OrdinaryITPostAd

ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ

ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ কিভাবে চিনবেন ও প্রতিকার কিভাবে করবেন তা নিয়ে আপনি চিন্তিত? আপনাকে চিন্তামুক্ত করতে আমি আপনাদের মাঝে এই পোষ্টটি নিয়ে চলে এলাম। জামির ধান দেখে আপনার মাথায় হাত দিয়ে বসে না থেকে আমার এই পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরুন। 

ছবি-১

হতেও পারে এই পোষ্টটি আপনার মুখে হাসি ফুটিয়ে দিবে। ধানের মাজরা পোকার আক্রমনকে কখনো হালকা করে দেখবেন না। ইহা ধানের মূল কান্ডে আক্রমন করে। ফলে ধান গাছটি নেতিয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে মারা যায়।

এই পোস্টে যা যা থাকছেঃ ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ ও প্রতিকার


ধানের মাজরা পোকা কি

ধানের মাজরা পোকা এমন এক ধরনের কীট যা কন্ডের মূল কান্ডের ভেতর থেকে খাওয়া শুরু করে। ফলে গাছটি প্রথমে নেতিয়ে বা আউরিয়ে পরে। পরে আস্তে আস্তে ধান গাছটি মারা যায়। এই সংক্রমণ জমিতে খুব দ্রুত ছড়াই। সাধারণত তিন ধরনের মাজরা পোকা দেখা যায় - 
  • হলুদ মাজরা পোকা
  • কালো মাথা মাজরা পোকা
  • গোলাপি মাজরা পোকা।
ডিম থেকে বেড় হয়েই পোকার বাচ্চাগুলো অর্থাৎ কিড়াগুলো মূল কাণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করে।সাধারণত কান্ডের ভিতরেই এসব মাজরা পোকার বাচ্চাগুলো চলাচল করে থাকে। কান্ডের ভেতরেই প্রথমে এরা গোলাপি বর্ণের ও পরে কালোা মাথার আকার ধারণ করে। 

কিছুদিন পর এরা পূর্ণাঙ্গ বা প্রাপ্তবয়স্ক হলুদ মাজরা পোকার আকার ধারণ করে। এই হলুদ মাজরা পোকা ধান গাছের যে কোন জায়গাতে পাওয়া যায়। তারা ধান গাছের যে কোনো স্থানে ডিম পারে।

ধানের মাজরা পোকা কখন ডিম পাড়ে

ধানের মাজরা পোকা সাধারনত ধানের শীষ আসার পূর্বেই ধান গাছে ডিম পারে। ডিম থেকে বাচ্চা হতে বেশি সময় লাগে না। তবে ধান গাছ রোপন করার কয়েকদিন পরে যদি এই আক্রমণ ঘটে তখন অতিরিক্ত কিছু উৎপাদন করে ফসলের ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব।  

ছবি-২

রাতে যদি জমিতে আলোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে মাজরা পোকার ডিম পারার লক্ষণ বোঝা যাবে। আলোর চারপাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার পায়খানা বা মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ধানের জমিতে মাজরা পোকার ডিম পাড়া শুরু করেছে।

ধানের মাজরা পোকা কোথায় ডিম পাড়ে

ধানের মাজরা পোকা ধান গাছের যে কোন স্থানে ডিম পাড়তে পারে। তাই অবশ্যই আপনাদের ধান গাছের কান্ড ও পাতার দিকে ভালো নজরদারি রাখতে হবে। এখন আমরা আসুন জেনে নেই ধানের বিভিন্ন ধরনের মাজরা পোকা কোথায় কোথায় ডিম পাড়ে -

  • হলুদ মাজরা পোকা - এরা সাধারণত ধান গাছের পাতার উপরের অংশেই ডিম পাড়ে। তবে গাছের যে কোন স্থানেও এদের ডিম পাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদের ডিমের গাদার উপর হালকা দুশোর রং এর একটা আবরণ থাকে।
  • গোলাপি মাঝরা পোকা - ধান গাছের পাতার খোলের ভেতরে ডিম পাড়ে।
  • কালো মাথা মাঝরা পোকা - এরাও সাধারণত পাতার খোলের ভিতরে ডিম পাড়ে। তবে অনেক সময় পাতার উপরের অংশেও ডিম পাড়েতে দেখা গেছে। এর ডিমের গাদার উপরের অংশে মাছের আঁশের মত একটা সাদা রং-এর আবরণ থাকে।

ধানের মাজরা পোকা কোথায় থাকে

ধানের মাজরা পোকা থেকে ধান গাছকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে জানতে হবে মাজরা পোকা কোথায় বসবাস করে। আমি আপনাদেরকে আগেই বলেছি ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পরেই বাচ্চাগুলো ধান গাছের মূল কান্ডের ভিতরে প্রবেশ করে। তখন এদের দেখা যায় না তবে গাছে শুধুমাত্র ছিদ্র দেখা যায়।

