নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-অজানা ১০টি গুণাগুণ
নিমপাতার অজানা অনেক গুণাগুণ আছে যা আপনার কল্পনার বাহিরে। এই নিমপাতাকে ব্যবহার করে আপনি শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তাহলে আপনি হয়তো চিন্তা করে গেছেন নিম পাতা শরীরের কোন কোন সমস্যা সমাধান করে।
এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ নিম পাতা অজানা ১০ টি গুণাগুণ
- নিম পাতার অজানা পুষ্টি তথ্য
- ক্ষতের নিরাময়ে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- চুলের সমস্য সমাধানে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতয় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- ত্বকের যত্নে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- অ্যাজমার চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- হার্টের হৃৎস্পন্দন ঠিক রাখতে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- ক্যন্সার বিরোধী চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- গর্ভনিরোধক হিসেবে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- পরিপাক ক্রিয়ার জন্য নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- দাঁতের ক্ষয় রোধে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
- নিম পাতার অজানা উপকারিতা
- নিম পাতার অজানা অপকারিতা
- নিম গাছের বিভিন্ন অংশের আজানা গুণাগুণ
- নিম পাতার অজানা গুণাগুণ সম্পর্কে লেখকের মতামত
নিম পাতার অজানা পুষ্টি তথ্য
নিম পাতার অজানা পুষ্টি তথ্যের প্রথমেই যে উপাদানের কথা বলতে হয় তা হলো ফ্ল্যাভোনয়েড। যার উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে নিম পাতা এবং ইহা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এরপরে আছে অ্যাজাডিরাকটিন যা একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও যেসব উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- ভিটামিন সি
- ক্যারোটিন
- গ্লুট্যামিক অ্যাসিড
- প্রালাইন
- ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি।
নিম ফুলের মধ্যে অনেক উপাদান রয়েছে সেগুলো হলোঃ
- গ্লুট্যামিক অ্যাসিড
- টাইরোসাইন
- মেথিওনাইন ইত্যাদি।
নিমের বীজের বিশেষ ধরনের উপাদান রয়েছে কারণ সেগুলোতে উচ্চমাত্রায় লিপিড আছে যা তিক্ত স্বাদযুক্ত এবং ইহা কীটনাশক হিসেবে ২০০ বেশী প্রজাতির কীটের ওপর প্রয়োগ করা হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা সেগুলো মানুষের পক্ষে বিষাক্ত নয়।
ক্ষতের নিরাময়ে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
ক্ষতের নিরাময়ে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ অতুলনীয়। আপনি যদি আহত হয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতের নিরাময় সাধারনত শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যখন ত্বক এবং টিস্যু নিজেরাই নিজেদের ঠিক করে নেয়। বেশ কিছু সমীক্ষায় পাওয়া গেছে যে, নিম হচ্ছেি একটি কার্যকারী প্রাকৃতিক ক্ষত প্রশমনকারী।
নিম পাতায় যেসব উপাদান রয়েছে তা শুধুমাত্র যন্ত্রনা এবং ফোলা কমায় না ইহা জখম স্থানে সংক্রমণ নতুন করে আরো ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করে।ক্ষত নিরাময়ের ব্যবহৃত এন্টিসেপটিক প্রভাইডোন-আইয়োডিনের সঙ্গে নিমের কার্যকরিতার তুলনা করার জন্য একটি প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণা করা হয়েছিল।
এই গবেষণায় ৬০ জন রোগীর দেহে ৮ সপ্তাহ ধরে নিমের তেল খোলা ক্ষতের ওপর লাগানো হয় এবং ৮ সপ্তাহ পরে দেখা গেল যে, প্রভাইডোন-আইয়োডিনের তুলানায় নিম পাতার নির্যাস দিয়ে চিকিৎসায় ক্ষতটির আকার অনেক কমে গেছে।
চুলের সমস্য সমাধানে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
