ওজন কমাতে পিংক সল্ট খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে পিংক সল্ট খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আপনি চিন্তিত। আপনাকে চিন্তামুক্ত করতে আমার আজকের এই পোষ্ট আপনার জন্য। আপনি হয়ত ভাবছেন কোন খাবার খেলে আপনি আপনার ওজন কিছুট কমাতে পারবেন। তাহলে এই পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরবেন।
আমার বিশ্বাস এই পোষ্টটি পরে ও সে অনুযায়ী লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেলে আপনি অবশ্যই আপনার ওজন কমাতে সক্ষম হবেন। এই পোস্টের মূল উপাদান হচ্ছে পিংক সল্ট। যা আপনার ওজন কমানোর একটি পথ মাত্র।
এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ ওজন কমাতে পিংক সল্ট
- ওজন কমানোর পিংক সল্ট কি
- ওজন কমানোর পিংক সল্টের উপকারিতা
- ওজন কমানোর পিংক সল্টের অপকারিতা
- ওজন কমানোর পিংক সল্টের মূল্য কত
- ওজন কমানোর পিংক সল্ট কোথায় পাওয়া যায়
- ওজন কমানোর পিংক সল্ট কিভাবে ওজন কমায়
- ওজন কমানোর পিংক সল্ট খাবার নিয়ম
- ওজন কমানোর আসল পিংক সল্ট চেনার উপায়
- ওজন কমাতে প্রিন্ট সল্ট ব্যবহারের লেখকের মন্তব্য
ওজন কমানোর পিংক সল্ট কি
ওজন কমানোর পিংক সল্ট এক ধরনের খনিজ লবণ। যাহা খনিজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইহা সাধারনত শক্ত দানাদার এবং গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এজন্য এই সল্টটি পিঙ্ক সল্ট নামে পরিচিত। এই লবণে শতকরা ৮০ ভাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং অবশিষ্ট শতকরা ২০ ভাগ অন্যান্য উপাদান থাকে।
আমরা সাধারণত খাবারে বা রান্নার সময় যে লবণ ব্যবহার করি তা বিশুদ্ধ লবণ অর্থাৎ শুধমাত্র সোডিয়াম ক্লোরাইড। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত লবণের মিনারেল কে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে যে লবণ পাওয়া যায় সেটাই হচ্ছে বিশুদ্ধ লবণ। এই বিশুদ্ধ লবণ পরিমিত আকারে রান্নার ব্যবহার করলে ভাল।
কিন্তু অতিরিক্ত আকারে ব্যবহার করা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হল রক্তচাপ জনিত রোগ সৃষ্টে করে, কিডনিজনিত সমস্যা বৃদ্ধি করে এবং আরো অন্যান্য রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের প্রয়োজনীয় মিনারেল একমাত্র এই পিংক সল্টের দ্বারা পূরণ সম্ভব।
ওজন কমানোর পিংক সল্টের উপকারিতা
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে - এই লবণে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা খাদ্য পরিপাকে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ফলে পেটের গ্যাস, বদহজম এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা হতে পেটকে ভালো রাখে।
- হাড় মজবুত করে - এই সল্ট সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ উপাদান রয়েছে। যা হার গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নিম্ন রক্তচাপ দূর করে - এই সল্টে প্রচুর সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে যা নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক রক্তচাপে আনতে সাহায্য করে।
- ত্বককে মসৃণ করে - এই লবণ মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করলে ত্বক অনেক নরম ও কোমল হয়। তাছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এই সল্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- পেশির ব্যথা দূর করে - এই সল্ট ব্যবহারে পেশির ব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথাও দূর করা সম্ভব।
- মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করে - এই সল্ট মাথা ব্যাথা দূর করে। এক গ্লাস পানির সাথে লেবুর রস ও সামান্য পরিমান এই সল্ট মিশিয়ে পান করলে দ্রুত মাথাব্যথা ভালো হয়ে যায়। এছাড়া মাইগ্রেনের ব্যথার উপশম করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চুলের খুশকি দূর করে - এই সল্ট মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এই সল্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।
- পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে - নিয়ন্ত্রিত খাবার চলাকালীন সময় শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে আসল ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে - বিষাক্ত টক্সিন শরীর থেকে বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে এই সল্টের তুলনা নাই।
- অনিদ্রা দূর করে - অনেকেরই নিদ্রা জনিত সমস্যা রয়েছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য এই সল্টের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর হয়।
- রক্তশূন্যতা দূর করে - ইহা শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ আস্তে আস্তে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- অ্যাজমার সমস্যা দূর করে - এই সল্ট খেলে অ্যাজমার সমস্যা দূর হয়। যাদের এরকম সমস্যা আছে তারা নিয়মিত সেবন করতে পারেন।
- দেহের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে - দেহের স্বাভাবিক পানির পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানির সাথে এই সল্ট মিশিয়ে পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- সর্দি কাশি উপশম করে - ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন সর্দি ও কাশির মত বিভিন্ন সমস্যার উপশম মাধ্যম হিসেবে এই সল্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এক গ্লাস পানির সাথে সামান্য মধু এবং এই সল্ট মিশিয়ে মিশ্রণটি তৈরী করতে হয়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে - ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য সাধারণ লবণের বিকল্প হিসেবে এই লবণ খাওয়া যায়। এই সল্ট-এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই এবং ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টোরল দূর করতে সাহায্য করে হার্ট ও কিডনিকে সতেজ রাখতে এর তুলনা নেই।
