OrdinaryITPostAd

ছাদ বাগান করার পদ্ধতি ও অজানা উপকারিতা-অপকারিতা

ছাদ বাগান করার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানতে চাইছেন। আপনি আপনার ছাদকে বাগনে রুপ দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আপনার এই কাজের উপর তেমন কোন ধারনা নেই যে কিভাবে বা কোন কাজটির পর কোনটি করতে হবে।

ছবি-১

তাহলে আপনি আমার এই পোস্টটি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত খুব ভালভাবে পরবেন তাহলে পড়া শেষে আপনিও হয়ত বলে উঠবেন ছাদ বাগান করা এত সহজ। বর্তমানে এই ছাদ বাগানের মাধ্যমে আপনি নিজের,, দেশের এবং বিশ্বের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারেবন। 

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ ছাদ বাগান করার পদ্ধতি ও পরিকল্পনা

ছাদের লোড নির্ণয় ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

ছাদ বাগান করার পূর্বে ছাদের লোড নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক লোড ক্যালকুলেশন এবং স্ট্রাকচারাল বিশ্লেষণ আপনার ছাদকে নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী রাখতে সাহায্য করবে। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করে ছাদে বাগানের পরিকল্পনা করা উচিত যাতে আপনার বাগান নিরাপদ এবং সফল হয়। এখন আসুন জেনে নেই ছাদের লোড নির্ণয় করার কয়েকটি পদ্ধতি -

  • ছাদে প্রাথমিক বিশ্লেষণ
    • ছাদের ধরনঃ ছাদটি কংক্রিট, টাইলস বা অন্য কোন ম্যাটেরিয়ালের তৈরি কিনা তা নির্ধারণ করুন।
    • ছাদের বয়সঃ ছাদ কত বছর পুরনো তা বিবেচনা করুন। কারণ পুরনো ছাদ নতুন লোড নিতে সক্ষম নাও হতে পারে।
    • ছাদের বর্তমান অবস্থাঃ ছাদের অবস্থা পরীক্ষা করুন, যদি কোন খাটন বা ক্ষতি থাকে তবে তা মেরামত করতে হবে।
  • স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ
    • ছাদে বাগান করার আগে একটি প্রফেশনাল স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে পরামর্শ করা উচিত। ইঞ্জিনিয়ার ছাদের স্ট্রাকচারাল বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং লোড ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
  • লোডের ধরন ও ওজন নির্ণয়
    • ডেড লোডঃ ছাদের নিজস্ব ওজন এবং স্থায়ী স্ট্রাকচারগুলোর ওজন নির্ণয় করুন।
    • লাইভ লোডঃ বাগান করার সময় গাছ, মাটি, পানি এবং অন্যান্য উপকরণের ওজন বিবেচনা করুন।
    • বৃষ্টির পানি ও তুষারের লোডঃ যদি আপনার এলাকায় বৃষ্টি বা তুষারপাত হয় তাহলে এই অতিরিক্ত লোডও বিবেচনা করতে হবে।
  • লোড ক্যালকুলেশন
    • ডেড লোড ক্যালকুলেশনঃ কংক্রিট, স্টিল বা  অন্য মেটেরিয়ালের ওজন নির্ণয় করুন। সাধারণত কংক্রিটের ওজন প্রতি বর্গফুট ১৫০ পাউন্ড হয়ে থাকে।
    • লাইভ লোড ক্যালকুলেশনঃ ছাদে লাগানো গাছপালা, মাটি এবং পানির ওজন নির্ণয় করুণ। প্রতি বর্গফুতে মাটির ওজন সাধারণত ২০ থেকে ৪০ পাউন্ড হয়ে থাকে।
    • মোট লোড ক্যালকুলেশনঃ ডেড লোড এবং লাইভ লোড একসাথে যোগ করে মোট লোড নির্ণয় করা সম্ভব। 
  • লোড বিতরণ পদ্ধতি
    • গাছপালা এবং মাটি সঠিকভাবে বিতরণ করুন যাতে ছাদের উপর সমান লোড থাকে।
    • ভারি পাত্র বা কন্টেইনার ছাদের এমন স্থানে রাখুন যা শক্তিশালী এবং লোড বহনে সক্ষম।
  • সেফটি ফ্যাক্টর
    • লোড ক্যালকুলেশনের সময় একটি  সেফটি ফ্যাক্টর যোগ করুন যা সাধারণত ১.৫ থেকে দুই গুণ হয়ে থাকে। ইহা অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। 
  • ড্রেনেজ ব্যবস্থা
    • ছাদের সঠিক ড্রেজ ব্যবস্থা স্থাপন করুন যাতে বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত হয় এবং ছাদে অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি না করে।