চুলের যত্নে ও সমস্য সমাধানে নিম পাতার অজানা অনেক ভুমিকা রয়েছে। আপনি যদি চুলকে তাজা ও রেশনের মত মোলায়েম রাখতে চান তাহলে চুলের উপযুক্ত যত্ন নিতে হবে। এটাও দেখতে হবে যে আপনার চুল যেন খুশকি মুক্ত থাকে এবং মাথায় উকুন যেন না থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই সমস্যাগুলো সমাধানে নিম পাতা অতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়াও ২৮ জন রোগীর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় অন্যান্য উপাদানের সহিত নিম পাতা, শিকাকাই এবং রিঠার মিশ্রণ দিয়ে একটি নতুন মিশ্রণ তৈরী করা হয় এবং সেই মিশ্রণ সবার মাথায় দিয়ে দেখা গেছে ইহা মাথার ত্বকের চুলকানি এবং খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এই মিশ্রণটিতে ফাঙ্গাস বিরোধী গুণও পরিলক্ষিত করা যায়।
যেসব ছেলে মেয়েরা বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা করে তাদের ক্ষেত্রে মাথার উকুন একটি বড় সমস্যা। শ্যাম্পুর মাধ্য নিমকে প্রধান উপাদান ব্যবহার করলে তা মাথার উকুন বিনাশে সক্ষম হয় কিনা দেখার জন্য একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা যায় যে, রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পুর তুলনায় নীল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতয় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতয় নিম পাতার অজানা গুণাগুণের মধ্যে প্রধান গুণ যা সমস্ত শরীরের প্রধান সুরক্ষা কবচ হিসেবে বিবেচিত। এটি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস এবং অন্যান্য বহিঃ শত্রুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে মানুষ মাঝেমাঝেই সংক্রমণ এবং রোগের শিকার হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে নিম পাতা মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আরেকটি প্রি-ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের নির্যাস ইতিবাচকভাবে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে লিস্ফোসাইট এবং মনোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। উভয়ই এক ধরণের শ্বেতকণিকা যেগুলি সংক্রামক মাইক্রোবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মূখ্য ভুমিকা পালন করে থাকে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
ত্বকের যত্নেও নিম পাতার অজানা অসংখ্য গুণাগুণ রয়েছে। ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ এবং সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে আপনাদের ত্বকের নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন। অনুপযুক্ত ত্বকের স্বাস্থ্যের কারণে বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন র্যাশ পড়া, ব্রণ, এ্যালার্জি এবং সোরাইসিসের আক্রমণ হতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিমের মধ্যে এমন কিছু উপাদান সক্রিয় আছে যা ত্বকের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। একটি প্রাক-গবেষণায়, দেখা গেছে যে, প্রোপিওনিব্যাকটিরিয়াম অ্যাকনি জাতীয় ব্যাকটেরিয়া যা থেকে ব্রণ হয় তার হাত থেকে নিমের তেল রক্ষা করতে সক্ষম। নিমের মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
- ডিটারপিনস-স্টিগম্যাস্টেরল
- ট্রাইটারপেনস
- নিম্বিডিন
- মার্গোলাইন
- মার্গোলোলোন
সক্রিয় উপাদান গুলি নিমের এন্টি মাইক্রোভিয়াল এবং এন্টি ইন গুনাবলির জন্য দায়ী। এর ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং কিছু সমস্যা কিছুটা কমে যায় যা ত্বককে আরো মসৃণ ও সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায়।
অ্যাজমার চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
অ্যাজমার চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা অনেক গুণাগুণ রয়েছে। আপনারা জানেন অ্যাজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যার কারণে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় বুকের ভেতর ঘড়ঘড় শব্দ করে এবং কাশি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অ্যাজমার প্রতিরোধ করতে নিমপাতা অনেক সাহায্য করে থাকে।