কিন্তু পরে যখন ডিম পাড়ার সময় হয় তখন এরা কান্ডের মধ্য হতে বের হয়ে আসে এবং বাইরে পাতার উপরের অংশে ডিম পাড়ে। এখানে দেখা যাচ্ছে ধান গাছের যথেষ্ট ক্ষতিসাধনের পরেই তাদেরকে দেখা যায়। তাই এদেরকে মারার জন্য এদের বসবাসস্থলের খোজ না করে গাছের কান্ডের ছিদ্র দেখেই তাদেরকে মারার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

ধানকে মাজরা পোকার আক্রমণ হতে রক্ষার উপায়

ধানের মাজরা পোকা হতে ধান গাছকে রক্ষা করতে কিছু অগ্রিম কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন আসুন আপনার জেনে নেন মাজরা পোকার আক্রমনের পূর্বেই কোন কোন সর্তকতা অবলম্বন করতে পারেন -
  • নিয়মিত ধানের জমি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ধানের জমিতে যদি মাজরা পোকার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তাহলে অবশ্যই আক্রান্ত গাছকে গোড়াসহ তুলে ফেলতে হবে যাতে অন্য গাছ সংক্রমিত না হয়। পরবর্তীতে কৃষিবিদদের পরামর্শক্রমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • জমিতে কিছু স্থানে উপকারী পাখি বসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে পাখিগুলো পোকার মথগুলোকে ধরে খেয়ে ফেলতে পারে।
  • ধান কাটার পরে ধানের যে অবশিষ্ট অংশ যা জমিতে থেকে যায় তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • পরজীবী পোকা আনুমানিক ৮০ শতাংশ মাজরা পোকার ডিম নষ্ট করে ফেলে তাই আপনাদের উচিত হবে পরজীবী পোকা সংরক্ষণ করা।
  • আলোর ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে যাতে আলো দেখে মাজরা পোকা আকৃষ্ট হয়ে আলোর কাছে আসে। আর সেখানে বসে থাকা উপকারি পাখিগুলো মাজরা পোকাকে ধরে ধরে খেয়ে ফেলে।
  • সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মাজরা পোকাকে নষ্ট করতে হবে। যার ফলে তাদের জন্মবিস্তার কমে যাবে।
  • মেহেগুনী গাছের বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে যে কষ বের হয় তা কয়েক বালতি পানিতে মিশিয়ে যদি জমিতে স্প্রে করা হয় তাহলে আপনি ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
  • মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
  • নির্দিষ্ট দূরত্বে ও উপযুক্ত বয়সের চারা রোপণ করতে হবে।
  • জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ধানের মাজরা পোকা দ্বারা আক্রান্ত ধানের লক্ষণ

ধানের মাজরা পোকাজনিত যেসব লক্ষণ তা সাধারাণত ধানের শীষ আসার পরই বোঝা যায়। এ সময় শীষটি নেতিয়ে পড়ে অথবা শীষটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়, যাকে মরা শীষ বলে। এই প্রকার ক্ষতিকারক পোকার লক্ষণগুলো আমি আপনাদের কাছে আগেই জানিয়েছি তারপরও আবার জেনে নেই - 
  • ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা এবং মাজরা পোকার ক্ষতির নমুনা একই রকম। তাই ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে আসলেই মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে কিনা।
  • মাজার পোকার কীড়াগুলো পাতার খোলের ভিতরে খায় বলে বাইরে থেকে কোন ক্ষতি বোঝা য়ায় না। তবে ধান গাছের শীষের মধ্যে চিটার অর্থাৎ চালবিহীন ধানের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
  • জমিতে এই পোকা দ্বারা আক্রমন হলে কান্ডের মধ্যে কীড়ার ছিদ্র, কীড়া দ্বারা ফসল খাওয়ার লক্ষণ ও তাদের মল দেখতে পাওয়া যায়।
  • কান্ডের বাহিরের গাছের বর্ণ বিবরণ হয়ে যায়।

ধানের মাজরা পোকা দমনে প্রাইমারী কিছু উপায়

ধানের মাজরা পোকা দ্বারা ধান গাছের সবথেকে বেশি ক্ষতি সাবধান হয়। তাই এই পোকা দমনে প্রাইমারি কিছু উপায় আপনারা জেনে নিন। সন্ধ্যার পর ১৫০ সেমি লম্বা লাঠির মাথায় আলোর ব্যবস্থা করে তার নিচে কেরোসিন মিশ্রিত পানির পাত্র রেখে দিলে পোকা গুলো উড়ে বেড়ানোর এক পর্যায়ে পাত্রে পড়ে মারা যায়।

কেরোসিন তেলে রশি ভিজিয়ে আক্রান্ত ধানের জমির এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত টেনে দিলে এসব পোকা দমন করা যায়।