ছাদ বাগানের ডিজাইন, পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন

ছাদ বাগান করার প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিকল্পনা করা এবং সে অনুযায়ী ডিজাইন করা। তারপর সেই ডিজাইন অনুযায়ী একটি আনুমানিক বাজেট প্রণয়ন করা। ছাদ বাগানের ডিজাইন করার সময় বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা উচিত যেমন ছাদের আকার, লোড ক্যাপাসিটি, আলো এবং জল সরবরাহ। আরোও যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো-

  • বাগানের একটি পূর্ণাঙ্গ লেআউট।
  • উচ্চতা এবং স্থান নির্বাচন।
  • কন্টেইনার বক্স এবং টব নির্বাচন।
  • টবের নিচে বা কন্টেইনার বক্সের নিচে দেওয়ার ফার্নিচার।
  • আলো ও জল সরবরাহের ব্যবস্থা।

ছাদ বাগান সফলভাবে করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজাইন সঠিক আছে কিন্তু পরিকল্পনা যদি ভুল থাকে তাহলে ছাদ বাগানে আপনি সফল হতে পারবেন না। তাই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয় তা দেওয়া হল-

  • লোড নির্ণয় এবং ছাদ প্রস্তুত করো কারণ।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত গাছ নির্বাচন করা।
  • পূর্বের মাটি এবং সঠিক পরিমাণে সার ব্যবহার করা।
  • পানি সরবরাহ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সঠিক রাখা।
  • নিয়মিত পরিচর্যার জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা।

ছাদ বাগান করার ক্ষেত্রে বাজেট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এই বাজেটকে আপনার চাহিদা ও ছাদের অবকাঠামোর উপর নির্ভরশীল। কারণ সবার চাহিদা একরকম থাকে না। তাই আমি এখানে আপনাদের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে আনুমানিক কত খরচ করতে হবে তার একটি খসরা উপস্থাপন করছি-

খরচের বিষয় আনুমানিক খরচ মোট ব্যায়ের (% হার)
প্রথমিক প্রস্তুতি খরচঃ
স্ট্রাকচারাল বিশ্লেষণ এবং ওয়াটার প্রুফিং ২৫,০০০/- থেকে ৬৫,০০০/- ২৫ %
ড্রেনেজ ব্যবস্থা ১২,০০০/- থেকে ৩৫,০০০/- ১৩ %
উপকারণ এবং সরঞ্জামঃ
কন্টেইনার এবং প্ল্যান্টার বক্স ৬,৫০০/- থেকে ২৫,০০০/- ৮ %
মাটি এবং সার ৬,৫০০/- থেকে ১২,৫০০/- ৬ %
গাছপালা ৬,৫০০/- থেকে ১৯,০০০/- ৭ %
টবের সাপোর্টের ফার্নিচার ১২,৫০০/- থেকে ৬০,০০০/- ১৮ %
পানি সরবরাহ ব্যবস্থাঃ
পানি সরবরাহ এবং সেচ ব্যবস্থা ৬,৫০০/- থেকে ২৫,০০০/- ৮ %
নিস্কাশন ব্যবস্থা ৬,৫০০/- থেকে ১২,৫০০/- ৬ %
আলো ব্যবস্থা
সোলার বা লাইট ৬,৫০০/- থেকে ১৯,০০০/- ৭ %
নিয়মিত পরিচর্যা খরচ
সার এবং পেস্টিসাইড ২,৫০০/- থেকে ৬,০০০/- (মাসে) ২ % (মাসে)
নিয়মিত পানি এবং মেরামত খরচ ১,৫০০/- থেকে ৪,০০০/- (মাসে) ১ % (মাসে)

ছাদ বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি

ছাদ বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যা ছাদের আকার, লোড ক্যাপাসিটি, জলবায়ু এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোনটি ভাল হয় তা আপনার ছাদ, স্থান এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারেন। প্রতিটি পদ্ধতি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-

কন্টেইনার গার্ডেনংঃ ইহা হলো ছাদের বিভিন্ন কন্টেইনার, পাত্র বা প্লান্টার বক্স ব্যবহার করে গাছপালা লাগানোর পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ পাত্র, কন্টেইনার, প্লান্টার বক্স, মাটি, সার এবং পানি।
  • উপযোগী গাছঃ সবজি, ফুল, ঔষধি গাছ, ছোট ফল গাছ।
  • বিশেষ সুবিধাঃ সহজে স্থানান্তরযোগ্য, বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর সুযোগ ও সহজ পরিচর্যা।