অ্যাপ্লাইড সায়েন্স এ্যান্ড টেকনলজির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের তেল এবং নিমপাতা অ্যাজমার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে এবং কাশি ও কফ রোধে অথবা কমাতে ভুমিকা রাখে। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের বীজ, ফল, মূল এবং কাণ্ড অ্যাজমার চিকিৎসায় কার্যকর।
আয়ুর্বেদ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে যুগ যুগ ধরে নিমের পাতা, নিমের ফুল এবং নিমের বিজকে ব্যবহার করে আসছে। আসল কথা হচ্ছে যে, নিমের এ্যালার্জি বিরোধী যে গুণ আছে তার জন্যে ইহা অ্যাজমার চিকিৎসা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টের হৃৎস্পন্দন ঠিক রাখতে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
হার্টের হৃৎস্পন্দন ঠিক রাখতে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ অতুলনীয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, হৃদরন্ত্রের সমস্যায় যেমন হৃদরোগ বা করোনারি আর্টারি রোগ এবং অ্যারিথমিয়ার (অস্বাভাবিক হৃদকম্পন) চিকিৎসার জন্য নিমের ব্যবহারে খুব ভালো কাজ করে। করোনারি আর্টারি রোগ একটি সাধারণ হৃদরোগ।
এই রোগে হার্টে রক্ত সঞ্চালন কম হয় এবং বুক ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। একটি প্রাক-ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিম পাতার নির্যাস হার্টের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এই নির্যাস হৃদস্পন্দনের উচ্চ হার এবং হৃদস্পন্দনের হার কমাতে সাহায্য করে।
ক্যন্সার বিরোধী চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
ক্যন্সার বিরোধী চিকিৎসায় নিম পাতার অজানা গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে। আপনারা জানেন ক্যান্সার মূলত শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ। পরিবেশ দূষণের জটিলতা থেকে ভেজাল খাদ্য থেকে শুরু করে বিবিধ কারণের জন্য ক্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক প্রাক-ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের মধ্যে মুখ্য উপাদান হিসেবে নিম্বোলাইড থাকে।
এই নিম্বোলাইডের ক্যান্সার বিরোধী এবং কেমো প্রতিরোধী গুণাবলী আছে। নিম্বোলাইড উপাদানটি ক্যান্সার কোষের যে চক্র আছে তা প্রতিরোধ করে। সেজন্য কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত হয় এবং সেগুলো আর অন্যদিকে ছড়াতে পারে না। নিম্বোলাইডের কারণে ক্যান্সার কোষের অ্যাপোপটসিস (নির্দিষ্ট ভাবে কোষের মৃত্যু) হয়।
আরো একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিমের মধ্যে উপস্থিত নিম্বোলাইড উপাদান প্যাংক্রিয়াটিক ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে প্রতিহত করতে সক্ষম। সেজন্য ক্যান্সার বিরোধী ঔষধ তৈরীতে নিমের পাতা কার্যকরি ভুমিকা পালন করে থাকে।
গর্ভনিরোধক হিসেবে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
গর্ভনিরোধক হিসেবে নিম পাতার অজানা আরেকটি গুণাগুণ রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বাধা দিতে গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে গর্ভনিরোধকের উপায় না থাকায় এবং তা সুলভ না হওয়ায় তার ব্যবহারের অভিহার দেখা যায়। যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপজ্জনক গর্ভপাতের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে।
একটি প্রাক-ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জরায়ুর অভ্যন্তরে নিমের তেল ব্যবহার করলে গর্ভধরণের বিপরীত ফল হয়। বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে এই পরীক্ষা করার পর তাদের মধ্যে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং দেখা গেছে তাদের উর্বরতা কিছু মাসের মধ্যে ফিরে এসেছে।