ধানের মাজরা পোকা দমনে কিটনাশক 

ধানের মাজরা পোকা দমনে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায়। সবগুলোই ধানের মাজরা পোকা নিধনে কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে। তাবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কীটনাশকের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো -
  • বাতির - ইনতেফা
  • ভায়েগো - বায়ার
  • ভিরতাকো - সিনজেনটা
  • এইম গোল - টেনস এগ্রো লিমিটেড 
  • জর্ডান প্লাস
  • বেল্ট - বায়ার
  • আইসিআই এগ্রো কেয়ার
  • ওয়ান স্টপ
  • নিডশট - নিড এগ্রো লিমিটেড
আমাদের দেশের শতকরা ৮০ ভাগ কৃষক তাদের ফসলের জমিতে মাজরা পোকার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকলে প্রয়োগ করে থাকেন - ফিপ্রোনিল ৫০ এসসি

ধানের ক্ষতিকারক আরো কয়েকটি পোকার নাম

আবহাওয়ার উপর ভিক্তি করে ধানের পোকার আক্রমন কমবেশি হয়ে। যেমন প্রচন্ড গরমে পোকার আক্রমন কম হয় আবার বর্ষা ও শীতে পোকার আক্রমন বেশি হয়। এখন আসুন জেনে নেই ধানের ক্ষতিকারক মাজরা পোকা  ছাড়া আর কি কি পোকা দেখতে পাওয়া যায় -

  • লেদা পোকা - ধানের শীষ আসার পরে এই প্রকার কীড়াগুলো ধানের শীষ কেটে ফেলে। সাধারণত মেঘলা অবস্থায় এই পোকার বংশবৃদ্ধি বেশি হয়।
  • ঘাস ফড়িং - এই পোকা গাছের গোড়ার দিকে থাকে এবং গাছের রস খেয়ে ক্ষতি করে।
  • নলি মাছি - এই পোকা আক্রান্ত হলে ধানের মূল পাতা পেঁয়াজের মতো নলাকার হয়ে যায়।
  • পামরি পোকা - এই পোকা ধানের পাতার সবুজ অংশ খেয়ে সাদা হয়ে যায়।
  • চুঙ্গি পোকা - এই পোকার কীড়া ধানের পাতার উপরের অংশ কেটে চুঙ্গির মতো করে ফেলে।
  • পাতা মোড়ানো পোকা - এইপোকা পাতা লম্বালম্বি ভাবে মুড়ে ফেলে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেল।
  • লম্বাশুর উচরুঙ্গা পোকা - এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা ধানের শীষ বিকৃত করে।
  • সবুজ পাতা ফড়িং - এই পোকা গাছের কচি পাতা এবং পূর্ণবয়স্ক পাতা উভয়েরই ক্ষতি করে।
  • আকাবাকা পাতা ফড়িং - এই পোকা ধানের পাতায় হলুদ বা সাদা দাগ সৃষ্টি করে।
  • সাদা পিঠ ফড়িং - এই পোকা ধানের পাতা ও শীষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • ছাতরা পোকা - ছোট ও পূর্ণাঙ্গ উভয় বয়স্ক অবস্থায় এরা ধানের ক্ষতি সাধন করে থাকে। কান্ডের রস চুষে খেয়ে ফেলে গাছ আস্তে আস্তে নেতিয়ে পরে। 
  • গান্ধি পোকা - ছোট ও পূর্ণাঙ্গ উভয় বয়স্ক অবস্থায় এরা ধানের ক্ষতি সাধন করে থাকে। ধানের শিষে দুধ আসা অবস্থায় এরা ক্ষতি করে।
  • ব্লাস্ট রোগ - এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ যা ধানের পাতার দিকে ক্ষতি করে।

ধানের মাজরা পোকার ক্ষতির লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, ধানের মাজরা পোকা কি? এরা কোথায় ডিম পারে? কোথায় এদের বসবাস?  জমিতে এদের উপস্থিতির লক্ষণ? লক্ষণ দেখা দিলে করনীয় কি? কোন কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যায় ও আরোও অনেক কিছু।

আশা করি আপনারা ধনের জমিতে মাজরা পোকা শনাক্ত করতে পারবেন এবং জমিকে মাজরা পোকা মুক্ত করতে পারবেন। আসলে মাজরা পোকার দৃষ্যমান যেসব লক্ষণ তা জমির অনেক ক্ষতি সাধন হওয়ার পরে লক্ষ্য করা যায়।

ছবি-৩

তাই আপনাদেরকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে উপরে উল্লেখিত যে কোন একটি লক্ষণ দেখা দিলেই তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে চিন্তিত হওয়ার কোন কিছু নাই বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ এর জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ করে থাকে।

আশা করি আমার এই পোস্টটি আপনাদের ধানের জমিতে মাজরা পোকা দমনে সাহায্য করবে। সবাই ভালো থাকবেন............. ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অজানা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url