রেইজড বেড গার্ডেনংঃ ইহা হলো উঁচু বেড তৈরি করে তাতে গাছ লাগানোর পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ কাঠ, প্লাস্টিক বা মেটালের তৈরি বেড, মাটি এবং সার।
  • উপযোগী গাছঃ সবজি, ফুল এবং ঔষধি গাছ।
  • বিশেষ সুবিধাঃ মাটির নিয়ন্ত্রণে সুবিধা, পানি নিষ্কাশনের সহজ ব্যবস্থা ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ সহজ।

ভেরটিকাল গার্ডেনিঃ ইহা হলো ছাদের দেয়াল বা স্ট্রাকচারের উলম্বভাবে গাছপালা লাগানোর পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ ট্রেলিস, লতা, জলের মতো স্ট্রাকচার এবং পাত্র।
  • উপযোগী গাছঃ লতা, ভাইন এবং ফুল।
  • বিশেষ সুবিধাঃ কম জায়গায় বেশি গাছ লাগানোর সুবিধা, ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি।

হাইড্রোপনিক্সঃ ইহা হলো মাটি ছাড়া পানি ব্যবহার করে গাছপালা লাগানোর পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ হাইড্রোপনিক সিস্টেম, পানি, পুষ্টি দ্রবণ এবং পাত্র।
  • উপযোগী গাছঃ শাকসবজি, ফল ও ফুল।
  • বিশেষ সুবিধাঃ কম জল ব্যবহার, দ্রুত বৃদ্ধি এবং স্থান সাশ্রয়ী।

একুয়াপনিক্সঃ ইহা হলো হাইড্রোপনিক্স এবং মাছ চাষের সমন্বিত পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ একুয়াপনিক ট্যাংক, মাছ, পানি এবং পুষ্টি দ্রবণ।
  • উপযোগী গাছঃ শাকসবজি ও ফল।
  • বিশেষ সুবিধাঃ মাছ এবং গাছপালার সমন্বিত চাষ ও পুষ্টি রিসাইক্লিং।

গ্রীন রুফঃ ইহা হলো ছাদ সম্পূর্ণভাবে সবুজায়নের পদ্ধতি।

  • উপকরণঃ ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন, মাটি, প্ল্যান্ট এবং ড্রেনেজ সিস্টেম।
  • উপযোগী গাছঃ সবুজ ঘাস, লতা এবং ছোট গাছ।
  • বিশেষ সুবিধাঃ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টির পানি শোষণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি।

বায়োফিলিক ডিজাইনঃ ইহা হলো ছাদের ন্যাচারাল এলিমেন্টগুলির সমন্বয়ে একটি সবুজ পরিবেশ তৈরি করা।

  • উপকরণঃ পাত্র জল ভেজার, মাটি এবং প্ল্যান্ট।
  • উপযোগী গাছঃ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা।
  • বিশেষ সুবিধাঃ প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি, মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি।

ছাদ বাগান কারার জন্য ছাদকে ওয়াটার রেজিস্টেন্স করার কৌশল

ছাদ বাগান কারার জন্য ছাদকে ওয়াটার রেজিস্টেন্স করা অত্যান্ত জরুরি। ইহা ছাদের ভেতরে পানি প্রবেশ রোধ করে এবং ছাদের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করে। নিচে ছাদকে ওয়াটার রেজিস্টেন্স করার বিভিন্ন কৌশল উল্লেখ করা হলো-