আরো একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, স্ত্রীযোনিতে নিমের তেলের প্রলেপ দেওয়া হলে সেকেন্ডের মধ্যে শুক্রানু গুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে আপনারা দেখতে পারেছেন নিমের নির্যস এমন একটি গর্ভণিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যা অর্থের দিকে সাশ্রয় এবং যার কোন বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া নেই। গরীব প্রধান দেশে এই উপায়টি একটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
পরিপাক ক্রিয়ার জন্য নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
পরিপাক ক্রিয়ার জন্য নিম পাতার এক অনন্য অজানা গুণাগুণ রয়েছে। অন্ত্রের বিপাকীয় সমস্যার জন্য এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন খাদ্যনালীর ক্ষুদ্রান্ত এবং বৃহদান্ত্র ও পাকস্থলী আক্রান্ত হয়। এই অবস্থার সাধারণ উপসর্গগুলো হলোঃ
- পেট ব্যথা (অ্যাবডোমিন্যাল পেন)
- আন্ত্রিক
- বেশি বায়ু বাহির হওয়া
- বমি হওয়া ইত্যাদী।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্ত্রের বিপাকীয় সমস্যা যেন আলসার এবং অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি থামাতে নিম খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের নির্যাস ব্যবহার করলে পাকস্থলীতে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনরায় জন্মাতে সাহায্য করে। একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, নিমে উৎকৃষ্ট মানের পাকস্থলী রাক্ষাকারী এবং আলসার বিরোধী উপদান রয়েছে।
একটি প্রাক-ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায়, কয়েকজন অন্ত্রের বিপাকীয় সমস্যায় জর্জরিত রোগীকে ১০ সপ্তাহ ধরে দিনে ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম নিমের নির্যাস দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর লক্ষ্য করা গেল যে, গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং গ্যাস্ট্রিক জুসের অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হচ্ছে।
দাঁতের ক্ষয় রোধে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ
দাঁতের ক্ষয় রোধে নিম পাতার অজানা গুণাগুণ রয়েছে। কথায় আছে, ”দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্ম বুঝে না”। তাই আপনিও দাঁত থাকতে দাঁতের গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেজন্য দাঁতের ক্ষয় বা দাঁতের গর্ত হয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া থেকে এ্যাসিড নিঃসরণের ফলে দাঁতের গঠন ভেঙ্গে যায়।
এসময় চিকিৎসা না করা হলে দাঁতের মধ্যকার গর্তে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং তা মাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিমের ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে পারে এবং প্যাথোজেনের হাত থেকে মাড়ি এবং দাঁত রক্ষা করতে পরে। সেজন্য বিভিন্ন প্রকার টুথপেস্ট তৈরীতে এই নিমকে ব্যবহার করা হয়।
পাতার নির্যাস থেকে পাওয়া এথানোলিক এবং নিমের শাখায় এমন ব্যাকটেরিয়া বিরোধী গুণাবলী লক্ষ্য করা যায় যা মুখের প্যাথোজেন এস মিউট্যান এবং এস ফেকালিসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়াও এর মধ্যে যে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান রয়েছে তা দাঁতে প্লাক ও দাঁতের উপর ব্যাকটেরিয়ার পাতলা আবরন জমা হতে বাধা দেয়।
নিম পাতার অজানা উপকারিতা
নিম পাতার অজানা উপকারিতা অনেক। বিশ্বের যে কোন দেশে বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশই বহুকাল থেকে ঔষধি গাছ হিসেবে নিমের ব্যবহার করে আসছে। প্রকৃতিই মানুষের সব সমস্যার সৃষ্টি করে আবার প্রকৃতিই এই নিম গাছের মধ্য দিয়ে সমাধান দিয়ে রেখেছে যা অতুলনীয় একটি উদাহরণ।
