবহার করতে পারেন। খাবার খাওয়ার বিশ মিনিট আগে আপেল সিডার ভিনেগার পান করাও ভালো এতে হজম ভালোভাবে হয়। অনেকেই শরীরের মেদ ঝরানোর জন্য সকাল বেলা খালি পেটে এটি খেয়ে থাকেন।

অল্প সময়ের জন্য এটি ঠিক আছে তবে দীর্ঘমেয়াদীর জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। অনেকেই এর গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করেন, এটি করবেন না কারণ ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপেল সিডার ভিনেগার খাবার পর অন্তত ৩০ মিনিট বিশ্রাম দিতে হবে। কেননা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমালে ইসোফেরাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরো যেসব পদ্ধতিতে খাওয়া যায় তা হলো -

  • পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করাঃ
    • এক গ্লাস পানিতে ১ - ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
    • এই মিশ্রণটি দিনে ১ - ২ বার খাওয়া যেতে পারে, সাধারণত খাবারের আগে।
  • মধু এবং লেবুর রসের সঙ্গেঃ
    • ১ - ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ১ চামচ মধু এবং ১ চামচ লেবুর রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
    • এটি স্বাদের জন্য আরেকটু ভালো এবং স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
  • সালাদ ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহারঃ
    • সালাদের উপরে ড্রেসিং হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। 
    • অলিভ অয়েল, মধু এবং মসলা মিশিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর ড্রেসিং তৈরি করা যেতে পারে।
  • স্মুদি বা জুসে মিশিয়েঃ
    • স্মুদি বা তাজা ফলের জুসে ১ চা চামচ চাপের সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
    • এতে স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।
  • রান্নায় ব্যবহারঃ
    • বিভিন্ন রান্নায় যেমন মেরিনেড, সস এবং স্যুপে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার যোগ করতে পারেন।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেতে হবে কেননা অতিরিক্ত খেলে উপরের উল্লেখিত সমস্যাগুলোতে করতে পারেন। সর্বোপরি এটা বলা যায় যে, আপ প্রেসিডার ভিনেগার খুব উপকারী যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়ক।

ছবি-৩

ইহা একটি ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বস্ত ঘরোয়া প্রতিকার যা হাজার হাজার বছর ধরে স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং সৌন্দর্যের সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আমার মতে শুধুমাত্রকা কাঁচা, ফিল্টার করা এবং পাস্তরিত করা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার না করে কমপক্ষে ৩% মাদার ভিনেগার ব্যবহার করা উত্তম।

আজকের এই পোস্টে আমি চেষ্টা করেছি আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও তার বিভিন্ন উপকারিতা এবং অপকারিতা। আশাকরি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন এবং আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে নিজের স্বাস্থ্যকে সবল করে সুন্দর জীবনযাপন করবেন। আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য অপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে আবারও আপনাদের মাঝে অন্য কোন পোস্টনি নিয়ে হয়ত হাজির হবো।


সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ্য, সবল এবং আনন্দে থাকবেন। ধন্যবাদ....

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url