  • ছাদ পরিস্কার এবং প্রস্তুতি
    • পরিস্কারঃ প্রথমে ছাদ সম্পূর্ণভাবে পরিস্কার করুন যেন ময়লা, ধুলো এবং অন্যান্য আবর্জনা সরিয়ে ফেলুন
    • মেরামতঃ ছাদের উপর যেকোন ফাটল বা গর্ত চিহ্নিত করুন এবং তা মেরামত করুন।
  • ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন ব্যবহার
    • পলিথিন শীটঃ পলিথিন শীট বা মেমব্রেন ছাদে বিছিয়ে পানি প্রতিরোধ করতে পারেন। ইহা একটি সাধারণ এবং কার্যকর কৌশল
    • বিটুমিনাস মেমব্রেনঃ বিটুমিনাস মেমব্রেন একটি প্রলেপ যা ছাদে বিছানো হয়। ইহা দীর্ঘস্থায়ী এবং পানি প্রতিরোধে কার্যকর।
  • ওয়াটারপ্রুফ কোটিং
    • অ্যাক্রিলিক কোটিংঃ অ্যাক্রিলিক ভিত্তিক ওয়াটারপ্রুফ কোটিং ব্যবহার করতে পারেন। ইহা ছাদের উপর একটি সিল করা প্রলেপ তৈরী করে যা পানি প্রবেশ রোধ করে।
    • পলিউরেথেন কোটিংঃ পলিউরেথেন কোটিং একটি উচ্চ গুণমানের কোটিং যা ছাদকে পানি প্রতিরোধী করে।
  • ড্রেনেজ ব্যবস্থা
    • ছাদে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
    • ড্রেনেজ পাইপ এবং চ্যানেল স্থাপন করুন যা বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ করতে সক্ষম।
  • জিওটেক্সটাইল ফ্যাব্রিক ব্যবহার
    • জিওটেক্সটাইল ফ্যাব্রিক একটি স্তর হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা পানি প্রবেশ রোধ করে এবং মাটির সঙ্গে মিশে যায় না।
    • ইহা ছাদে পানি জমা হওয়া প্রতিরোধ করে এবং ছাদকে সুরক্ষা দেয়।
  • প্ল্যাস্টার বক্স ব্যবহার
    • গাছপালা লাগানোর জন্য প্লাস্টার বক্স ব্যবহার করতে পারেন। ইহা সরাসরি ছাদের সংস্পর্শে না এনে পানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
    • প্ল্যান্টার বক্সের নিচে ড্রেনেজ হোল রাখুন যা অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়।
  • প্রচলিত পদ্ধতি
    • সিমেন্ট এবং স্যান্ডের মিশ্রণঃ ছাদের উপার সিমেন্ট এবং স্যান্ডের মিশ্রণ প্রলেপ দিতে পারেন। ইহা একটি প্রাথমিক পানি প্রতিরোধক প্রলেপ তৈরী করে।
    • কিছু প্রাকৃতিক উপদানঃ কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপদান যেমন নারিকেল পাতা বা ঝিনুকের ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে।

ছাদ বাগান করলে ছাদের ক্ষতির দিকগুলো

ছাদ বাগান করার ফলে কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই ক্ষতিগুলো এড়ানো সম্ভব। ছাদ বাগান করার পূর্বে সঠিকভাবে ছাদ প্রস্তুতি, লোড ক্যাপাসিটি নির্ণয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা করা জরুরি। এছাড়াও ছাদ বাগানের ফলে ছাদের যে যে ক্ষতি হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো-

পানি প্রবেশ ও স্যাঁতসেঁতে হওয়াঃ ছাদ বাগান করার ফলে অতিরিক্ত পানি জমতে পারে যা ছাদের ফাটল সৃষ্টি করে এবং পানি ছাদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। ছাদকে ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন  দিয়ে কভার করে এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার করে প্রতিরোদ দূর করা সম্ভব।

অতিরিক্ত লোডঃ গাছপালা, মাটি এবং পানি ছাদে অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি করতে পারে, যা ছাদের স্ট্রাকচারাল ইন্টিগ্রিটি দুর্বল করতে পারে। তাই বাগান করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্যে ছাদের লোড ক্যাপাসিটি নির্ণয় করা, হালকা ওজনের কন্টেইনার ব্যবহার করা এবং ভরসম্যপূর্ণভাবে লোড বিতরণ করে ইহা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিকড়ের ক্ষতিঃ গাছের শিকড় ছাদে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে এবং ছাদের স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই শকিড়ের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এমন গাছ নির্বাচন করা উচিত এবং প্ল্যান্টার বক্স ব্যবহার করে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ গাছপালা এবং মাটি ছাদে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে যা ঘরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। সেজন্য তাপমাত্রা নিয়িন্ত্রণে সহায়ক গাছপালা নির্বাচন করুন। এছাড়া ছাদের উপরে তাপ নিরোধক স্তর ব্যবহার করুন।

মাটি প্রস্তুত করন ছাদ বাগান করার জন্য

ছাদ বাগান করার জন্য মাটি প্রস্তুতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যা গাছের স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মাটির মিশ্রণ, পিএইচ এবং পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করলে গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক বাগানের মাটি প্রস্তুত করার পর্যায়ক্রমিক ধাপ-