ওজন কমানোর পিংক সল্টের অপকারিতা
- পিংক সল্টে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে যা পরিমাণে তুলনায় বেশি সেবনে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত পরিমানে পিংক সল্ট সেবনে শরীরে পানি শূন্যতা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমানে পিংক সল্ট ব্যবহারে পেটের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমানে পিংক সল্ট ব্যবহারে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওজন কমানোর পিংক সল্টের মূল্য কত
- হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ১০০ গ্রামের - ৮৯ টাকা।
- হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ২০০ গ্রামের - ১৬০ টাকা।
- হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ৫০০ গ্রামের - ২৫০ টাকা।
- হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ১০০০ গ্রামের - ৩৮০ টাকা।
আপনারা যদি অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে পিংক সল্ট ক্রয় করেন তাহলে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। তাই আপনারা পিংক সল্ট কেনার সময় অবশ্যই লোকাল মার্কেট এবং অনলাইন শপিং মার্কেটের দাম যাচাই করে তারপর ক্রয় করবেন।
অনলাইনে আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমেও আপানারা পিংক সল্ট ক্রয় করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাদের ভিসা কার্ড থাকতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আপনাদের জন্য দেওয়া হল -
- ডারাজ
- আজকেরডিল
- চালডাল
- রকমারি
- স্বপ্ন
- ক্লিকবিডি
- প্রিয়সপ
ওজন কমানোর পিংক সল্ট কোথায় পাওয়া যায়
ওজন কমানোর পিংক সল্ট সাধারনত ভারত, পাকিস্তান থেকে চীনের যে প্রসারিত পর্বতমালা রয়েছে তার পাদদেশ থেকে পাওয়া যায়। এই সল্ট সব থেকে বেশি পাওয়া যায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে। এর নাম হিমালয়ান হলেও ইহা হিমালয় হতে আসেনা।
যে খনি থেকে এই সল্ট উত্তোলন করা হয় তা বিশ্বের দ্বিতীয় লবণ খনি যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে ”ঘেওড়া” লবণ খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তান সাধারণত প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদের দেশ। পাকিস্তানিরা এ লবণকে আল্লাহর নেয়ামত বলে মনে করে।
এর রং গোলাপি হলেও এই সল্টকে পাকিস্তানে হোয়াইট গোল্ড বলা হয়। এছাড়াও এই সল্ট ভারত ও চীনের কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়।
ওজন কমানোর পিংক সল্ট কিভাবে ওজন কমায়
ওজন কমানোর পিংক সল্টে সাধারণত সোডিয়ামের পরিমান কম থাকায় এর ভেতরে থাকা মিনারেল দেহে পানির চাহিদাকে কমিয়ে দেয় ফলে পেশিগুলো আরো শক্ত হয় এবং ওজন কমে যায়। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করে যার কারণে পেশির চর্বিগুলো বার্ণ হয় এবং ক্ষুধা বাড়ে। এখানে পিংক সল্ট এই পেশির চর্বির ফাঁকা স্থানগুলো খুব দ্রুত পুরণ করতে সাহায্য করে।
পিংক সল্টের মধ্যে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম আছে যা দেহের পটাশিয়ামের চাহিদাকে কমায় এবং দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা সমন্বয় করে। এই ক্যালসিয়াম দেহের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথাকে দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনারা পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে পারবেন এবং নিজের শরীরের ওজন কমাতে পারবেন।
ওজন কমানোর পিংক সল্ট খাবার নিয়ম
- প্রথমে একটি পরিষ্কার কাচের পাত্রতে ফোটানো ঠান্ডা পানি নিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এতে বেশ কয়েকটি পিংক সল্ট ঢেলে দিতে হবে এবং তা ২৪ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।
- যখন দেখবেন সল্টটি আর পানির সাথে দ্রবীভূত হচ্ছে না তখন বুঝবেন আপনার মিশ্রণটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়ে গেছে।
- এবার অবশিষ্ট সল্টটি ছেঁকে বের করে মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
ওজন কমানোর আসল পিংক সল্ট চেনার উপায়
- পিংক সল্ট সাধারণত রং দেখেই চেনা যায়। ইহা সাধারাণত হালকা গোলাপি হয়ে থাকে কারণ এতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থাকে।
- পিংক সল্ট বড় বড় দানাযুক্ত ক্রিস্টাল পাথরের মত হয়ে থাকে।
- আসল পিংক সল্টটি একটু বেশি লবণাক্ত হয়ে থাকে।
ওজন কমাতে প্রিন্ট সল্ট ব্যবহারের লেখকের মন্তব্য
বর্তমান সময়ে সবাই তার নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন। তারই ধারাবাহিকতায় আমি আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি পিংক সল্ট ব্যবহারে কিভাবে ওজন কমানো সম্ভব। এছাড়াও এখানে এই সল্টের অন্যান্য দিক নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
শুধুমাত্র এই সল্ট ব্যবহার করলেই যে ওজন কমবে আমি তা বোঝানোর চেষ্টা করিনি। এই সল্টটি ওজন কমানোর একটি মাধ্যম মাত্র। যা আপনি ঘরে বসে খুব সহজেই মেনে চলতে পারবেন। তবে এছাড়াও আরও যেসব ওজন কমানোর প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলোও আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url