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে নিন খুবই কার্যকর। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি অতুলনীয়। সাধারণত দেখা গেছে নিম গাছে প্রায় ১৩০ টি ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এছাড়াও আরো যেসব গুণাগুণ রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- ক্ষত সারাতে - নিম পাতাকে পিসে পেস্টের মত তৈরী করে আঘাতজনিত বা ক্ষতের স্থানে প্রতিদিন কয়েকবার লাগালে তা দ্রুত সেরে যায়।
- খুশকি দূর করতে - নিম পাতাকে পরিমাণ মতো পানির মধ্যে নিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। পানির রং যখন নীল হবে তখল বন্ধ করে দিয়ে তা ঠান্ডা করতে হবে। এরপর আপনি যখন গোসল করবেন তকন মাথায় শ্যাম্পু দেওয়ার পর এই পানি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন।
- চোখের সমস্যা দূর করতে - কিছু নিমপাতা সেদ্ধ করার পর গরম পানিকে সম্পূর্ণ ঠান্ডা করেন। এরপর সেই পানি দিয়ে চোখ দুটিকে ধুয়ে নেন তাহলে দেখবেন চোখের যে কোন ধরনের প্রদাহ, ক্লান্তি বা লালচেভাব দূর হয়ে যাবে।
- ব্রণ দূর করতে - কিছু নিমপাতা গুঁড়ো করে পেস্ট এর মত বানিয়ে ব্রণে লাগিয়ে দিবেন। যতদিন পর্যন্ত ব্রণ না শুকায় ততদিন পর্যন্ত একই ভাবে লাগিয়ে যান। মুখের যে কোন ধরনের ফুসকুড়ি, কাল দাগ ও অন্যান্য সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
- কানফোঁড়া ঠিক করতে - কিছু পরিমান নিমপাতা গুঁড়ো করে তার সাথে মধু মিশিয়ে কয়েক ফোটা যেকোনো ধরনের কানফোঁড়াই লাগালে তা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
- ত্বকের সমস্যা দূর করে - নিমপাতা গুঁড়ো করে পেস্টের মত তৈরি করে তার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে যেকোনো ধরনের খুঁজলি, একজিমা, রিঙ ওয়ার্ম এবং প্রদাহজনিত ত্বকের রোগে লাগালে দ্রুত তা দূর হয়ে যাবে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় - কিছু নিম পাতা চূর্ণ করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
-
কালো আচিল দূর করতে - দুই থেকে তিন ফোটা নিমের তেল পানিতে মিশিয়ে
কালো আচিল নিয়মিত লাগালে তা স্থায়ীভবে দূর হয়ে যাবে।
-
বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে - ফেসপ্যাকর সঙ্গে নিমের তেল মিশিয়ে
লাগালে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। এছাড়া ত্বকের রেখা পড়া, যেকোনো ধরনের প্রদাহ ও
খোস-পাঁচড়া দূর করতেও ভূমিকা রয়েছে।
-
চুলের যত্ন নিতে - প্রতিদিন কিছুটা পরিমান নিমের তেল নিয়ে মাথার
ত্বক ও চুলে হালকা করে ঘষে লাগিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিবেন। তারপর পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন করলে দেখতে পারবেন যে, চুলের গোড়াকে শক্ত করে
চুল পড়া বন্ধ হয়েছে এবং খুশকিও দূর হয়েছে।
নিম পাতার অজানা অপকারিতা
নিম পাতার অজানা অনেক উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন এর অপকরিতা অর্থৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কিছুটা রয়েছে। এখন এখন আমরা জেনে নেই কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছেঃ
- এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত পরিমাণে নিমের নির্যাস ব্যবহার করলে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে ডিস্ট্যাল রেনাল টিউবিউলার অ্যাসিডেসিস নামক একটি রোগ হতে পারে। এই অবস্থায় কিডনি থেকে মূত্রে অ্যাসিড বেরিয়ে য়ায় না তার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে আম্লিক অ্যাসিড থেকে যায়। যদি চিকিৎসা না করায় তাহলে কিডনিতে পাথর হতে পারে এবং কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিমের বিষক্রিয়া সাধারণত দেখা যায় না তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষক্রিয়ার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিমের মধ্যে একটি সক্রিয় উপাদান (অ্যাজারড্যিাকটিন) আছে যা বিষক্রিয়ার সুত্রপাত করে। এর ফলে যে উপসর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