উপযুক্ত মাটি নির্বাচনঃ বাগানের জন্য সাধারণত হালকা ওজনের এবং পুষ্টিকর মাটি ব্যবহার করা উচিত।

  • পটিং মিক্সঃ ছাদ বাগানের জন্য বাণিজ্যিকভাবেই উপলব্ধ পটিং মিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে যা হালকা ওজনের এবং পানি ধারণক্ষমতা ভালো।
  • কম্পোস্টঃ পটিং মিক্সের সাথে কম্পোস্ট মেশানো যায় যা মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে এবং গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • পার্লাইট এবং ভারমিকুলাইটঃ মাটির বায়ু চলাচল এবং পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ইহা মেশানো যায়।

মাটির উপাদানঃ মাটির উপাদানগুলোর সঠিক সংমিশ্রণ নিশ্চিত করা জরুরী। সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে-

  • বালুঃ বালু মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • কোকো পিটঃ ইহা মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং এটি হালকা ওজনের হয়।
  • কম্পোস্টঃ ইহা মাটির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
  • পার্লইটঃ ইহা মাটির বায়ু চলাচল এবং পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মাটির প্রস্তুতকরণঃ উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলো নিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নিচে দেওয়া পরিমাণ অনুযায়ী মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে-

  • বালু মেশানোঃ ৪০% বালু নিন।
  • কোকো পিট মোশানোঃ ৩০% কোকো পিট মেশান
  • কম্পোস্ট মেশানোঃ ২০% কম্পোস্ট মেশান।
  • পার্লইট মেশানোঃ ১০% পার্লইট মেশান।

এই উপাদানগুলো মেশানোর পর মাটির পিএইচ পরীক্ষা করুন। যদি এই পি এইচ এর মান ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে তা উপযুক্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। মাটিতে যেকোনো ধরনের রোগ জীবাণু বা আগাছা বীজ থাকতে পারে। জীবাণু বা আগাছা ধ্বংস করতে নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন-

  • সৌরজমিয়করণঃ মাটিতে প্লাস্টিক শীটে ঢেকে সূর্যের তাপে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ রেখে দিন।
  • স্টিম পেসটুরাইজেশনঃ মাটিকে স্টিমে রেখে ১৫০°  থেকে ১৮০° তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট গরম করুন।

উপযুক্ত গাছ ছাদ বাগানের জন্য চিহ্নিতকরণ

উপযুক্ত গাছ চিহ্নিতকরণ ছাদ বাগানের করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত ছাদ বাগানের জন্য বড় আকারের গাছকে পরিহার করা হয় এবং ছোট আকারের হাইব্রিড জাতীয় গাছগুলোকে ব্যবহার করা হয়। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক আর কি কি গাছ লাগানো উত্তম,

  • ফল জাতীয় গাছ -
    • আমঃ আম্রপালি, মল্লিকা এবং সিন্দুরী জাতের আম।
    • পেয়ারাঃ বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১ ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
    • বড়ইঃ বাউ কুল-১, আপেল কুল (ইপসা কুল-১), থাই কুল-২ ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
    • লেবুঃ বারি লেবু-২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১ ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
    • আমড়াঃ বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১ ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
    • করমচাঃ থাই করমচা।
    • ডালিমঃ দেশী উন্নত জাতের ডালিম।
    • কমলা ও মাল্টাঃ বারি কমলা-১, বারি মাল্টা-১ ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
    • জামরুলঃ নাশপাতি জামরুল (বাউ জামরুল-১), আপেল জামরুল (বাউ জামরুল-২) ইত্যাদী উল্লেখযোগ্য।
  • শাক-সবজি জাতীয় - লালশাক, পালংশাক, মুলাশাক, ডাটাশাক, কলমীশাক, পুইশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, মুলা, ক্যাপসিকাম, শিম, বরবটি, করলা, লাউ ইত্যাদী।
  • মসলা জতীয় - মরিচ, রসুন, আদা, ধনিয়া, পুদিনা, ধনেপাতা ইত্যাদী।
  • ঔষধীগুন জতীয় - অ্যালোভেরা, তুলসী, থানকুনি, চিরতা, স্টিভিয়া ইত্যাদী।
  • ফুল জাতীয় - গোলাপ, বেলী, টগর, জুঁই, গন্ধরাজ, জবা, শিউলি, এলামন্ডা, বাগাান বিলাস ইত্যাদী।

ছাদ বাগানের জন্য আলো ও ছায়া পরিমাপ

ছাদ বাগানের জন্য আলো ও ছায়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ছায়া সঠিকভাবে নিশ্চিত না করলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আসুন আমরা জেনে নেই প্রয়োজনীয় আলো ও ছায়ার কয়েকটি ব্যবস্থাপনা।

গাছের জন্য আলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ আলো ছাড়া গাছের ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না। ছাদ বাগানে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে-

আলোর প্রয়োজনীয়তাঃ

  • পূর্ণ সূর্যালোকঃ কিছু গাছ যেমন টমেটো, মরিচ, গোলাপ ইত্যাদি গাছগুলোর জন্য পূর্ণ সূর্যালোকের প্রয়োজন।
  • আংশিক সূর্যালোকঃ শাকসবজি জাতীয় গাছগুলোর জন্য আংশিক সূর্যালোকের প্রয়োজন।
  • আলো-ছায়ার মিশ্রণঃ কিছু গাছ আলো ও ছায়ার মিশ্রণ প্রয়োজন যেমন ফার্ন, লেটুস ইত্যাদি।

আলোর ব্যবস্থাপনাঃ

  • ছাদের এমন স্থানে গাছপালা রাখুন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পৌঁছায়।
  • আলোর প্রতিফলনের জন্য সাদা বা উজ্জ্বল রঙের পাত্র ব্যবহার করুন।
  • রাতে বা কম আলোয় সোলার লাইট অথবা নরমাল লাইট ব্যবহার করে ভালো সরবরাহ করা যায়।

আরো যেমন গাছপালার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান তেমন ছায়া ছাড়াও কিছু কিছু কাজ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই ছাদ বাগানে ছায়ার প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে-

ছায়ার প্রয়োজনীয়তাঃ

ফার্ন জাতীয় গাছগুলোর জন্য ছায়াযুক্ত এলাকার প্রয়োজন।

গাছের চারপাশে ছায়াযুক্ত এলাকা তৈরি করে গাছকে সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করা যায়।

ছায়ার ব্যবস্থাপনাঃ

  • গাছের উপর শেড নেট ব্যবহার করে ছায়া তৈরি করা যায়।
  • উচ্চ গাছের ছায়ায় ছোট গাছ রাখা দিতে পারে।
  • বড় পাত্র ব্যবহার করে গাছের চারপাশে ছায়া সৃষ্টি করা যায়।

ভালো ও ছায়ার সমন্বয়ের জন্য এমন গাছ নির্বাচন করুন যা বিভিন্ন মাত্রার আলো এবং ছায়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। আপনার স্থানীয় জলবায়ু ও আবহাওয়া অনুযায়ী গাছ নির্বাচন করুন। আমাদের দেশের ঋতুর কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনে গাছের স্থান পরিবর্তন করুন।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

ছাদ বাগানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা গাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি সরবরাহ করার জন্য যে কয়েকটি পদ্ধতি আছে তার মধ্যে যেকোনো একটি আপনি অনুসরণ করতে পারেন। যা স্থানীয় পরিবেশ, গাছের প্রয়োজন এবং সাশ্রয়ী উপকরণের উপর নির্ভর করে। নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি দেওয়া হলো-

  • ম্যানুয়াল ওয়াটারিংঃ এই পদ্ধতিতে হল হাতে করে পানি সরবরাহ করায় যা ছোট ও মাজারি আকারে খাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত। এর জন্য মগ, পাইপ এবং বালতির প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট সময়ে মন বা পায়ের দিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সবথেকে সহজ ও সাশ্রয়ী।
  • ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিঃ এবা পদ্ধতিতে হলো নিয়মিত বিরোতিতে গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি সরবরাহ করা। এর জন্য ড্রিপ পাইপ, পাম্প এবং কন্ট্রোলারের প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে পানি সাশ্রয়ী এবং সরাসরি পানি সরবরাহ করে তাই বর্জ্য কম হয়।
  • রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংঃ এই পদ্ধতিটি হল বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে গাছের জন্য ব্যবহার করা। এর জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম, ফিল্টার ও রিজার্ভারের প্রয়োজন হয়। ছাদের পানি সংগ্রহ করে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে রিজার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। ইগা পরিবেশবান্ধব, পানি সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।
  • অটোমেটেড ইরিগেশন সিস্টেমঃ এই পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাছের জন্য পানি সরবরাহ করা যায়। এর জন্য এখানে সেন্সর, কন্ট্রোলার এবং ইরিগেশন পাইপের প্রয়োজন হয়। মাটির আদ্রতা সেন স্যারের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কন্ট্রোলার ইরিগেশন ফাইভ এর মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে থাকে। এতে সময় ও শ্রম কম লাগে এবং প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহ করা যায়।
  • উইকিং বেডঃ এই পদ্ধতিতে মাটি ও জলাধারের সংমিশ্রনে তৈরি একটি সিস্টেম। যা মাটির নিচ থেকে পানি শোষণ করে গাছের গোড়ায় পৌঁছে দেয়। এর জন্য জিওটেক্সটাইল, কাপড় এবং জলাধার প্রয়োজন হয়। ইহা মাটির সঠিক আ্দ্রতা বজায় রাখে এবং ব্যবস্থাপনা ও সহজ।
  • রিসাইক্লড গ্রে ওয়াটারঃ এই পদ্ধতিটি হলো ব্যবহৃত পানি যেমন রান্নাঘরের পানি, বাথরুমের পানি ফিল্টার করে পুনরায় ব্যবহার করা। এর জন্য গ্রে ওয়াটার ফিল্টার সিস্টেম ও পাইপের প্রয়োজন। ইহা পানি সাশ্রয়ী, পরিবেবান্ধব এবং সহজলভ্য।