- বমি বমি ভাব
- খিঁচুনি
- টক্সিক এনসেফ্যালোপ্যাথি (স্নায়ুবিক সমস্যা)
- মেটাবলিক অ্যসিডোসিস (যখন কিডনি শরীর থেকে অ্যাসিড অপসারণে ব্যর্থ হয়)
- হেপাটিক টক্সিসিটি (লিভারের সমস্যা)
- অতিরিক্ত পরিমানে ব্যবহারে নিমের তেলের ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ফাঙ্গাস বিরোধী উপাদান কখনো কখনো এলার্জির কারণ হতে পারে। যদিও এ ধরনের ঘটনা খুব কম ঘটে থাকে।
নিম গাছের বিভিন্ন অংশের আজানা গুণাগুণ
একটি নিম গাছের বিভিন্ন অংশ রয়েছে যেমন নিমের ডাল, বাকল বা ছাল এবং নিমের ফুল ইত্যাদি। এই অংশগুলোর বর্ণনা নিচেরটা নিম্নে দেওয়া হবেঃ
নিমের ডাল - প্রচীন কাল হতেই মানুষেরা নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে
আসছে। দাঁতের জন্য ক্ষতিকর জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করে মুখের লালায় ক্ষারের
মাত্রা ঠিক রাখতে, ব্যকটেরিয়াদের দূরে রাখে, দাঁতের মাড়ির ফোলারোগ কমায় এবং
দাঁতও সাদা রাখে। এছাড়া দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমে পাথর হতে দেয় না।
নিমের বাকল বা ছাল - নিমের ছাল বা বাকল এবং বীজ থেকে নির্যাস বের করে বানানো হয় নিমের তেল যা কসমেটিক্স এবং অন্যান্য সৌন্দর্য প্রসাধনীতে ব্যবহার হয়। সাবান, চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ প্রভৃতিতে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের তেল ত্বকের রোগ সারাতে বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও গায়ে মুখে ঘুমালে মশা কামড়াবে না। নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দেহে মালিশ করলে নানা উপকার পাওয়া যায়। বাচ্চাদের নিমের তেল খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
নিমের ফুল - নিম গাছের বেশি অংশই তেতো কিন্তু এর ফুল তেতো নয় বরং অসাধারণ ঔষধি গুণসম্পন্ন। রহস্যময় জেসমিনের মিষ্টি গন্ধ ছড়ায় নিমের ফুল। বর্ষকালে বিকালে এবং সন্ধ্যায় নীল ফুল ফোটে। ক্ষুধামন্দ্যা, বমিভাব, ঢেকুর এবং অন্ত্রের কৃমিনাশক হিসেবে নিমের ফুল ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মাথাব্যথায় নিমের ফুল ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শীতকালীন গুণের জন্য নিমের ফুল অ্যারোমা থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কয়েক দশক আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিম ফুলের অ্যালকোহলময় নির্যাস একটি কার্যকর কন্ট্রাসেপ্টিভ বা গর্ভনিরোধক।
নিম পাতার অজানা গুণাগুণ সম্পর্কে লেখকের মতামত
নিম পাতার অজানা গুণাগুণ সম্পর্কে আমি আপনাদের যতটুকু সম্ভব বলার চেষ্টা করেছি আমার এই ছোট্ট পোষ্টের মাধ্যমে। এছাড়াও এর আরোও অনেক গুণাগুণ রয়েছে যা ভবিষ্যতে আবার হয়ত আরেকটি পোষ্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো। নিম গাছ মূলত এমন একটি গাছ যার প্রায় সমস্ত অংশের প্রশমণের ক্ষমতা রয়েছে।
নিম পাতার একদিকে ্উপকারিতা হিসেবে রোগ প্রতিরোধেম, দাঁত ও মাড়ির সমস্যা সমাধানে, ক্যান্সার বৃদ্ধি রোধে, অ্যাজামা প্রতিরোধে ও আরোও অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয় অপরদিকে অপকারিতা হিসেবে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারে কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকের আবার অ্যালার্জিও হতে পারে।
তাই আপনারা যদি নিম পাতা ব্যবহার করতে চান তাহলে তা পরিমিত আকারে ব্যবহার করবেন। তাহলে শরীর বিভিন্ন রোগ হতে মুক্ত থাকবে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। সবাইকে আবারও আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সবাই পরিমিত পরিমানে নিম পাতা ব্যবহার করেবেন, সুস্থ্য থাকবেন, ভাল থাকবেন। আবার কোন পোস্ট নিয়ে কথা হবে....
অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url