ছাদ বাগানের পরিচর্যা কৌশল 

ছাদ বাগান করার ক্ষেত্রে বাগান পরিচর্যাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু খুব অল্প জায়গার উপর একটি ছ্যাটবাগান তৈরি করা হয় সেহেতু যত্নসেবা পর্যাপ্ত নিতে হবে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক পরিচর্যার ক্ষেত্রে আর কোন কোন কৌশল অবলম্বন করা যায়-

  • সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ সার কম হলে গাছ অপুষ্টিতে ভুগবে আর বেশি হলে অথবা গাছের গায়ে লেগে গেলে গাছ মারা যাবে। এছাড়াও সার প্রয়োগের সময় মাটির আর্দতা দেখে নিতে হবে। কেননা বেশি আর্দ্র বা কম আর্দ্র কোন টাইপের সার প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু সার আছে পানিতে মিশিয়ে দিতে হয়। তবে গুটি সার সবচেয়ে সহজে ব্যবহার করা যায়। 
  • টবে খৈল দেওয়া যাবে না কারণ এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে। সাধারণত বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করাই উত্তম।
  • টবে গাছ বড় হয়ে গেলে তা তৃপ্তি তৃপ্তি পদ্ধতিতে টপটি পরিবর্তন করতে হবে। বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলে নতুন জৈব সার দিতে হবে।
  • খুব সাবধানতার সহিত বীজ লাগাতে হবে যেন বীজটি টবের ঠিক মাঝখানে ও পরিমান মত মাটির নিচে থাকে। বীজতলার থেকে বেশি বা কম গভীরে লাগালে গাছের বাড়তিতে সমস্যা হয়।
  • ছাদ বাগানে প্রতিদিন পরিষ্কার কার্যক্রম অনুসরণ করতে হবে। সেজন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে।
  • দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার ছাদ বাগান পরিদর্শন করতে হবে। এতে আপনার বাগানের গাছের রোগবালায় থেকে সতর্ক হতে পারবেন। যা পর্যপ্ত ক্ষতিসাধণ করার পূর্বেই ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

ছাদ বাগান করার উপকারতা

বাড়ির ছাদে বাগান করা একটি উপকারী এবং সার্থক উদ্যোগ যা পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইহা আপনাদের জন্য সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করে এবং জীবনের গুণগত মান উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিকল্পনা ও যত্নের মাধ্যমে ছাদ বাগান করতে পারলে ইহা আপনার জন্য একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কি কি উপকার পাওয়া যায়,

  • পরিবেশগত উপকারিতা
    • বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নঃ আপনারা জানেন গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। ছাদে বাগান করলে আপনি শহরের বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করবেন।
    • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ ছাদের গাছপালা আপনার বাসার তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর উপকারিতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
    • জলাবদ্ধতা হ্রাসঃ বৃষ্টির পানি গাছের মাধ্যমে শোষিত হয়ে জমতে পারে, ফলে আপনার ছাদের জলাবদ্ধতা সমস্যা হ্রাস পায়।
  • স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
    • মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নঃ  বাগান করার মাধ্যমে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইহা চাপ কমাতে এবং মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
    • শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নঃ বাগান করার মাধ্যমে আপনার শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পায় যা স্বাস্থ্যকর জীবনধারাযর জন্য উপকারী।
    • স্বাস্থ্যসম্মত খাবারঃ বর্তমানে আমাদের বাজারে প্রায় সব খাবারই কেমিক্যাল যুক্ত তাই আপনি যদি ছাদ বাগানে খাবারের উদ্দেশ্যে গাছ লাগান তাহলে আপনি পুষ্টিকর কেমিক্যাল মুক্ত খাবার খেতে পাবেন।
  • অর্থনৈতিক উপকারিতা
    • খাদ্য উৎপাদনঃ ছাদে সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করে আপনি পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটাটে পারবেন। এতে খাদ্য ব্যয় হ্রাস পায় এবং অর্গানিক খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
    • বিদ্যুৎ সাশ্রয়ঃ ছাদে গাছপালা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হলে ঘরে শীততাপ নিয়ন্ত্রণের আপনার ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে।
  • সামাজিক উপকারিতা
    • সম্পর্ক উন্নয়নঃ পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করে বাগান করা একটি সামাজিক কার্যকলাপ হিসেবে কাজ করতে পারে। ইহা সম্পর্ক উন্নয়নের সাহায্য করে।
    • শিক্ষামূলক উপকারিতাঃ শিশুদের জন্য ছাদে বাগান একটি শিক্ষামূলক কার্যক্রম হতে পারে। তারা প্রকৃত তারা প্রকৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।

ছাদ বাগান করার অপকারতা

বাড়ির ছাদে বাগান করার কিছু উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন কিছু অপকারিতাও রয়েছে। অনেকেই শুরুতেই এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে না। ভাবে বাগান করার ফলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যা ভবনের কাঠামোগত স্থায়িত্ব, রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এখন আসুন জেনে নেওয়া যায় কি কি অপকারিতা পরিলক্ষিত হয়,

  • ভবনের কাঠামোগত সমস্যা
    • ভার বৃদ্ধিঃ ছাদে বাগান করার ফলে অতিরিক্ত মাটি, গাছপালা এবং পানি ছাদে জমে। যা ভবনের কাঠামোগত স্থায়িত্বের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ইহা ভবনের স্থায়িত্বের ক্ষতি করতে পারে এবং ফাটল বা ধ্বংসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
    • জলরোধী সমস্যাঃ বাগানে নিয়মিত পানি দিতে হয় যা ছাদের জলরোধী স্তরের ক্ষতি করতে পারে এবং ভবনের অভ্যন্তরে জল গড়ানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। 
  • রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা
    • যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ঃ ছাদে বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন। গাছপালা নিয়মিত পানি, সার, এবং কীটনাশক প্রয়োজন হয় যা সময় এবং অর্থ ব্যয় করে।
    • মেরামতি খরচঃ বাগানের জন্য সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে ছাদে পানি জমে ছাদ ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে ছাদ মেরামতের খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সমস্যা
    • কীটপতঙ্গ ও রোগঃ বাগানে গাছপালা লাগানোর ফলে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এবং রোগ জীবাণু ছাদে বাসা বাঁধতে পারে। ইহা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বিশেষ করে যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়।
    • উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়া ঝুঁকিঃ ছাদে বাগান করতে গিয়ে উচুস্থান থেকে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে যা মারাত্মক আঘাত এবং দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
  • পরিবেশগত সমস্যা
    • পানি সংরক্ষণঃ ছাদে বাগান করতে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন হয়। পানির সংরক্ষণ নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে বিশেষ করে যদি অঞ্চলটি পানির সংকটের মধ্যে থাকে।
    • জলাবদ্ধতাঃ ছাদে বাগানের জন্য সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে দলবদ্ধতার সৃষ্টি দেখা দিতে পারে। যা ছাদের উপরে ও নিচের উভয় স্তরে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ছাদ বাগান করার পদ্ধতি ও পরিকল্পনা নিয়ে লেখকের মন্তব্য

ছাদ বাগান করার পদ্ধতি ও পরিকল্পনা নিয়ে এখনই উপযুক্ত সময়। ছাদ বাগান করা শুধুমাত্র একটি বিনোদনমূলক কাজ নয় ইহা পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, সমাজ এবং আপনার ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসে। ইহা আপনাদের জীবনে একটি স্থায়ী সবুজ পরিবর্তন আনতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

ছানবাগান করার মাধ্যমে আপনি একটি সবুজ এবং সুস্থ জীবন দ্বারা তৈরি করতে পারেন, যা আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উপকারী বয়ে আনবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url